রাজধানীর মহাখালীতে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্টের সভাকক্ষে ‘মেঘনা অববাহিকার নিম্নাঞ্চলের ফসলের বৃদ্ধি ও উৎপাদনের ওপর জলবায়ুর প্রভাব নিরূপণ এবং ভবিষ্যতের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে জলবায়ুসহিষ্ণু ফসল নির্বাচন’ বিষয়ক প্রারম্ভিক কর্মশালা। ১০ আগস্ট, ২০২৫
রাজধানীর মহাখালীতে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্টের সভাকক্ষে ‘মেঘনা অববাহিকার নিম্নাঞ্চলের ফসলের বৃদ্ধি ও উৎপাদনের ওপর জলবায়ুর প্রভাব নিরূপণ এবং ভবিষ্যতের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে জলবায়ুসহিষ্ণু ফসল নির্বাচন’ বিষয়ক প্রারম্ভিক কর্মশালা। ১০ আগস্ট, ২০২৫

কর্মশালায় বক্তারা

জলবায়ু গবেষণার ফল মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছায় না

জলবায়ু সংকট নিয়ে নানামুখী গবেষণা হলেও সেটার ফল মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছায় না। গবেষণা শেষ হলেও অভীষ্ট গোষ্ঠীর জীবনে সেটি কী পরিবর্তন এনেছে, সেটার কোনো মূল্যায়ন হয় না। বাস্তবতা হলো, গবেষণার পর এসব বিষয়ে কোনো খবর রাখা হয় না।

আজ রোববার রাজধানীর মহাখালীতে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্টের সভাকক্ষে এক প্রারম্ভিক কর্মশালায় (ইনসেপশন ওয়ার্কশপ) এসব কথা বলেন বক্তারা।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধীন ‘মেঘনা অববাহিকার নিম্নাঞ্চলের ফসলের বৃদ্ধি ও উৎপাদনের ওপর জলবায়ুর প্রভাব নিরূপণ এবং ভবিষ্যতের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে জলবায়ুসহিষ্ণু ফসল নির্বাচন’ প্রকল্পের বিষয়ে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট (বিসিসিটি)।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিসিসিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) গাজী মো. ওয়ালি–উল–হক বলেন, অনেক গবেষণা হলেও সেটার ফলাফল মাঠপর্যায়ে যায় না। জলবায়ু অভিযোজনের ক্ষমতাসম্পন্ন ফসল উদ্ভাবন করলেও কৃষক সেটার উপকার পায় না। গবেষণার ফল যাতে অভীষ্ট গোষ্ঠীর জীবনে পরিবর্তন আনে, সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে বিসিসিটি সচিব শেখ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের দুটি প্রাধান্য দেওয়ার জায়গা আছে। ক্ষতিগ্রস্ত গোষ্ঠী ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা। সে হিসেবে নোবিপ্রবির এ প্রকল্পে এ দুটি দিককে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এখানে কৃষক একটা ভালনারেবল গ্রুপ (ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী)। এলাকাটাও ক্ষতিগ্রস্ত।’

বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণা প্রকল্প দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে শেখ মনিরুজ্জামান বলেন, বাস্তবতা হলো গবেষণা শেষ হওয়ার পর আর কোনো খবর থাকে না।

কর্মশালায় নোবিপ্রবি উপাচার্য মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ডেলটা প্ল্যানে যে ছয়টি অঞ্চলকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়েছে তার মধ্যে বৃহত্তর নোয়াখালীর মেঘনা অববাহিকা অঞ্চল একটি। এখন যে লবণাক্ততা দেখা যাচ্ছে, সেটি ২০ বছর আগে যখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছিল তখনো ছিল না।

মুহাম্মদ ইসমাইল আরও বলেন, সহযোগিতা পেলে নোবিপ্রবি গবেষণার জন্য একটা বড় ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে।

প্রকল্প পরিচালক ও নোবিপ্রবির পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহিনুজ্জামান বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, মেঘনা অববাহিকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে ৩ দশমিক ৭ মিলিমিটার থেকে ৪ দশমিক ১ মিলিমিটার। এ অঞ্চলে লবণাক্ততার পরিমাণও দিন দিন বাড়ছে। ফলে কৃষি ও কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নোবিপ্রবির এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ২১০০ সালের শেষের দিকে মেঘনা অববাহিকা অঞ্চলে তাপমাত্রা ০.৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে।

এ অধ্যাপক আরও বলেন, এ প্রকল্পের অধীন গবেষণার মাধ্যমে ২১০০ সালে মেঘনা অববাহিকার নিম্নাঞ্চল বরিশাল, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে তাপমাত্রা আর্দ্রতা ও লবণাক্ততা কোন পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে সেটা বের করা হবে।

কর্মশালা সঞ্চালনা করেন বিসিসিটির সহকারী পরিচালক (নেগোসিয়েশন) শাকিলা ইয়াসমিন।