
২০২৫–২৬ অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটে যে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তার প্রায় ৩৫ ভাগই সুদ এবং আমলাতন্ত্রের পেছনে চলে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন কবি, লেখক ও চিন্তক ফরহাদ মজহার।
এই লেখক বলেন, ‘বাজেটের ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা দিয়ে দিচ্ছি সুদ এবং আমলাতন্ত্রকে পোষার জন্য। এই আমলাতন্ত্র উৎপাদনে, অর্থনীতিতে কোনো অবদান রাখে না, উল্টো বাধা দেয়। বাজারব্যবস্থার স্বতঃস্ফূর্ত গতিশীলতাকে ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ঢোকার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। সেই আমলাতন্ত্রের খরচের সঙ্গে সুদের পরিমাণ যোগ করলে বাজেটের প্রায় ৩৫ ভাগ টাকা দিয়ে দিতে হচ্ছে।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড পিস স্টাডিজ আয়োজিত বাজেট সংলাপ ২০২৫-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফরহাদ মজহার এ কথাগুলো বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর কালোটাকা সাদা হয় কোন যুক্তিতে, প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, কালোটাকাকে সাদা করার সুযোগ বন্ধ করতে হবে। গণ–অভ্যুত্থানের পর এই সুযোগ রাখার কোনো যুক্তি নেই।
ফরহাদ মজহার বলেন, এই সরকার সেই অর্থে ক্ষমতাধর সরকার নয়। ফলে অনেক জিনিস চাইলেই তারা করতে পারবে না। তাই এই সরকারের কাছ থেকে বড় কোনো বাজেট প্রত্যাশা করা হয়নি। বেশি কিছু আশা করাও ঠিক হবে না।
সেনাবাহিনীর জন্য, জাতীয় প্রতিরক্ষার জন্য কীভাবে, কত টাকা খরচ করা হচ্ছে বাজেটে তার কোনো স্পষ্ট উল্লেখ নেই বলে জানান ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, ‘আমাদের এদিকে মিয়ানমার, ওদিকে ভারত। তার মধ্যে যদি টিকে থাকতে চাই, তাহলে অবশ্যই আমাদের জাতীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। আর তা করতে হলে এর জন্য খরচ আছে। এটি হলো ন্যায্য খরচ। সেই খরচ কীভাবে, কার কাছে থেকে তুলব, কে দিবে? সীমান্তে ভারত বা মিয়ানমার আক্রমণ করলে কী করে নিজেকে রক্ষা করব? কিন্তু বাজেটে বলা নেই, কী করে সেই নিরাপত্তা পাচ্ছি। এই যে খরচটা কোথায় কী জন্য করছি, সেটি লুকিয়ে রাখা হয়। এটি খারাপ লক্ষণ।’
অধ্যাপক ইউনূসের থ্রি জিরো তত্ত্ব নিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘ড. ইউনূস কিন্তু অর্থনীতিতে নোবেল পাননি, পেয়েছেন শান্তিতে। এই বাজেটে তারা বলছে থ্রি জিরো তত্ত্ব বাস্তবায়ন করবে। এটার জন্য তো আমরা গণ–অভ্যুত্থান করিনি। এটা যদি বাজেটে ঢোকান, তাহলে তিনি (অধ্যাপক ইউনূস) অসম্মানিত হবেন।’
অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ফ্যাসিস্ট রেজিমের কাঠামোর ওপরে ঘষামাজা করেই অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। বাজেট প্রণয়নে অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত হলেও সেটি করা হয়নি। যৌক্তিক বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করেই বাজেট চূড়ান্ত করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
বাজেটে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন এই জামায়াত নেতা।
নিউ নেশন পত্রিকার সাবেক সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদারের সভাপতিত্বে এবং সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড পিস স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক সাদেক রহমানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন কলামিস্ট ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মিজানুর রহমান, প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দেওয়ান মো. সাজ্জাদ, এফবিসিসিআই পরিচালক হাজী মো. এনায়েত উল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।