মাল্টার জাতীয় পতাকা
মাল্টার জাতীয় পতাকা

বিজয়ের ডিসেম্বর দেশে দেশে

মাল্টা: বোমার বৃষ্টিতে টিকে থাকার বিজয়

ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের মাস। কিন্তু বিশ্বে এমন আরও বহু দেশ আছে, যারা তাদের স্বাধীনতা, মুক্তি অথবা যুদ্ধের সমাপ্তির সাফল্যকে স্মরণ করে ‘বিজয় দিবস’ বা সমতুল্য নামে। প্রথম আলো ডিসেম্বরের এই বিশেষ আয়োজনে তুলে ধরছে কীভাবে তারা সেই দিনটিকে আজও নিজেদের জাতীয় জীবনে বাঁচিয়ে রেখেছে।

ভূমধ্যসাগরের নীল জলরাশির বুকে ভেসে থাকা ছোট্ট একটি দ্বীপরাষ্ট্র মাল্টা। ম্যাপে হয়তো একে খুঁজে পেতে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের প্রয়োজন হতে পারে, কিন্তু সাহসিকতার ইতিহাসে দেশটির আকার বিশাল। আজ ৮ ডিসেম্বর, মাল্টায় উদ্‌যাপিত হচ্ছে ‘ইম্যাকুলেট কনসেপশন ডে’। আপাতদৃষ্টে এটি একটি ধর্মীয় উৎসব মনে হলেও মাল্টার মানুষের কাছে দিনটি তাঁদের অস্তিত্ব রক্ষা ও জাতীয় বিজয়ের এক গভীর প্রতীকে পরিণত হয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, বিশেষ করে ১৯৪০ থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত মাল্টা ছিল রণকৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উত্তর আফ্রিকায় অক্ষশক্তির (জার্মানি ও ইতালি) রসদ সরবরাহ বন্ধ করতে ব্রিটিশদের এই ঘাঁটি ছিল হিটলারের চোখের বালি। ফলে এই ছোট্ট দ্বীপটির ওপর নেমে আসে ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ বিমান হামলা। টানা ১৫৪ দিন ও রাত ধরে মাল্টায় বিরামহীন বোমা ফেলা হয়েছিল। ইতিহাসবিদেরা বলেন, লন্ডনের চেয়েও ভয়াবহ ছিল মাল্টার ওপর বোমাবর্ষণের তীব্রতা। খাবার নেই, জ্বালানি নেই, আকাশ থেকে শুধুই ঝরছে মৃত্যুর পরোয়ানা, তবু মাল্টা হার মানেনি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির বোমাহামলায় বিধ্বস্ত ভ্যাল্লেটার অপেরা হাউস

মাল্টার মানুষ বিশ্বাস করেন, তাঁদের এই অলৌকিক টিকে থাকা এবং ধ্বংসস্তূপ থেকে ফিনিক্স পাখির মতো জেগে ওঠার পেছনে ছিল এক অদৃশ্য শক্তি ও অটুট মনোবল। ১৯৪২ সালের ৮ ডিসেম্বরের এই দিনে, যখন চারপাশ বারুদের গন্ধে ভারী, তখন মাল্টাবাসী তাঁদের উপাসনালয়গুলোয় জড়ো হয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন—তাঁরা আত্মসমর্পণ করবেন না। তাঁদের এই অদম্য সাহসের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ রাজা ষষ্ঠ জর্জ ১৯৪২ সালে পুরো দ্বীপরাষ্ট্রটিকে ‘জর্জ ক্রস’ (George Cross) বীরত্বসূচক পদকে ভূষিত করেন, যা আজও গর্বের সঙ্গে তাঁদের জাতীয় পতাকায় শোভা পায়।

বিশ্বমানচিত্রে মাল্টা

আজকের দিনে মাল্টার রাজধানী ভ্যাল্লেটা বা গোজো দ্বীপে যখন উৎসবের তোপধ্বনি শোনা যায়, তা কেবল ধর্মীয় উদ্‌যাপনে সীমাবদ্ধ থাকে না। এটি হয়ে ওঠে সেই সব সাধারণ মানুষের বিজয়ের গান, যাঁরা দেখিয়েছিলেন, আকারে ছোট হলেও সাহসে বলীয়ান হলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বৈরশাসকের টুঁটি চেপে ধরাও সম্ভব। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের প্রধান অস্ত্র যেমন ছিল দেশপ্রেম ও মনোবল, মাল্টার বিজয়গাথাও ঠিক সেই একই সুতোয় গাঁথা।