
দুপুর ১২টা। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানার সামনে পুলিশের সতর্ক পাহারা। দুজন পুলিশ কনস্টেবল সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে হাজতখানার ভেতর থেকে হাত ধরে বের করে আনেন। তখন দেখা যায়, ইনুর মাথায় পুলিশের হেলমেট আর বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট। হাজতখানার সামনে কিছুক্ষণ ইনু দাঁড়িয়ে থাকেন। তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। পুলিশ সদস্যরা দ্রুত তাঁকে হাজতখানা থেকে হাঁটিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে রাখা প্রিজন ভ্যানের কাছে নিয়ে যান।
ইনুর দুই হাত পেছনে নিয়ে হাতকড়া পরানো ছিল। প্রিজন ভ্যানের ভেতরে ঢোকানোর পর তাঁর মাথা থেকে হেলমেট খুলে ফেলেন পুলিশ সদস্যরা। দুই হাতের হাতকড়াও তাঁরা খুলে দেন।
এ সময় হাসানুল হক ইনু প্রিজন ভ্যানের ভেতরে রাখা লোহার বেঞ্চের ওপর দাঁড়ান। প্রিজন ভ্যানের লোহার ফাঁক দিয়ে তিনি তাঁর আত্মীয়স্বজন ও নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। এ সময় প্রিজন ভ্যানের ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকা দুজন পুলিশ সদস্য হাসানুল হক ইনুকে দাঁড়িয়ে না থেকে বেঞ্চে বসার অনুরোধ করেন। ইনুর উদ্দেশে এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘স্যার, আপনি দাঁড়িয়ে থেকে কথা বলতে পারবেন না।’
পুলিশ সদস্যের এ কথা শুনে ইনু বলতে থাকেন, ‘আমি দাঁড়িয়ে থাকব। আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারব না, কথা বলতে পারব না—এটা আইনে নেই। আপনারা আপনাদের কাজ করেন।’
তখন ওই পুলিশ সদস্য ইনুর উদ্দেশে বলেন, ‘স্যার, আপনার নিরাপত্তার জন্য বলছি, আপনি দাঁড়িয়ে থাকবেন না।’
এ সময় হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘আমি আমার আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলতে পারব না? আমি সারা রাস্তা দাঁড়িয়ে থাকব। আপনি বলেন, কোন আইনে আছে, আমি কথা বলতে পারব না, দাঁড়াতে পারব না? আমাকে আইন দেখান। দাঁড়ানো কি নিষেধ?’
ইনুর মুখ থেকে এ কথা শোনার পর ওই পুলিশ সদস্য বলতে থাকেন, ‘অথরিটির (কর্তৃপক্ষের) নিষেধ আছে।’
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ইনু তখন বলেন, ‘আমি দাঁড়িয়ে থাকব, আমাকে মারবেন? আমি দাঁড়িয়ে থাকব। সবকিছুর একটা লিমিট (সীমা) আছে। আমি দাঁড়িয়ে থাকব।’
এরপর আবার ওই পুলিশ সদস্য ইনুকে প্রিজন ভ্যানের ভেতরের বেঞ্চে বসে থাকার অনুরোধ করেন। তখন ইনু তাঁর উদ্দেশে বলেন, ‘আর কথা বাড়াবেন না, আইন দেখান, আমি বসব। আমি দাঁড়ায় থাকব, গাড়ির ভেতরে দাঁড়ানো কি নিষেধ? হাত দেখানো কি নিষেধ? কথা বলা কি নিষেধ? আমাকে আইন দেখাচ্ছেন! কী করবেন আপনারা? কপালে খারাপ আছে সবার। কর্তৃপক্ষ কি বলেছে, দাঁড়াতে পারব না? অর্ডার নিয়ে আসেন, বসব।’
ইনু ওই পুলিশ সদস্যকে আরও বলেন, ‘আপনি অর্ডার দেখান, খামোখা সিনক্রিয়েট করছেন কেন? আপনার ওসি সাহেবকে নিয়ে আসেন। অর্ডার দেখান। আমি বসব।’
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনের জনসন রোডে তখন প্রচণ্ড যানজট। প্রায় ১৩ মিনিট পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে ইনুর এই কথোপকথন চলে। প্রিজন ভ্যানটি রায়সাহেব বাজার মোড়ে পৌঁছালে ইনু প্রিজন ভ্যানের ভেতরে বসে পড়েন। প্রিজন ভ্যানটি কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্দেশে রওনা হয়।
পুলিশ ও আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ইনুকে আজ সোমবার সকাল ৯টার দিকে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় আনা হয়।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও তাঁর স্ত্রী আফরোজা হকের নামে গত ১৬ মার্চ মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের ওই মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন ধার্য ছিল আজ। এ জন্য ইনুকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।