শরিফ ওসমান হাদি হত্যা মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদকে সীমান্তে আত্মগোপনে সহায়তার অভিযোগে গ্রেপ্তার মো. আমিনুল ইসলামকে রিমান্ড শুনানির জন্য আদালতে আনা হয়। বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর
শরিফ ওসমান হাদি হত্যা মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদকে সীমান্তে আত্মগোপনে সহায়তার অভিযোগে গ্রেপ্তার মো. আমিনুল ইসলামকে রিমান্ড শুনানির জন্য আদালতে আনা হয়। বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর

ওসমান হাদি হত্যা

আসামিকে আদালতে দেরিতে হাজির করায় ব্যাখ্যা চাইলেন বিচারক, জিআরও ও ওসিকে শোকজ

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যা মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদকে সীমান্তে আত্মগোপনে সহায়তার অভিযোগে গ্রেপ্তার মো. আমিনুল ইসলামকে দেরিতে আদালতে হাজির করায় হাজতখানার অপারেশন ইনচার্জ (ওসি) এবং সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তাকে (জিআরও) শোকজ করা হয়েছে। একই সঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

বুধবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জোনাইদ এ আদেশ দেন।

এদিন বিকেল পাঁচটার দিকে আসামি আমিনুলকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্য দিয়ে তাঁকে এজলাসে ওঠানো হয়। পাঁচ মিনিট পর বিচারক এজলাসে ওঠেন। বিচারক প্রথমেই জানতে চান, ‘ডিসি প্রসিকিউশন কই? রাষ্ট্রপক্ষ কোথায়? এই মামলার সঙ্গে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য ব্যক্তিরা কোথায় আছেন?’

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. কাইয়ুম হোসেন বলেন, ‘মহানগর পিপি স্যার আমাকে পাঠিয়েছেন।’

বিচারক তখন প্রশ্ন করেন, ‘আপনার স্যার কোথায়?’

কাইয়ুম হোসেন বলেন, ‘পিপি স্যার অফিসে আছেন। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে শুনানির জন্য আমাকে পাঠানো হয়েছে।’

বিচারক তখন বলেন, ‘তার মানে আপনারা মামলাটিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না।’ আইনজীবী কাইয়ুম হোসেন বলেন, ‘না স্যার, বিষয়টি ঠিক এমন নয়।’

এরপর বিচারক সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা তদন্ত কর্মকর্তার উদ্দেশে বলেন, ‘বলেন, কেন রিমান্ড চাচ্ছেন?’

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে, ফিলিপের মাধ্যমে ওসমান হাদি হত্যার মূল আসামি ফয়সালকে সীমান্ত এলাকায় আত্মগোপনে সহায়তা করেছেন আসামি রাজু। তিনি এ মামলায় অর্থ জোগানদাতা। মামলার তদন্তের স্বার্থে আসামির ১০ দিনের রিমান্ড প্রয়োজন।’

তখন বিচারক জানতে চান, ‘আসামির বাসা কোথায়?’

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘রাজশাহী স্যার।’

তাহলে এই মামলায় জড়িত কীভাবে—বিচারকের এমন প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘ফয়সালকে সীমান্ত এলাকায় আত্মগোপনে ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছে। আসামি সিবিয়ন দিউ ও সঞ্জয় চিসিমের জিজ্ঞাসাবাদে এই আসামির নাম এসেছে।’

বিচারক তখন বলেন, ‘আসামি কখন এসেছে? সন্ধ্যায় কেন ওঠালেন? গতকাল রাত দেড়টায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত তো জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় পেয়েছেন। আবারও রিমান্ড কি দরকার?’

বিচারক কিছুটা তিরস্কারের সুরে বলেন, ‘তাঁকে বিউটি পারলারে নিয়ে গিয়ে কি সাজিয়ে আনছিলেন? এটা খুব বাজে অভ্যাস। এসব বাদ দেন।’

এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বক্তব্য শুরু করে বলেন, ‘ফিলিপসের সঙ্গে এই আসামির সম্পর্ক আছে। জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য সর্বোচ্চ রিমান্ড চাচ্ছি।’

বিচারক তখন কিছুটা রাগত স্বরে বলেন, ‘আসামির ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছেন, তাহলে সর্বোচ্চ রিমান্ড ১২ দিন দেব?’

এরপর বিচারক বলেন, ‘আসামি যাতে সঠিক সময়ে আনা হয়, সেই অভ্যাস করেন।’ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারক বলেন, ‘প্রসিকিউশন হিসেবে আপনারা সহযোগিতা করবেন। খোঁজ রাখবেন। এতে আপনাদেরও দায় থাকে।’

পরে বিচারক আসামি আমিনুল ইসলামের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

একই সঙ্গে আদেশে বিচারক বলেন, আসামিকে কেন দেরিতে আদালতে ওঠানো হলো, সে জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা দেবেন। এ ছাড়া সিএমএম আদালতের হাজতখানার অপারেশন ইনচার্জ (ওসি) ও সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তাকে (জিআরও) শোকজ করা হলো।

শুনানির সময় আসামি আমিনুল ইসলাম ওরফে রাজু আসামির কাঠগড়ায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁর পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।