সুপ্রিম কোর্ট
সুপ্রিম কোর্ট

পঞ্চদশ সংশোধনী: তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ‘যথাযথভাবে পুনর্বহাল হয়নি’, লিভ টু আপিল মঞ্জুরের আরজি

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) মঞ্জুরের আরজি জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া। তিনি বলেছেন, হাইকোর্টের রায়ের পরও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যথাযথভাবে পুনর্বহাল হয়নি।

পঞ্চদশ সংশোধনীর অংশবিশেষ অসাংবিধানিক ও বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ চার বিশিষ্ট ব্যক্তির করা লিভ টু আপিলের শুনানিতে এ কথা বলেন তিনি। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ আজ বুধবার প্রথম দিনের মতো শুনানি নেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার শুনানির পরবর্তী দিন রেখেছেন আদালত।

চার বিশিষ্ট ব্যক্তির পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী কারিশমা জাহান ও রিদুয়ানুল করিম। শুনানিতে শরীফ ভূঁইয়া বলেন, হাইকোর্টে পুরো পঞ্চদশ সংশোধনী আইন চ্যালেঞ্জ করা হয়। হাইকোর্ট তার অংশবিশেষ অসাংবিধানিক ও বাতিল ঘোষণা করেছেন। পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা বাতিল করেছেন। তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা–সংক্রান্ত মূল বিধান ফিরে এসেছে। তবে আইনের আরও কিছু বিধান রয়েছে, যে কারণে যথাযথভাবে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহাল হয়নি।

কোন বিষয়গুলো পুনর্বহাল হয়েছে এবং কোনগুলো হয়নি—এসব দিক শুনানিতে তুলে ধরেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া। তিনি বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাস করার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত ত্রুটি ছিল। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এ সংশোধনী আনা হয়। এ ক্ষেত্রে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হয়নি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন এনে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী এনেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনী আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ওই সংশোধনীতে সংবিধানে ৫৪টি ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছিল। বিলোপ হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাও।

জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে পৃথক রিট আবেদন হয়। সুজন সম্পাদকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা একটি এবং নওগাঁর বাসিন্দা মো. মোফাজ্জল হোসেন আরেকটি আবেদন করেন।

সেই আবেদনে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তি-সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করা হয় রায়ে। এই দুটিসহ পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত ৭ক, ৭খ, ৪৪ (২) অনুচ্ছেদ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করা হয়।

হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধেই সুজন সম্পাদকসহ চার বিশিষ্ট ব্যক্তি লিভ টু আপিল করেন। অন্য তিন ব্যক্তি হলেন এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান। মোফাজ্জল হোসেন আরেকটি লিভ টু আপিল করেন। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার একটি লিভ টু আপিল করেন। লিভ টু আপিলগুলো একসঙ্গে শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠার পর আজ শুনানি শুরু হলো।