‘বিএসসি প্রকৌশলীদের অযৌক্তিক দাবি, নৈরাজ্যের প্রতিবাদ এবং ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের যৌক্তিক ৭ দফার পক্ষে’ সাংবাদিকদের সঙ্গে বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদের মতবিনিময় সভা
‘বিএসসি প্রকৌশলীদের অযৌক্তিক দাবি, নৈরাজ্যের প্রতিবাদ এবং ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের যৌক্তিক ৭ দফার পক্ষে’ সাংবাদিকদের সঙ্গে বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদের মতবিনিময় সভা

বিএসসি প্রকৌশলীদের ৩ দফা প্রতিরোধের হুঁশিয়ারি ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের

বিএসসি প্রকৌশলীদের তিন দফা দাবি অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা। একই সঙ্গে এ নিয়ে গঠিত সরকারি কমিটি তিন দফা বাস্তবায়নের চেষ্টা করলে তা প্রতিরোধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।

আজ শনিবার রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইডিইবি) সিইসি কনফারেন্স হলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদ এ ঘোষণা দিয়েছে।

‘বিএসসি প্রকৌশলীদের অযৌক্তিক দাবি, নৈরাজ্যের প্রতিবাদ এবং ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের যৌক্তিক সাত দফার পক্ষে’ এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। নিজেদের সাত দফা দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেও জানায় সংগঠনটি।

বিএসসি প্রকৌশলীরা তিন দফা ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা সাত দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন। প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো নবম গ্রেড সহকারী প্রকৌশলী পদে কেবল পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ ও ন্যূনতম যোগ্যতা বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার করা; দশম গ্রেডে শুধু ডিপ্লোমাধারী ব্যক্তিরা আবেদন করতে পারেন, সেখানে যেন উচ্চ ডিগ্রিধারী ব্যক্তিরাও আবেদন করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা এবং শুধু বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং যাঁরা সম্পন্ন করবেন, তাঁরাই যেন প্রকৌশলী (ইঞ্জিনিয়ার) লিখতে পারেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া।

ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের সাত দফা দাবি হচ্ছে প্রকৌশল কর্মক্ষেত্রে বিএসসি ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের দায়িত্ব সুনির্দিষ্টভাবে ভাগ করতে হবে এবং উপসহকারী প্রকৌশলী পদ কেবল পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষণ রাখতে হবে। সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রকৌশল সংস্থা, বিভাগ ও বিদ্যুৎ-জ্বালানি কোম্পানির জনবল কাঠামোয় বিএসসি ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের অনুপাত ১: ৫ নির্ধারণ করতে হবে। একই সঙ্গে উপসহকারী প্রকৌশলী থেকে সহকারী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির কোটা ৩৩ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করতে হবে। প্রশাসনিক পদে প্রশাসন ক্যাডার থেকে নিয়োগ দিতে হবে। প্রকৌশলীদের অন্য ক্যাডারে নিয়োগ বা পেশা পরিবর্তন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে।

বিএসসি ও ডিপ্লোমাধারী প্রকৌশলীদের পাল্টাপাল্টি দাবি পর্যালোচনায় গত বৃহস্পতিবার ১৪ সদস্যের ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করেছে সরকার। এই ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রধান গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম। ওয়ার্কিং গ্রুপ আন্দোলনকারী ও অভিভাবকদের সঙ্গে বসে বিষয়গুলো পর্যালোচনা করবে, এরপর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবে।

মতবিনিময় সভায় লিখিত বক্তব্যে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদের সদস্যসচিব মো. ইমাম উদ্দিন বলেন, ‘দশম গ্রেড ওপেন (উন্মুক্ত) রাখলে বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা আমাদের সঙ্গে পরীক্ষা দেবে। তাঁরা মেধাবী, এটা আমরা অস্বীকার করি না। কিন্তু তারা পাস করলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের চাকরির কোনো সুযোগ থাকবে না। এর কোনো যৌক্তিকতা নেই।’

ইমাম উদ্দিন বলেন, ‘(প্রকৌশলীদের) তিন দফা নিয়ে আমাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। কারণ, আমরা জানি—এই তিন দফা অযৌক্তিক ও অবাস্তব কথাবার্তা। সুতরাং আমরা আমাদের সাত দফার জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাব।’

ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করলে, তাঁরা বসে থাকবেন না বলেও হুঁশিয়ারি দেন ইমাম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমরা কর্মসূচি দিইনি মানে আমরা কর্মসূচি দেব না, তা নয়। সময়মতো আমরা ঠিকই কর্মসূচি দেব।’

ইমাম উদ্দিন বলেন, ‘সামনে একটা জাতীয় নির্বাচন আসছে; এই মুহূর্তে জাতীয় অনেক সমস্যা। আমরা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চাই না। কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে গেলে উপদেষ্টা পরিষদ বলেন আর যাই বলেন, আমরা কোনো ছাড় দেব না। এই তিন দফার পক্ষে, আমাদের বিপদের কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করলে আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলব।’

বিএসসি প্রকৌশল শিক্ষার্থী ও প্রকৌশলীরা দেশজুড়ে মব সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করেছেন বলেও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদের সদস্যসচিব অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় ব্লক (অবরোধ) করে এবং পূর্ব ঘোষণা ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় অভিমুখে এসে ব্যাপক ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ ছিল, যা বুয়েট (বাংলাদেশ প্রকৌশল) শিক্ষার্থীদের নিকট জাতি প্রত্যাশা করে না। আমরা এ ধরনের মব সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের তীব্র প্রতিবাদ, ধিক্কার ও নিন্দা জানাচ্ছি।’

আইডিইবির সভাপতি কবির হোসেন বলেন, বিএসসি প্রকৌশলীদের তিন দফা দাবি আসলে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের অর্জিত অধিকার খর্ব করার প্রচেষ্টা। তিনি বলেন, ১৯৭৮ ও ১৯৯৪ সালের নীতিমালা অনুযায়ী ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা দশম গ্রেডে নিয়োগ পান এবং পদোন্নতির সুযোগ থাকে। কিন্তু বিএসসি প্রকৌশলীরা বলছে, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের প্রকৌশলী বলা যাবে না এবং তাঁরা দশম গ্রেড থেকে নবম গ্রেডে পদোন্নতি পাবেন না। অথচ নিজেরা নবম গ্রেড থেকে এক নম্বর পর্যন্ত সব জায়গায় শতভাগ কোটা ভোগ করছেন।

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক আখেরুজ্জামান বলেন, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের একমাত্র চাকরির ক্ষেত্র হলো দশম গ্রেড। বিএসসি প্রকৌশলীরা যদি এই গ্রেডে ঢোকেন, তাহলে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কর্মসংস্থান সংকুচিত হয়ে প্রায় নিঃশেষ হয়ে যাবে। এতে দেশের প্রায় ৫০০ পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠানও ধ্বংসের মুখে পড়বে।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মোসলেম উদ্দিন, এরশাদ উল্যাহ, জয়নুল আবেদীন, আবদুস সাত্তার শাহ, জ্যেষ্ঠ সদস্যসচিব মিজানুর রহমান, সহজনসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক সাহাবুদ্দিন প্রমুখ।