
গেমিং এখন আর শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়। বরং এটি আজকাল তরুণ প্রজন্মের জন্য একধরনের কালচার, কম্পিটিশন এবং ক্যারিয়ারও বটে। পিসি কিংবা কনসোল—যেভাবেই গেমিং করুন না কেন, সঠিক টিভি বা মনিটর বেছে নেওয়া আপনার এক্সপেরিয়েন্সকে একেবারে বদলে দিতে পারে।
তাই গেমিংয়ের জন্য টিভি কিনতে গেলে শুধু বিশাল স্ক্রিন কিংবা কালার নয়, খেয়াল রাখতে হয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফিচারের দিকেও। হাই কোয়ালিটি গেমিং এক্সপেরিয়েন্সের অনুভূতি পেতে চাইলে দরকার হয় কম ইনপুট ল্যাগ, হাই রিফ্রেশিং রেট, ভিআরআর, এআই অটো গেম মোড, গেম বার, সুপার আল্ট্রাওয়াইড গেমভিউ, গেম মোশন প্লাস, মিনিম্যাপ জুম ও স্ট্রং সাউন্ড সিস্টেম। প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে এসব ফিচারই গেমারদের এক্সপেরিয়েন্সকে বদলে দিচ্ছে পুরোদমে। সব মিলিয়ে গেমিং টিভিতে কোন কোন ফিচার থাকা জরুরি—চলুন জানা যাক।
যেকোনো গেমেই এক মুহূর্তের সিদ্ধান্তে বদলে যেতে পারে জয়-পরাজয়ের ব্যবধান। তাই ইনপুট ল্যাগ যত কম হবে, তত ভালো। আধুনিক টিভিগুলো এখন ৫ মিলিসেকেন্ডের কম ইনপুট ল্যাগে প্রতিক্রিয়া জানায়, যা প্রায় রিয়েল-টাইম পারফরম্যান্স নিশ্চিত করে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হাই রিফ্রেশিং রেট—১২০ হার্টজ থেকে ২৪০ হার্টজ পর্যন্ত। ওএলইডি মডেলের টিভিগুলোতে বর্তমানে পাওয়া যায় ১৬৫ হার্টজ রিফ্রেশিং রেট, যা দ্রুতগতির অ্যাকশন গেমে প্রতিটি মুভমেন্টকে করে তোলে স্মুথ ও ন্যাচারাল। আর নিওকিউএলইডি এইটকে মডেলের ২৪০ হার্টজ রিফ্রেশিং রেট গেমিংয়ের গতিকে করে তোলে আরও দুর্দান্ত।
সেই সঙ্গে গেম খেলতে গিয়ে অনেক সময় দেখা যায় স্ক্রিনে টিয়ারিং সমস্যা। এএমডি ফ্রিসিঙ্ক প্রিমিয়াম প্রো প্রযুক্তি এনেছে এই সমস্যার কার্যকর সমাধানে। কারণ, এটি গেমের ফ্রেম রেট ও টিভির রিফ্রেশিং রেটের মধ্যে পারফেক্ট ব্যালান্স বজায় রাখে। ফলে কোনো ঝাঁকুনি বা কাঁপুনি ছাড়া দৃশ্যগুলো হয়ে ওঠে ন্যাচারাল ও চোখের জন্য আরামদায়ক। এইচডিআর গেমিংয়ের সময় কালার ও লাইটিংয়ের ভারসাম্যও এই প্রযুক্তি নিজে থেকেই ঠিক করে নেয়।
এআই অটো গেম মোড প্রযুক্তি গেমিংকে করে তুলেছে আরও সহজ। এই প্রযুক্তির সহায়তায় টিভি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বুঝে নেয় আপনি কী ধরনের গেম খেলছেন—রেসিং, অ্যাডভেঞ্চার নাকি স্পোর্টস এবং সে অনুযায়ী ছবির লাইটিং, সাউন্ড, কনট্রাস্ট সবকিছু নিজে থেকেই অপটিমাইজ করে দেয়। পাশাপাশি ‘গেম বার’ ফিচারের মাধ্যমে এক স্থানেই ইনপুট ল্যাগ, ফ্রেমিং রেট বা অ্যাসপেক্ট রেশিও দেখা ও নিয়ন্ত্রণ করা যায়, যা কম্পিটিটিভ গেমারদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
এ ছাড়া সুপার আল্ট্রাওয়াইড গেমভিউ ফিচারের মাধ্যমে ২১:৯ বা ৩২:৯ অনুপাতে স্ক্রিন বাড়িয়ে নেওয়া যায়, যা গেমে স্ক্রিন ভিউকে ওয়াইড করে তুলতে পারে। এতে প্রতিপক্ষের অবস্থান বা লুকানো অংশ খুঁজে পাওয়া যায় সহজে। আবার ‘মিনিম্যাপ জুম’ ফিচারে গেমের নির্দিষ্ট অংশে জুম করা যায়, যা কৌশল নির্ধারণে সহায়ক। পাশাপাশি ওবজেক্ট ট্র্যাকিং সাউন্ড বা ওটিএস প্রযুক্তি গেমের সাউন্ডকে স্ক্রিনের দিক অনুযায়ী ভেসে আসার অনুভূতি দেয়, যেন গেমার নিজেই ‘যুদ্ধক্ষেত্রে’র মধ্যে আছেন। এতে মিলছে বাস্তবে খেলার মতো একটি অনুভূতি।
গেমিং টিভিগুলোর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো গেম মোশন প্লাস ও এইচজিআইজি মোড। গেম মোশন প্লাস দ্রুতগতির দৃশ্যেও ব্লার কমিয়ে দেয়, ফলে রেসিং বা অ্যাকশন গেমে প্রতিটি মুহূর্ত দেখা যায় স্পষ্টভাবে। আর এইচজিআইজি মোড এইচডিআর গেমিংয়ের আলো–ছায়ার সঠিক টোন-ম্যাপিং নিশ্চিত করে, যাতে ভিউগুলোকে ঠিক বাস্তবের মতো মনে হয়।
ওএলইডি টিভিগুলো পারফেক্ট কালার এবং ডিপ কনট্রাস্ট প্রতিটি ফ্রেমকে করে তোলে বাস্তবের মতো প্রাণবন্ত। অন্যদিকে কিউলেড টিভিগুলোর ভিজ্যুয়াল দীর্ঘ সময় গেম খেলার পরও চোখে আরাম দেয়। আর এই উন্নত ফিচারগুলোর সমন্বয়ে অনেক স্মার্ট টিভি পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। যেমন স্যামসাংয়ের ২০২৫ সালের ওএলইডি, নিওকিউএলইডি, কিউএলইডি টিভি লাইনআপ গেমিং পারফরম্যান্সে একটি নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে, যেখানে গতি, ভিজ্যুয়াল, সাউন্ড এবং প্রযুক্তি একসঙ্গে কাজ করে তৈরি করছে অসাধারণ এক গেমিং এক্সপেরিয়েন্স। যেখানে প্রতিটি মুহূর্তের দ্রুত প্রতিক্রিয়া, স্পষ্ট ভিজ্যুয়াল ও লাইভ সাউন্ড গেমারদের ভার্চ্যুয়াল জগৎ থেকে নিয়ে যায় বাস্তব দুনিয়ায়।
তাই গেমিংয়ের জন্য টিভি কেনার সময় শুধু স্ক্রিন সাইজ নয়, এসব গুরুত্বপূর্ণ ফিচারের দিকেও নজর দিন। কারণ, সঠিক টেকনোলজি থাকলে আপনার গেমিং হবে আরও রোমাঞ্চকর।