
সংবিধানে হাত দেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে না বলে মনে করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, সংবিধান শুধু পরিবর্তন করতে পারেন জনপ্রতিনিধি বা যাঁরা নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে আসবেন। তা ছাড়া অন্য কারও কোনো অধিকার বা এখতিয়ার নেই এটাকে বড় ধরনের পরিবর্তন করার।
আজ রোববার রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে সংস্কার বিষয়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় এ কথা বলেন মুনীরুজ্জামান।
নিরাপত্তাবিষয়ক বিশ্লেষক মুনীরুজ্জামান বলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন যে সংবিধানে হাত দেওয়া উচিত হবে না। সংবিধান শুধু পরিবর্তন করতে পারেন জনপ্রতিনিধি বা যাঁরা নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে আসবেন। তা ছাড়া অন্য কারও কোনো অধিকার বা এখতিয়ার নেই এটাকে বড় ধরনের পরিবর্তন করার। এটা করতে গেলে পরে যে জটিলতা আসবে, সেটা হয়তো কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে।
মুনীরুজ্জামান আরও বলেন, এই কারণে তিনি বলতে চান যে যেটুকু করা সম্ভব, সেটুকু শুধু করা উচিত। এর বাইরে এমন কিছুতে হাত দেওয়া উচিত নয়, যাতে বর্তমানে যে জটিল পরিস্থিতি আছে, সেটা আরও জটিলতর হয়।
এই নিরাপত্তাবিষয়ক বিশ্লেষক বলেন, সবকিছুর ঊর্ধ্বে মনে রাখতে হবে যে যত শিগগিরই সম্ভব যাতে গণতন্ত্রে উত্তরণ করা যায়। কারণ, এই জুলাই-আগস্টে যে বিপ্লব ঘটে গেছে, তার একটা প্রধান আকাঙ্ক্ষা ছিল গণতন্ত্রহীনতা থেকে উত্তরণ।
সব সংস্কার বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার করতে পারবে—সেই উচ্চাশা করা ঠিক হবে না বলে মনে করেন মুনীরুজ্জামান। তিনি বলেন, এই পর্যায়ে যেসব সংস্কার প্র্যাকটিক্যাল, সেগুলো থেকে দুটো সংস্কারের ব্যাপারে বিশেষ করে জোর দিতে হবে। কোনো সংস্কারই টেকসই হবে না, যদি এর সঙ্গে রাজনৈতিক নেতারা বা রাজনৈতিক দল একমত না হয়।
মুনীরুজ্জামান আরও বলেন, ইতিপূর্বে দেখা গেছে, বিভিন্ন সময় অনেক সংস্কার হয়েছিল। এক–এগারোর সময় অনেক সংস্কার হয়েছিল। কিন্তু কোনোটাই টেকসই হয়নি। কাজেই উচিত হবে, এমন ধরনের সংস্কার করা, যেগুলো টেকসই হবে। যেগুলো থেকে জাতি ভবিষ্যতে উপকার পাবে। কাজেই এখন সর্বোপরি প্রধান লক্ষ্য হবে, সংস্কার করে যাতে গণতন্ত্রের দিকে অগ্রসর হওয়া যায়। যত শিগগিরই অগ্রসর হওয়া যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা।
সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনায় সুশীল সমাজের ১১ প্রতিনিধি অংশ নেন। তাঁরা হলেন—সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আবদুল মতিন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান, সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ও ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম ওয়ারেসুল করিম, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো মির্জা এম হাসান, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিরা দেওয়ান, নারী প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা আশরাফুন নাহার মিষ্টি, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা রাজিয়া।