
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে পাথরের অবৈধ ব্যবসা ঠেকাতে আরেক দফা টাস্কফোর্সের অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করা হয়। অভিযানে ১৭টি পাথর ভাঙার যন্ত্র (ক্রাশার মেশিন) ধ্বংস করা হয়। পাশাপাশি ক্রাশার মেশিন পরিচালানায় ব্যবহৃত ১০টি বিদ্যুতের মিটার জব্দ এবং প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়।
আজ সোমবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কোম্পানীগঞ্জের পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কলাবাড়ি ধলাই ব্রিজের দুই পাশে পরিচালিত অভিযানে নেতৃত্ব দেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাছিবুর রহমান। অভিযানে সহযোগিতা করেন র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা। এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ও ভূমি কার্যালয়ের কর্মচারীরা অভিযানে সহযোগিতা করেন।
এদিকে সিলেটের পাথর কোয়ারি ইজারা দিয়ে আবার চালু করা, ক্রাশার মেশিনের বিদ্যুৎ-সংযোগ পুনরায় দেওয়াসহ কিছু দাবিতে গণ–অনশন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন পাথর–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা। সিলেট জেলা পাথর–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি সোমবার বেলা দুইটায় শেষ হয়।
অভিযান সূত্রে জানা যায়, সকাল থেকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাছিবুর রহমানের নেতৃত্বে অভিযান শুরু হয়। এ সময় কলাবাড়ি এলাকার ধলাই সেতুর দুই পাশে গড়ে ওঠা পাথর ভাঙার মিলগুলোতে গিয়ে ১৭টি যন্ত্র ধ্বংস করা হয়। পাথর বিক্রির জন্য গড়ে ওঠা তিনটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও ভেঙে ফেলা হয়। পাথর ভাঙার ক্রাশার মেশিনের ১০টি বিদ্যুৎ–সংযোগের মিটার জব্দ করা হয়েছে।
১৪ জুন প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) জাফলং পরিদর্শনে যান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। এ সময় সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে জাফলংসহ সিলেটের কোনো পাথর কোয়ারি ভবিষ্যতে ইজারা দেওয়া হবে না।
অন্যদিকে অবৈধ পাথরের ব্যবসা ঠেকাতে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান দ্রুততার সঙ্গে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে থাকা পাথর ভাঙার যন্ত্রের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। দুই উপদেষ্টার নির্দেশনা পাওয়ার পরপরই ১৬ জুন থেকে পাথর ভাঙার যন্ত্রের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কাজ শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কোয়ারি থেকে পাথর ও বালু উত্তোলন বন্ধে নির্দেশনা দেয় সরকার। এর পর থেকে রাতের আঁধারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতায় অবৈধভাবে পাথর ও বালু উত্তোলন চলত। গত ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর কোয়ারির নিয়ন্ত্রণ নেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতায় হাজারো শ্রমিক পাথর উত্তোলন শুরু করেন। এসব পাথর ভাঙার যন্ত্রের মালিকদের কাছে বিক্রি করা হয়। পরে সেসব পাথর মেশিনে ভেঙে ছোট করে ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করা হয়।