ওয়ার্ল্ড রেকর্ড স্টোর ডে

ফিরছে রেকর্ডের হারানো ঐতিহ্য 

১৯০২ সাল থেকে পরবর্তী প্রায় দুই দশকে গওহর জানের ৬০০ গান গ্রামোফোন রেকর্ডে ধারণ করা হয়েছিল
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে ১৬ বছর আগে ‘ওয়ার্ল্ড রেকর্ড স্টোর ডে’ নামে অভিনব এক দিবসের যাত্রা শুরু হয়। পরে এটা স্বীকৃতি পেয়েছে সারা বিশ্বে। এর মাধ্যমেই মূলত ভাইনাল রেকর্ডের প্রচার ও প্রসার আবার বাড়তে শুরু করে। মজার তথ্য হচ্ছে, ধীরে ধীরে অ্যানালগ অডিও তথা রেকর্ডের ঐতিহ্যও দিবসটি পালনের মধ্য দিয়ে ফিরতে শুরু করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বুল মুজ মিউজিকের স্বত্বাধিকারী ক্রিস ব্রাউন এবং ক্রিমিনাল রেকর্ডসের স্বত্বাধিকারী এরিক লেভিনের মাথা থেকেই দিবসের ধারণাটি এসেছে। তাঁদের উদ্যোগেই মেরিল্যান্ডের বাল্টিমোর সিটিতে ব্যক্তিমালিকানাধীন ভাইনাল রেকর্ড স্টোর মালিকদের সভা হয়। এতে মাইকেল কার্টজ, ক্যারি কলিটন, অ্যামি ডর্ফম্যান, ব্রায়ান পোহনার ও ডন ভ্যান ক্লিভ প্রমুখ যোগ দেন। তাঁদের প্রচেষ্টায় ২০০৭ সালে মেরিল্যান্ডে প্রথমবারের মতো দিবসটি পালিত হয়।

বর্তমান বিশ্বের সংগীতজগতের বড় একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করে ইউনিভার্সাল মিউজিক। এ প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় ব্যবস্থাপক মার্ক ফেইডাবের মতে, রেকর্ডের জগতে এখন পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সবচেয়ে যুগান্তকারী ঘটনা হলো রেকর্ড স্টোর ডে। এ দিবস পালনের মধ্য দিয়ে রেকর্ড তার জায়গা আবার দখলের চেষ্টা করে যাচ্ছে।

বাজার ও ভোক্তা তথ্যদাতা প্রতিষ্ঠান ‘স্টাটিসটা’র এক হিসাবে দেখা গেছে, ১৯৭৩ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড বিক্রির সংখ্যা ছিল ২৫ কোটি থেকে ৩৫ কোটির মধ্যে। একই সময়ে বাজারে ক্যাসেট ও ক্যাসেট প্লেয়ার এসে পড়ে, যা রেকর্ডের একচেটিয়া বাজারে ভাগ বসিয়ে দেয়। আশির দশকে ইলেকট্রিক অ্যান্ড মিউজিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (ইএমআই) বাজারে সিডি ছাড়ে। এতে রেকর্ডের বাজার দ্রুত পড়তে শুরু করে। ১৯৮৭ সালে সিডির বিক্রি রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যায়। এরপর ধীরে ধীরে রেকর্ডের উৎপাদন ও বিক্রি কমতে শুরু করে। ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রেকর্ড বিক্রি হয় মাত্র ১০ লাখ।

রেকর্ড স্টোর দিবস আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা জানান, ২০০৭ সালে যে বছর দিবসটি প্রথমবারের মতো পালন করা হয়, সেই বার ১৫ লাখ রেকর্ড বিক্রি হয়েছিল। এর পরের বছর তা দাঁড়ায় ৩৫ লাখে। এরপর বিস্ময়করভাবে রেকর্ড বিক্রি বাড়তে থাকে। ২০২২ সালের হিসাব বলছে, বছরটিতে যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড বিক্রির সংখ্যা দাঁড়ায় ৪ কোটি ১০ লাখে, যেখানে সিডি বিক্রির সংখ্যা ৩ কোটি ৩০ লাখ।

রেকর্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তথ্য অনুযায়ী, গ্রামোফোন ও ভাইনাল রেকর্ড মাধ্যমে উপমহাদেশেও বাংলা, হিন্দি ও উর্দু গানের বড় একটি বাজার ছিল। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের বেশির ভাগ গান প্রকাশিত হয়েছিল কলকাতার হিন্দুস্তান রেকর্ড থেকে। ঢাকায় ছিল ‘ঢাকা রেকর্ড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের বহু চলচ্চিত্র এবং আধুনিক গানের রেকর্ডও এখান থেকেই প্রকাশিত হয়।

বাড়ছে পরিসর ও চাকচিক্য

বর্তমানে যে রেকর্ড স্টোর ডে পালিত হচ্ছে, এর উৎপত্তিস্থল মেরিল্যান্ডসহ সারা বিশ্বে।

সাধারণত প্রতিবছর এপ্রিলের তৃতীয় শনিবার দিবসটি পালিত হয়। সেই হিসেবে এবার দিবসটি ছিল ২২ এপ্রিল। মূলত এর মাধ্যমেই সারা বিশ্বে রেকর্ড সংগ্রাহক, শিল্পী ও হাজারো রেকর্ড স্টোরের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়। রেকর্ড স্টোর ডের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রিত হয় যুক্তরাষ্ট্র থেকে। যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ডসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, মেক্সিকো, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানে এর সহযোগী সংগঠকদের কার্যালয় রয়েছে।

২০০৮ সালের ১৯ এপ্রিল রেকর্ড স্টোর ডের প্রথম বার্ষিকী আনুষ্ঠানিকভাবে পালিত হয় মেটালিকা ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেন ভিউতে। এর আয়োজন করেছিল রাসপুটিন মিউজিক। দ্বিতীয়বারের মতো তা অনুষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালের ১৮ এপ্রিল। এতে স্লেয়ার, টম ওয়েটস, বব ডিলান, লিওনার্ড কোহেনসহ অন্তত পাঁচ শ শিল্পী উপস্থিত ছিলেন।

২০১৬ সালে দিবসটি পালন ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। সেবার বিশ্বখ্যাত ব্যান্ড মেটালিকা প্যারিসের বাটাক্লানে একটি লাইভ অনুষ্ঠান করে রেকর্ড করেছিল। ওই অনুষ্ঠান থেকে আয় করা অর্থ ২০১৫ সালের ১৩ নভেম্বর প্যারিস শহরে সন্ত্রাসী হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

ধীরে ধীরে আয়োজনের পরিসর ও চাকচিক্য বেড়েই চলে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ২০২০ সালে দিবসটি পালন করা সম্ভব হয়নি। করোনা পরিস্থিতি কেটে যাওয়ার পর আবার দিবসটি পালন করা শুরু হয়।

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো রেকর্ড স্টোর ডে পালিত হচ্ছে আজ শনিবার সকাল ১০টায়, ঢাকায় দ্য ডেইলি স্টার আর্ট গ্যালারিতে। অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করবেন সংগীতশিল্পী সৈয়দ আবদুল হাদী। দিবসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করবেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। অনুষ্ঠানে আপনাদের সবান্ধব আমন্ত্রণ।