জব্দ করার পরে পাখি
জব্দ করার পরে পাখি

৩৬টি পাখির ১১টি মারা গেছে চিড়িয়াখানায়, দুই বছর পর পাচার ঠেকাতে রেড অ্যালার্ট জারি

দুই বছর আগে সাইপ্রাস থেকে ৩৬টি পাখি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনা হয়। এর মধ্যে ৩১টি পাখি ছিল বিশ্বজুড়ে বিক্রিনিষিদ্ধ।

পাখিগুলো আটক করে দেওয়া হয় জাতীয় চিড়িয়াখানায়। সেখানে ১১টি পাখির মৃত্যু হয়। আদালতের সিদ্ধান্ত পেয়ে গত ২০ এপ্রিল জীবিত ২৫টি পাখি নিজের জিম্মায় পান আমদানিকারক।

এখন পাখিগুলো উদ্ধারে তৎপর হয়েছে বন অধিদপ্তর। এসব পাখি যেন পাচার হতে না পারে, সে জন্য বন অধিদপ্তর গত ৩০ আগস্ট সারা দেশের সীমান্ত এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। পাখিগুলো ফেরত দিতে আমদানিকারককে দুই দফায় চিঠিও দেওয়া হয়েছে। তবে আমদানিকারক বলছেন, তাঁর জিম্মায় নেওয়ার পর আরও ১৫টি পাখির মৃত্যু হয়েছে। তাঁর এ দাবি সত্য হলে ৩৬টি পাখির মধ্যে এখন মাত্র ১০টি পাখি জীবিত আছে।

পাখিগুলো আমদানি করেছিলেন মেসার্স কাশবী এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক কিশোর মিত্র ওঝা। তিনি পাখিগুলো ‘লাইভ বার্ড’ ঘোষণা দিয়ে সাইপ্রাস থেকে এনেছিলেন।

এসব পাখির মধ্যে ছিল

  • ফেস্টিভ অ্যামাজন

  • ইলেকটাস প্যারট

  • রেড ফ্রন্টেড ম্যাকাউ

  • রেড টেইলড ব্ল্যাক কোকাটো

  • গোল্ডেন প্যারাকিট

  • ব্লু থ্রোটেড ম্যাকাউ

  • মিলিটারি ম্যাকাউ

  • হেয়াসিনথ ম্যাকাউ

  • স্কারলেট ম্যাকাউ

  • রুবালিনা ম্যাকাউ

  • রেড অ্যান্ড গ্রিন ম্যাকাউ

এগুলো সর্বনিম্ন ২–৩ লাখ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২২ লাখ টাকা দামের পাখি ছিল বলে জানান কিশোর মিত্র ওঝা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিমানবন্দরে জব্দ করার পর পাখিগুলো জাতীয় চিড়িয়াখানায় রাখা হয়েছিল। আদালতের আদেশে সেখান থেকে যখন ২৫টি পাখি হাতে পাই, তখনই দেখি বেশির ভাগেরই শারীরিক অবস্থা খারাপ। চিড়িয়াখানায় ১১টি মারা যাওয়ার পর আমার কাছে আরও ১৫টি পাখি মারা গেছে। এখন আছে ১০টি।’

জব্দ করার পরে পাখি

আমদানি করা ৩১টি পাখিই ছিল বিশ্বব্যাপী বন্য প্রাণী আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণকারী আন্তর্জাতিক চুক্তি ‘দ্য কনভেনশন অন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইন এনডেঞ্জারড স্পেসিস অব উয়াইল্ড ফাউনা অ্যান্ড ফ্লোরা (সিআইটিইএস)’ অনুযায়ী বাণিজ্যনিষিদ্ধ বন্য প্রাণীর তালিকাভুক্ত। সিআইটিইএস সনদের শর্ত অনুযায়ী, পাখিগুলো যে দেশ থেকে আমদানি করা হয়েছিল, সেখানে ফেরত পাঠানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

