যৌথ বাহিনীর হাতে আটকের পর নিহত কুমিল্লার যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলাম
যৌথ বাহিনীর হাতে আটকের পর নিহত কুমিল্লার যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলাম

নিরাপত্তা হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যু

নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বিচার দাবি

কুমিল্লায় যৌথ বাহিনীর হাতে আটক যুবদল নেতার মৃত্যুর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মানবাধিকার সংগঠন। তারা বলেছে, এ ধরনের ঘটনা মানবাধিকার ও আইনের শাসনের পরিপন্থী। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্তদের চিহ্নিত করে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

আজ শনিবার গণমাধ্যমে পৃথক বিবৃতি পাঠিয়ে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করা হয়েছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এক বিবৃতিতে বলেছে, এ ধরনের ঘটনা মানবাধিকার ও আইনের শাসনের পরিপন্থী। রাষ্ট্র কর্তৃক আটক ব্যক্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আসক এ ঘটনার স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও দ্রুত বিচারিক তদন্ত দাবি করছে এবং দায়ীদের যথাযথ আইনানুগ শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছে। একই সঙ্গে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) সব ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনায় সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছে।

পৃথক বিবৃতিতে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে আনা নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটকের পর নির্যাতনে মৃত্যুর ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জবাবদিহি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের মানবাধিকার ও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। এমএসএফ এ ক্ষেত্রে মো. তৌহিদুল ইসলামের নির্যাতনে মৃত্যুর বিষয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে অনতিবিলম্বে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছে।

এদিকে গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে এ ধরনের অমানবিক নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দেশবাসীর জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয় বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ। গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তিনি বলেন, বিগত দিনে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে এ ধরনের গুম, খুন, নির্যাতন, আয়নাঘর, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড জাতি দেখেছে। দেশবাসী আশা করেছিল অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ওই পরিস্থিতির অবসান হয়ে একটা ন্যায় ও বিচারভিত্তিক সমাজ গড়ে উঠবে। অথচ যৌথ বাহিনীর হাতে এই বর্বর নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা আমাদের হতবাক করল। বাসদের পক্ষ থেকে অবিলম্বে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।

সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মানুষের জানমাল, বিচার পাওয়ার অধিকার ও জীবনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলে গণ–অভ্যুত্থানের চেতনাই বিনষ্ট হবে। তাই এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নেওয়া এবং সামাজিক নিরাপত্তা ও বিচারের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।