প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে ভাষণ দেন। গতকাল শুক্রবার রাতে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে ভাষণ দেন। গতকাল শুক্রবার রাতে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে

সার্কের পুনরুজ্জীবন ও পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল প্রতিষ্ঠার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

সময়ের সঙ্গে দুর্বল হয়ে পড়া বৈশ্বিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তিগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস । বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান তিনি।

সেই সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থাকে (সার্ক) পুনরুজ্জীবনে জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার সকালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস এ কথা বলেন।

ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের যে অধিকার প্রতিটি দেশের রয়েছে, তার প্রতি সমর্থন জানাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুধু মিয়ানমার নয়, এ বছর আমরা পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি প্রান্তে সংঘাত প্রত্যক্ষ করেছি—ইউরোপ, দক্ষিণ এশিয়া কিংবা মধ্যপ্রাচ্যে। নিরস্ত্রীকরণ ও পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধের গুরুত্ব আমরা গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারি।’

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তাঁর সফরসঙ্গী অন্য নেতারা। গতকাল শুক্রবার রাতে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘একটি দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে, আমাদের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করার আগেই, এ বছর, আমরা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার আওতাধীন পারমাণবিক নিরাপত্তা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা–সম্পর্কিত যৌথ কনভেনশনে যোগদান করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ যোগদানের মাধ্যমে সর্বোচ্চ মানের পারমাণবিক নিরাপত্তা আর স্বচ্ছতার প্রতি আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি।’ তিনি পারমাণবিক অস্ত্রবিস্তার প্রতিরোধ ও নিরস্ত্রীকরণের মাধ্যমে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন।

সার্ক পুনরুজ্জীবনে জোরালো আহ্বান

সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘চার দশক আগে গঠিত সার্ক প্রাথমিক পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছিল এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য একটি শক্ত ভিত্তি গড়ে দিয়েছিল। রাজনৈতিক অচলাবস্থার পরও সংস্থাটির প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো কার্যকর রয়েছে। এটি এখনো কোটি কোটি মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করতে সক্ষম।’

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, স্বচ্ছতা ও কল্যাণের ভিত্তিতে আঞ্চলিক সহযোগিতায় অঙ্গীকারবদ্ধ বাংলাদেশ। আঞ্চলিক সংযোগ ও বাণিজ্য জোরদারে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে বিমসটেক, বিবিআইএন, এশিয়ান হাইওয়ে এবং সার্কের মতো উদ্যোগে কাজ করছে। আসিয়ানের মতো কার্যকর আঞ্চলিক ফোরামে যুক্ত হওয়ার জন্যও আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সেই লক্ষ্যে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সম্মিলিত উন্নয়নের জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই। অভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদের ন্যায্য ব্যবহার ও সহমর্মিতার চর্চা অপরিহার্য।

প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার নিয়ে শান্তিপূর্ণ আঞ্চলিক সহযোগিতায় বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ। সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রথম দক্ষিণ এশীয় দেশ হিসেবে জাতিসংঘের পানিসংক্রান্ত কনভেনশনে যোগ দিয়েছে।