বিমানবন্দরে জব্দ করার পর পাখিগুলো জাতীয় চিড়িয়াখানায় রাখা হয়েছিল। আদালতের আদেশে সেখান থেকে যখন ২৫টি পাখি হাতে পাই, তখনই দেখি বেশির ভাগেরই শারীরিক অবস্থা খারাপ। চিড়িয়াখানায় ১১টি মারা যাওয়ার পর আমার কাছে আরও ১৫টি পাখি মারা গেছে। এখন আছে ১০টি
কিশোর মিত্র ওঝা, আমাদানিকারি প্রতিষ্ঠানের মালিক

প্রায় দুই বছর পর পাখি উদ্ধারে বন অধিদপ্তরের তোড়জোড়

ঘটনার পর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জব্দ করা পাখিগুলো জাতীয় চিড়িয়াখানায় পাঠানোর নির্দেশ দেয়। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান জব্দ করা পাখিগুলো তাদের কাছে হস্তান্তর করার জন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষ, বন বিভাগ ও সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট করে।

গত ১৬ এপ্রিল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান শুল্ক করাদি বাবদ ৮ লাখ ৮৪ হাজার ৯৩৭ টাকা পরিশোধ করার পর তাদের কাছে পাখিগুলো হস্তান্তরের আদেশ দেন আদালত।

কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জব্দ করা পাখিগুলো জাতীয় চিড়িয়াখানায় পাঠানোর নির্দেশ দেয়

পরে ১৩ জুলাই কাস্টম হাউসের কমিশনারের পক্ষে ডেপুটি কমিশনার মনোয়ারা আক্তার বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালকের কাছে পাখিগুলো আমদানিকারককে হস্তান্তর করতে বলেন।

এক সপ্তাহের মাথায় আমদানিকারককে জীবিত থাকা ২৫টি পাখি বুঝিয়ে দেয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।

এরপর পাখিগুলো সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য চারজন কর্মকর্তা–কর্মচারীকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত ২৪ জুলাই পর্যবেক্ষণের জন্য দায়িত্ব পাওয়া কর্মকর্তারা আমদানিকারকের কাছে সরাসরি পাখি দেখতে চাইলে মাত্র চারটি পাখি দেখান বলে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ের রেড অ্যালার্ট জারি করা–সংক্রান্ত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

৩০ আগস্ট বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা শারমীন আক্তারের সই করা চিঠিতে সরাসরি সব পাখি দেখাতে না পারার বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে, পাখিগুলো চোরাই পথে সীমান্ত এলাকা ব্যবহার করে অন্য কোনো দেশে পাচার হয়ে যেতে পারে।

এর মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগের ১৬ এপ্রিলের আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল বন অধিদপ্তর। আপিল বিভাগ তা আমলে নিয়ে ১ সেপ্টেম্বর এক অন্তর্বর্তী আদেশে আমদানিকারকের প্রতি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পাখিগুলো প্রধান বন সংরক্ষকের দপ্তরে হস্তান্তরের জন্য নির্দেশনা দেন।

পাখিগুলো জব্দ করাসহ সবকিছু তো আমি নিজেই করেছি। নিয়ম মেনে সাধ্যমতোই সব করার চেষ্টা করছি
শারমীন আক্তার, তৎকালীন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা

এরপর ২১ সেপ্টেম্বর বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের এক নোটিশে আমদানিকারককে পাখিগুলো বন অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করতে বলা হয় বলে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা শারমীন আক্তার জানিয়েছেন।

হয়রানি করার অভিযোগ কিশোর মিত্র ওঝার

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ গত বছরের অক্টোবর মাসে কিশোর মিত্র ওঝার প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ও সনদ বাতিল করে। এখন পাখিগুলো নিয়ে কিছুদিন ধরে তাঁকে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন কিশোর মিত্র ওঝা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে আমি পাখি পাচারকারী, দেশ থেকে পালিয়েছি এ ধরনের তথ্য দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিডিয়া ট্রায়াল চলছে, অথচ প্রথম আলো ছাড়া আর কেউ আমার সঙ্গে কথাই বলেনি। পাখি হস্তান্তর–সংক্রান্ত আদালতের আদেশের সত্যায়িত কপি এখনো আমি হাতে পাইনি। কপি পেলে আমি রিভিউ করব। অথচ তার আগেই আমাকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।’

