পডকাস্ট শো: লিগ্যাসি উইথ এমআরএইচের অষ্টম পর্বে অতিথি ছিলেন বিটপি অ্যাডভার্টাইজিং লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সারাহ আলী
পডকাস্ট শো: লিগ্যাসি উইথ এমআরএইচের অষ্টম পর্বে অতিথি ছিলেন বিটপি অ্যাডভার্টাইজিং লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সারাহ আলী

লিগ্যাসি উইথ এমআরএইচ

ব্যবসা আর সৃজনশীলতার সমন্বয় হলে ফলাফল হয় টেকসই ও সুন্দর: সারাহ আলী

ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রায়ই তরুণদের দেখা যায় সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে ভুগতে। ফলে অনেক সময় যথেষ্ট মেধা, আগ্রহ ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা ক্যারিয়ারে ভালো করতে পারেন না। তরুণদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা জোগাতে প্রথম আলো ডটকম ও প্রাইম ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত পডকাস্ট শো: লিগ্যাসি উইথ এমআরএইচ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ রিদওয়ানুল হকের সঞ্চালনায় অষ্টম পর্বে অতিথি হিসেবে অংশ নেন বিটপি অ্যাডভার্টাইজিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সারাহ আলী। আলোচনার বিষয় ছিল ‘ঐতিহ্য থেকে উদ্ভাবনের পথে বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনশিল্প।’

‘বিজ্ঞাপনে কাজ করতে হলে মিশুক ও সামাজিক হতে হবে। গ্রাহক ও সহকর্মী—সবার সঙ্গে সুন্দরভাবে কথা বলতে জানতে হবে। ভালো যোগাযোগদক্ষতা থাকলে আইডিয়া তৈরি করা সহজ হয়।’

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তরুণদের উদ্দেশে এ পরামর্শ দেন সারাহ আলী। পডকাস্ট শো: লিগ্যাসি উইথ এমআরএইচের এবারের পর্বে অতিথি ছিলেন তিনি। গত শনিবার প্রথম আলোর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে এই শো প্রচারিত হয়।

সারাহ আলী পড়াশোনা করেছেন অ্যানথ্রোপোলজি ও মিডিয়া ইকোলজিতে। সাধারণ এ বিষয়গুলো নিয়ে কেউ পড়াশোনায় খুব একটা আগ্রহ দেখাত না। এ কথা উল্লেখ করে সঞ্চালক মোহাম্মদ রিদওয়ানুল হক পডকাস্ট শোর শুরুতেই জানতে চান, ক্যারিয়ারের জন্য কেন তিনি অ্যানথ্রোপোলজি ও মিডিয়া ইকোলজি বেছে নিলেন?

সারাহ আলী বলেন, ‘ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে ভেবেছিলাম আমি ভেট (ভেটেরিনারিয়ান) হব অথবা বিজ্ঞাপন নিয়ে কাজ করব। তবে অ্যানথ্রোপোলজি নিয়ে পড়াশোনা শুরু করার সময় বুঝিনি যে এটা পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞাপন নিয়ে কাজ করার সময় কাজে লাগবে। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, অ্যানথ্রোপোলজি ও মিডিয়া ইকোলজি উভয়ের সমন্বয় বিজ্ঞাপনকে গভীরভাবে বুঝতে অনেক সাহায্য করে।’ কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞাপনে আমরা সব সময় ইনসাইট খুঁজি। আর অ্যানথ্রোপোলজিতে মানুষ, সংস্কৃতি, তাদের স্বপ্ন, ভয়, আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি সম্পর্কে গভীর ধারণা পাওয়া যায়।’

সারাহ আলী আরও বলেন, ‘মিডিয়া ইকোলজি আমাকে শিখিয়েছে কীভাবে ভিন্ন মাধ্যমে ভিন্নভাবে যোগাযোগ করতে হয়। টিকটকের জন্য যেমন কনটেন্ট হবে, টিভি কিংবা রেডিওর জন্য কনটেন্ট ঠিক তেমন হবে না। এটি আমাকে ইন্টিগ্রেটেড মিডিয়া প্ল্যান (সমন্বিত পরিকল্পনা) করতে সাহায্য করেছে।’

শিকাগোর লিও বার্নেট থেকে বাংলাদেশে এফসিবি বিটপির যাত্রা সম্পর্কে জানতে চাইলে সারাহ আলী বলেন, শিকাগোর লিও বার্নেটে তিনি একটা ইন্টার্নশিপ করেন। ইন্টার্নশিপ শেষ করে সেখানে চাকরির অফারও পান। কিন্তু পড়াশোনা শেষ করে তিনি দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেন, ‘সে সময়ে আমার বাবা (রেজা আলী) দেশে বিজ্ঞাপন নিয়ে পুরোদস্তুর কাজ করছিলেন। তাই বাবার অধীনেই কাজ শুরু করি। কারণ, আমি বাবার কাছ থেকে কাজ করার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি।’

বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান অবস্থা আপনি কেমন দেখছেন? সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের উত্তরে সারাহ আলী বলেন, এটি এখনো পুরোপুরি সংগঠিত বা নিয়মবদ্ধ ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত হতে পারেনি। ৫০ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে, কিন্তু এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো গাইডলাইন (নীতিমালা) নেই। বিশেষ করে ডিজিটাল বিজ্ঞাপনে কোনো রেগুলেশন নেই। এভাবে সরকার এখানে অনেক রাজস্ব হারাচ্ছে।

এরপর সঞ্চালক জানতে চান, বিজ্ঞাপনে সৃজনশীলতা ও শৃঙ্খলার মধ্যে ভারসাম্য কেমন হওয়া উচিত?

সারাহ আলী বলেন, ক্রিয়েটিভ (সৃজনশীল) এজেন্সিগুলোতে বিভিন্ন ধরনের মানুষ কাজ করে। ক্রিয়েটিভরা সময় ব্যবস্থাপনায় দুর্বল হয় বটে, তবে ক্লায়েন্ট সার্ভিসিং টিম এ ব্যাপারে সব সময় খেয়াল রাখে। সমস্যা শুধু ক্রিয়েটিভদের নয়, মার্কেটিংয়ের দিক থেকেও সময়মতো পরিকল্পনা করা দরকার। সময়মতো ফিডব্যাক (সাড়া) পেলে কাজ সময়মতোই শেষ হয়।

সারাহ আলী সব সময় নারীবান্ধব কর্মস্থল গড়ে তোলার জন্য কাজ করেছেন। নারীবান্ধব কর্মস্থল গড়ে তোলার তাঁর এই উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি অনেক দিন ধরেই এটি নিয়ে কাজ করছি। কিন্তু এখনো কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ অনেক কম। আমাদের অফিসে ১৪ শতাংশ নারীকর্মী আছেন, যা যথেষ্ট নয়। আসলে কাজের সময়সূচি ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো অনেক সময় নারীদের নিরুৎসাহিত করে।’ তিনি জানান, নারীদের এই অংশগ্রহণ বাড়াতে পিরিয়ড হলিডে, পিক অ্যান্ড ড্রপ, চার মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি, হয়রানির প্রতি জিরো টলারেন্সের (শূন্য সহনশীলতা) মতো অনেক উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা।

ব্যবসা ও ক্রিয়েটিভিটি (সৃজনশীলতা)—এই দুই সম্পূর্ণ আলাদা বিভাগ থেকে যাঁরা পড়াশোনা করেছেন, তাঁরা একসঙ্গে কাজ করলে কেমন হয়? জানতে চাইলে সারাহ আলী বলেন, ‘অ্যাপল হচ্ছে এর নিখুঁত উদাহরণ। ব্যবসা ও ক্রিয়েটিভিটি—এ দুইয়ের সমন্বয়ে ফলাফল হয় সুন্দর ও টেকসই। বাংলাদেশেও আমাদের সৃজনশীলতাকে ব্যবসার সঙ্গে আরও গভীরভাবে যুক্ত করা উচিত।’

এরপর সঞ্চালক জানতে চান, বিজ্ঞাপনে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের তুলনায় আমাদের দুর্বলতা কোথায়?

সারাহ আলী বলেন, ‘তাদের পেশাদারির মান অনেক উঁচু। আমরা গড়পড়তা ফলাফলে খুশি থাকি। তারা প্রতিনিয়ত নিজেদের কাজকে আরও উন্নত করতে চায়। আমাদের মধ্যে সেই ক্ষুধা আরও বাড়াতে হবে।’

আলোচনার শেষ পর্যায়ে সারাহ আলী বলেন, ‘বর্তমানে ছাত্রছাত্রীরা এই খাতে আসতে চায় না। কারণ, তারা প্রথমেই অনেক বেশি বেতন প্রত্যাশা করে। কিন্তু ক্রিয়েটিভ খাতে প্রথম দুই বছরে তা সম্ভব নয়। এই কাজের প্রতি ভালোবাসা ও ধৈর্য থাকতে হবে। শুধু অর্থের জন্য এলে এখানে হতাশ হতে হয়।’