বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের বর্ধিত সভায় বক্তব্য দেন বার কাউন্সিলের কার্যনির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মো. রুহুল কুদ্দুস। আজ শনিবার বার কাউন্সিলের মাল্টিপারপাস হল রুমে
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের বর্ধিত সভায় বক্তব্য দেন বার কাউন্সিলের কার্যনির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মো. রুহুল কুদ্দুস। আজ শনিবার বার কাউন্সিলের মাল্টিপারপাস হল রুমে

বিচারককে ‘ঘুষ সাধার’ অভিযোগ

দু-একজনের কারণে পুরো আইনজীবী সমাজ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়: রুহুল কুদ্দুস

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের কার্যনির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মো. রুহুল কুদ্দুস বলেছেন, ‘বার কাউন্সিল আইনজীবীদের মেধার বিকাশ ও কল্যাণে যেমন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, তেমনিভাবে আমাদের দু-একজনের কারণে পুরো আইনজীবী সমাজ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকেও খেয়াল করতে হবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কার্যকর ভূমিকা পালন করবে, এ কথা মনে রাখতে হবে।’

পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারককে ওই আদালতের সরকারি কৌঁসুলির (পিপি) বিরুদ্ধে ‘ঘুষ সাধার’ এবং এক আইনজীবীর বিরুদ্ধে দুই শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে গণমাধ্যমে আসা খবরের বিষয়টি তুলে ধরে আজ শনিবার বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের বর্ধিত সভায় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস এসব কথা বলেন।

বার কাউন্সিলের কার্যনির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান বলেন, ‘পটুয়াখালীর একজন জজ অভিযোগ করেছেন, সেখানে কর্মরত একজন পিপি তাঁর বাসায় ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। বার কাউন্সিলের বর্তমান সিস্টেমে কোনো আইনজীবীর বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলেই শুধু সেটিই বার কাউন্সিল বিবেচনায় নিতে পারে। প্রত্যাশা করি, কোনো আইনজীবী এ ধরনের কোনো রকম অনৈতিক কাজের মধ্যে নিজেকে জড়িত করতে পারেন না।’

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস আরও বলেন, ‘একজন আইনজীবীর বাসায় দুজন শিশু গৃহকর্মীকে মারাত্মভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। আইনজীবীর বিরুদ্ধে শিশু নির্যাতনের জন্য মামলা হয়েছে। ভিডিও এবং সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে সাধারণ মানুষ কিন্তু ওই আইনজীবীর কারণে আইনজীবী সমাজ সম্পর্কে একটা নেতিবাচক চিত্র আমাদের সামনে তুলে ধরছে।’ দুটি ঘটনার কারণে বার কাউন্সিল শনিবার দুপুরে জরুরি সভা আহ্বান করেছে বলেও জানান তিনি।

সভায় উপস্থিত পটুয়াখালী বারের (জেলা আইনজীবী সমিতি) সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে তাঁদের বক্তব্যে এ বিষয়ে জানাতে বলেন বার কাউন্সিলের কার্যনির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান। সভায় বিভিন্ন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিরা বক্তব্য দেন।

আইন পেশার জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক

বর্ধিত সভায় পটুয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এ রকম কোনো ঘটনা যেন না ঘটে, আমাদের সে ব্যাপারে সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে। আমাদের একজন আইনজীবী, উনি একটা বিশেষ দলের… নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি নিয়োগপ্রাপ্ত হন। নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে কোর্টে অনৈতিক আচরন করতে থাকেন।’

হুমায়ুন কবির বলেন, তিনি নিজে ও সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিভিন্ন সময়ে তাঁকে (ওই পিপিকে) নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেও পারেননি। আইন পেশার সম্মান রক্ষার্থে এই চেষ্টা অবিরত চালিয়ে গেছেন। কিন্তু তিনি অনৈতিকতার সঙ্গে দুটি খাম জজ সাহেবকে প্রেরণ করন। একটিতে কেসের নথি, অপরটিতে টাকা।

পটুয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, ‘জজ সাহেব তাৎক্ষণিক জেলা বারের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও জেলার পিপি যিনি আছেন, তাঁকে ডেকে অবস্থাটি দেখান। বাসার ভিডিও ফুটেজেও লক্ষ করা গেছে, কাকে পাঠিয়েছে এবং কীভাবে গেছে—সবকিছুই ভিডিও ফুটেজে আছে। এটা আইন পেশার জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক বলে মনে করি। তাঁর সদস্যপদ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে এবং সাত দিনের শোকজ (কারণ দর্শানোর) নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’

বার কাউন্সিলের মাল্টিপারপাস হল রুমে ওই বর্ধিত সভা হয়। সভায় বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন, ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান এ এস এম বদরুল আনোয়ারসহ বিভিন্ন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিরা বক্তব্য দেন। এ সময় বার কাউন্সিলের লিগ্যাল এডুকেশন কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মামুন, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ বিভিন্ন কমিটির চেয়ারম্যান ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।