বন অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মাত্র চারটি পাখি দেখাতে পেরেছেন, এ অভিযোগ প্রসঙ্গে কিশোর মিত্র ওঝা প্রথম আলোকে বলেন, চারটি পাখি সরাসরি এবং বাকিগুলো ঢাকার বাইরে রাখায় ভিডিও কলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দেখিয়েছেন। চিড়িয়াখানা থেকে ২৫টি পাখি পাওয়ার পর ১৫টি পাখি মারা গেছে বলে দাবি করেন তিনি।

পাখিগুলো বিমানবন্দরে পৌঁছায় ২০২৩ সালের ৩০ আগস্ট রাতে

ঘটনার শুরু যেভাবে

পাখিগুলো বিমানবন্দরে পৌঁছায় ২০২৩ সালের ৩০ আগস্ট রাতে। পরদিন বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ অফিসার সনাতন কুমার ‘ভেরিফাই অ্যান্ড ফাউন্ড ওকে’ লিখে দেন। তারপরই শুরু হয় জটিলতা।

বছরটির ২ সেপ্টেম্বর কাস্টম হাউসের উদ্যোগে লাইভ বার্ডের সঠিক প্রজাতি নির্ধারণে নমুনা পুনঃপরীক্ষা করা হয়। এ–বিষয়ক প্রতিবেদন দাখিলের সময় বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের বন্য প্রাণী পরিদর্শক আবদুল্লাহ আস সাদিক জানান, ওই বছরের ৩০ আগস্ট বিকেল চারটায় বন সংরক্ষকের মৌখিক নির্দেশে এবং বিভাগীয় বন কর্মকর্তার টেলিফোন পেয়ে পোষা পাখির একটি চালান পরীক্ষার জন্য বিমানবন্দরে রওনা হন। কিন্তু পরে তিনি জানতে পারেন, চালানটি পরদিন ভোরে আসবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে তিনি পরদিন ভোরে বিমানবন্দরে যান। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এবং আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিকেল চারটা পর্যন্ত তাঁকে কিছুই জানাননি।

বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিষয়টি জানতে চাইলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানায়, বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের ফরেস্টার, রেঞ্জ অফিসার সনাতন কুমার এই চালানসহ অন্য একটি চালানে (৩৬টি পাখি) ‘ভেরিফাই অ্যান্ড ফাউন্ড ওকে’ লিখে মতামত দিয়ে গেছেন। এ বিষয়টি আবদুল্লাহ আস সাদিকের কাছে অসামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হলে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। তখন বন্য প্রাণী পরিদর্শক অসীম মল্লিককে বিমানবন্দরে পাঠানো হয় এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। পরে কাস্টম হাউসের কমিশনার এনওসি–বহির্ভূত পাখিগুলোর জন্য আমদানিকারককে ২ কোটি ৬২ লাখ ৩৩ হাজার ৪০৮ টাকা জরিমানা করেন। ২০২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক মো. ছানাউল্ল্যা পাটওয়ারী এক চিঠিতে পাখি আমদানিকারকসহ এ ধরনের কাজে যুক্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন।

এদিকে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও অনিয়মে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ সেপ্টেম্বর মহাখালীর বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ কার্যালয়ে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

২০২৩ সালে ঘটনার সময় বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শারমীন আক্তার। এরপর তাঁকে একটি প্রকল্পের উপ–প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে তিনি আবার বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ কার্যালয়ের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। ঘটনার দিন রেঞ্জ কর্মকর্তা সনাতন কুমারকে তিনিই বিমানবন্দরে পাঠিয়েছিলেন।

