ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির মাঠে মুক্তিযুদ্ধকে স্মরণ করে ছাত্র ইউনিয়নের ‘রক্তের দলিল’ অনুষ্ঠানের তৃতীয় দিনে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণালব্ধ আলোচনা ‘৩০ লক্ষ শহীদ: বাহুল্য না বাস্তবতা?’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫। ছবি: প্রথম আলো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির মাঠে মুক্তিযুদ্ধকে স্মরণ করে ছাত্র ইউনিয়নের ‘রক্তের দলিল’ অনুষ্ঠানের তৃতীয় দিনে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণালব্ধ আলোচনা ‘৩০ লক্ষ শহীদ: বাহুল্য না বাস্তবতা?’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫। ছবি: প্রথম আলো

ছাত্র ইউনিয়নের ‘রক্তের দলিল’ প্রদর্শনী

আলোচনায় পাকিস্তানি হানাদারদের মনস্তত্ত্ব নিয়ে কথা বললেন আরিফ রহমান

মুক্তিযুদ্ধকে স্মরণ করে ছাত্র ইউনিয়নের ‘রক্তের দলিল’ অনুষ্ঠানের তৃতীয় দিনে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণালব্ধ আলোচনা ‘৩০ লক্ষ শহীদ: বাহুল্য না বাস্তবতা?’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির মাঠে এই আলোচনা সভা হয়। এতে একক আলোচনায় অংশ নেন গবেষক আরিফ রহমান।

প্রামাণ্য আলোকচিত্র ও দলিলপত্র উপস্থাপনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস স্মরণ করে ‘রক্তের দলিল’ শিরোনামে চার দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সবুজ চত্বরে আয়োজিত প্রদর্শনী চলবে ১৬ ডিসেম্বর মঙ্গলবার পর্যন্ত।

টিএসসিতে এই আয়োজনে মুক্তিযুদ্ধকালীন পত্রিকা ও নথি উপস্থাপনার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে যুদ্ধাপরাধের ইতিহাস, গণহত্যার সাক্ষ্য ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ। আয়োজকদের মতে, মুক্তিযুদ্ধকে ঘিরে যে বিকৃত ও বিভ্রান্তিকর বয়ান ছড়ানো হচ্ছে, তার বিরুদ্ধেই এই উদ্যোগ।

তৃতীয় দিনে আলোচনায় অংশ নিয়ে গবেষক আরিফ রহমান গণহত্যার ক্ষেত্রে পাকিস্তানি বাহিনীর মনস্তত্ত্ব ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে তারা কোনোভাবেই কমপ্লিট মুসলিম (সম্পূর্ণ মুসলমান) নয় বলে মনে করেছে এবং তারা মনে করত তারা এসেছে একটা ঐতিহাসিক দায়িত্ব নিয়ে যে তাদেরকে কমপ্লিট মুসলমান বানাবে, তারা তাদেরকে শুদ্ধ করে যাবে। তাদের মনস্তত্ত্ব এমন ছিল যে তারা শুদ্ধ করতে এসেছে। একজন জেনারেল বাংলাদেশে এসে তাঁর এলাকাটা ঘুরছেন। পাকিস্তানি অফিসার বলছেন যে স্থানীয় হাইস্কুলে দেখলাম একটা শহীদ মিনার। প্রতিদিন ছাত্ররা এটাকে প্রদক্ষিণ করে।

আরিফ বলেন, একজন পাকিস্তানি জেনারেলের মনে হয়েছে, বাংলাদেশের যত ছাত্র আছে, স্কুলে পড়ে, তারা প্রতিদিন সকালবেলা শহীদ মিনার প্রদক্ষিণ করে এবং তার সামনে সিজদা দেয়। এই যে তাদের কাছে মনে হচ্ছে এরা সবাই আসলে যথেষ্ট মুসলমান না। অর্থাৎ তারা ইমানি দায়িত্ব নিয়ে আসছে তাদের ভালো মুসলমান বানাতে।

আরিফ আলোচনায় বলেন, ডক্টর জিওফ্রে ডেভিসকে অস্ট্রেলিয়া থেকে গর্ভপাতবিশেষজ্ঞ হিসেবে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়েছিল। ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। যে নারীরা নিপীড়নের শিকার হয়েছেন এবং গর্ভবতী হয়েছেন, তাঁদের গর্ভপাত করার জন্য। তিনি এ কাজের সূত্রে একবার কুমিল্লায় গেলেন। ১৯৭২ সালের শুরুর ঘটনা। তখনো পাকিস্তানি সৈন্যরা বন্দী আছে, বাংলাদেশেই আছে। সেখানে সিএমএইচে কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্যের সঙ্গে তাঁর দেখা হলো।

জিওফ্রে সেই সৈন্যদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা তো সৈনিক। পাকিস্তানে তোমাদের স্ত্রী আছে, বাচ্চা আছে। তোমরা কীভাবে এই মেয়েগুলোর এ রকম খারাপ অবস্থা করলে? কীভাবে এ রকম ধর্ষণ করলে? কেন করলে? তোমরা তো চোর না, ডাকাত না, তোমরা তো ধর্ষক না।’ তাদের খুব সহজ উত্তর ছিল যে, ‘আমাদের কাছে টিক্কা খানের নির্দেশনা ছিল যে একজন ভালো মুসলমান কখনোই তার পিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে না। তাই আমাদের যত বেশি সংখ্যক বাঙালি মেয়েদেরকে গর্ভবতী করে রেখে যেতে হবে।’ ধর্ষণে লিপ্ত একজন পাকিস্তানি অফিসার তাঁর বন্ধুকে লিখছেন যে, ‘এই বাঙালি নারীদের আমরা পোষ মানাব এবং নতুন সাচ্চা পাকিস্তানিদেরকে জন্ম দেব।’

আরিফ রহমান বলেন, হামুদুর রহমান কমিশন রিপোর্টে একজন অফিসার বলেছেন, নিয়াজি সৈনিকদের সঙ্গে অসৈনিকসুলভ আচরণ করতেন। চোখে শয়তানের দীপ্তি নিয়ে উনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করতেন, ‘গত রাতে তোমার অর্জন কী?’ এখানে অর্জন বলতে তিনি ধর্ষণ বোঝাতেন।