নতুন বছরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আশা বাংলাদেশের

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন
ফাইল ছবি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। তাদের আদি নিবাসে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু দূরের কথা, উল্টো রাখাইনের সর্বশেষ পরিস্থিতি প্রত্যাবাসনে সহায়ক নয়। এমন এক অবস্থায় ২০২৩ সালে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরুর আশা করছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইকে পাঠানো নববর্ষের শুভেচ্ছা বার্তায় এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ২৪ ডিসেম্বর চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন। ওয়াং ইর কাছে লেখা চিঠিতে আব্দুল মোমেন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সম্প্রতি মিয়ানমার নিয়ে প্রস্তাব পাসের জন্য চীনকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রথমবারের মতো মিয়ানমার নিয়ে পাস হওয়া প্রস্তাবে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধের পাশাপাশি দেশটির রাজনৈতিক নেত্রী অং সান সু চিসহ সব রাজবন্দীর মুক্তির আহ্বান জানানো হয়েছে। ২০ ডিসেম্বর পাস হওয়া প্রস্তাবে স্বেচ্ছামূলক, মর্যাদাসম্পন্ন, নিরাপদ ও টেকসইভাবে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের উত্থাপিত প্রস্তাবটির পক্ষে ১২ দেশ ভোট দেয়, বিপক্ষে কোনো দেশ ভোট দেয়নি। এখানে বলে রাখা ভালো, মিয়ানমারের সংকট কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, তা নিয়ে জাতিসংঘে মতপার্থক্য দীর্ঘদিনের। কারণ, দেশটির দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাশিয়া ও চীন যেকোনো কঠোর পদক্ষেপের বিরোধিতা করে আসছে। সর্বশেষ ভোটাভুটিতে বিরত থেকেছে রাশিয়া ও চীন। এবার তাদের সঙ্গে ভোটদানে বিরত থেকেছে নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য ভারত। চলতি মাসে ভারত নিরাপত্তা পরিষদে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকায় চীনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ওই প্রস্তাব পাসের বিষয়টি প্রতিবেশী মিয়ানমারের শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথ সুগম করবে বলে বাংলাদেশ আশা করে।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির

আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশ মানবিক কারণে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দিয়েছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগ, বহুপক্ষীয় উদ্যোগ এবং চীনের মধ্যস্থতায় ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগের পরও প্রত্যাবাসনে কোনো অগ্রগতি নেই। উল্টো মিয়ানমারের সহিংসতা প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া হুমকিতে ফেলেছে। এই সংকটের সুরাহা না হলে এ অঞ্চল তো বটেই, সারা বিশ্বের জন্য অস্থিতিশীলতা তৈরির ঝুঁকি রয়েছে।

এমন এক অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের কার্যকর বাস্তবায়নের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার একটি সামগ্রিক সমাধানের লক্ষ্যে চীনকে নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে চায়  বাংলাদেশ।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দমন অভিযান চালায় দেশটির সেনাবাহিনী। তাদের নির্বিচার হত্যা, নির্যাতনের মুখে পরের পাঁচ মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আর আগ থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা। এখন পুরোনো ও নতুন মিলিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখের বেশি।

প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ৮ লাখ ২৯ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারের কাছে পাঠিয়েছে। তাদের মধ্যে মিয়ানমার সব মিলিয়ে ৪২ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা বাংলাদেশের কাছে ফেরত পাঠিয়েছে। তবে তাদের সবাইকে মিয়ানমার নিতে চায় না। তাদের দাবি, তালিকায় কিছু সন্ত্রাসীর পাশাপাশি অনেকের নামের বানানসহ নানা তথ্য অসম্পূর্ণ রয়েছে।

ঢাকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চীনের মধ্যস্থতায় আলোচনা শুরুর পর মিয়ানমার ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রাথমিকভাবে ৮৪০ জন রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু ওই তালিকা নিয়ে বাংলাদেশের কিছু আপত্তির পর তা শেষ পর্যন্ত ৭১১-তে নেমে আসে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের পরিচয় যাচাই-বাছাইয়ের জন্য দুই পক্ষ থেকে ১০ জন করে ২০ জন কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি কমিটি করার প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ এরই মধ্যে ১০ জনের নাম মিয়ানমারের কাছে পাঠিয়েছে।