আবদুল্লাহ আস সাদিক বিমানবন্দরে দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় সনাতন কুমারকে পাঠানো, আমদানিকারকের হাতে পাখি হস্তান্তরের পর তৎপরতা বাড়ানোর পেছনে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ছিল বা আছে কি না, তা নিয়ে বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা প্রশ্ন তুলেছেন। তবে তাঁরা নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে ১৮ সেপ্টেম্বর শারমীন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার দিন বিমানবন্দরে কে ছিলেন, তা জানা ছিল না। কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টাও করেছিলাম। কাস্টমস থেকেও একজনকে পাঠানোর জন্য তাড়া দিচ্ছিল। তাড়াহুড়ো করেই সনাতন কুমারকে পাঠাতে হয়েছিল। তারপর পাখিগুলো জব্দ করাসহ সবকিছু তো আমি নিজেই করেছি। নিয়ম মেনে সাধ্যমতোই সব করার চেষ্টা করছি।’

দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে সাইপ্রাস থেকে বাংলাদেশে আসা, বিমানবন্দরে থাকা—সব মিলে পাখিগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছিল। পাখিগুলোর লালন–পালন বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। চিড়িয়াখানায় খাঁচার মধ্যে নিজেরাই মারামারি করাসহ বিভিন্ন কারণে পাখিগুলো মারা গেছে।
মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার, বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক

চিড়িয়াখানায় মারা যায় ১১টি পাখি

পাখিগুলোর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স কাশবী এন্টারপ্রাইজের মালিক কিশোর মিত্র ওঝা প্রথম আলোকে বলেন, চিড়িয়াখানায় থাকার সময়ই ৩৬টি পাখির মধ্যে ১১টি পাখি মারা যায়। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ ২০ এপ্রিল তাঁর কাছে ২৫টি পাখি হস্তান্তর করে।

চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বন অধিদপ্তরকে পাখি হস্তান্তরের জন্য প্রতিনিধি পাঠানোর অনুরোধ করে প্রথমে যে চিঠি পাঠিয়েছিল, তাতে ২১ এপ্রিলের কথা উল্লেখ ছিল। ফলে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। বন অধিদপ্তরকে পাশ কাটানোর জন্যই এমনটি করা হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে সাইপ্রাস থেকে বাংলাদেশে আসা, বিমানবন্দরে থাকা—সব মিলে পাখিগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছিল। পাখিগুলোর লালন–পালন বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। চিড়িয়াখানায় খাঁচার মধ্যে নিজেরাই মারামারি করাসহ বিভিন্ন কারণে পাখিগুলো মারা গেছে। ময়নাতদন্ত করা হয়েছে, আদালতে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

আমাদের পক্ষ থেকে লিভ টু আপিলটা আরও দ্রুত করলে পাখিগুলো উদ্ধার করা সহজ হতো
মো. আমির হোসাইন চৌধুরী, বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম আরও জানান, চিঠিতে তারিখ উল্লেখ করতে গিয়ে ২০ এপ্রিলের জায়গায় ২১ এপ্রিল লেখা হয়েছিল। তবে ২০ এপ্রিল ফোনে এবং পরে চিঠিতে সংশোধনী পাঠানো হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘পাখিগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে চিড়িয়াখানার ১৮ লাখ ৫৪ হাজার ৩৪৫ টাকা খরচ হয়েছিল। আমদানিকারক এ টাকা পরিশোধ করে পাখিগুলো নিয়ে গেছেন। আদালতের আদেশ মেনেই আমরা পাখিগুলো হস্তান্তর করেছি। বন বিভাগকে বিষয়টি জানিয়েছি বারবার। তখন কোনো দায়িত্ব পালন না করলেও পাখি হস্তান্তরের পর আমার ঘাড়ে দায় চাপানো হচ্ছে।’

পাখি মারা যাওয়াসহ এত দিন পর পাখি উদ্ধারে তৎপর হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমির হোসাইন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার শুরুতেই কাস্টমস কর্তৃপক্ষের ভুল হয়েছিল চিড়িয়াখানার কাছে পাখিগুলো হস্তান্তর করা। এরপর আদালতও আদেশ দিলেন চিড়িয়াখানা থেকে আমদানিকারকের কাছে পাখিগুলো হস্তান্তরের। বর্তমানে আদালতের আদেশ আমাদের পক্ষে এসেছে। তবে এটাও ঠিক, আমাদের পক্ষ থেকে লিভ টু আপিলটা আরও দ্রুত করলে পাখিগুলো উদ্ধার করা সহজ হতো।’