সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ক্র্যাব) কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করে সংগঠনটি। ২৭ ডিসেম্বর
সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ক্র্যাব) কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করে সংগঠনটি। ২৭ ডিসেম্বর

ক্র্যাবের মানববন্ধনে বক্তারা

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা গণতন্ত্র ও বাক্‌স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত

দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকায় হামলার মধ্য দিয়ে মতপ্রকাশ, বাক্‌স্বাধীনতা ও ভিন্নমতের কণ্ঠস্বরকে দমন করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই আক্রমণ সরাসরি গণতন্ত্রের ওপর আঘাত, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশের ধারণার ওপর আঘাত। এই দুর্বৃত্তদের ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেদিন উপস্থিত থাকলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেননি। এখন শুধু হামলাকারী নয়, নেপথ্যের উসকানিদাতা ও পরিকল্পনাকারীদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।

আজ শনিবার দুপুরে সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ক্র্যাব) কার্যালয়ের সামনে সংগঠনটির আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা এ কথা বলেন।

মানববন্ধনে প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, এই হামলা এমন এক সময়ে ঘটেছে, যখন দেশ একটি গণতান্ত্রিক উত্তরণের দিকে এগোচ্ছে। এটি সেই উত্তরণকে বাধাগ্রস্ত করার একটি প্রচেষ্টা। যদিও ঘটনার সব কারণ এখনো জানা যায়নি এবং অনেক অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হননি, তবু গণমাধ্যমের ওপর যে আঘাত হানা হয়েছে, তা স্পষ্ট। গণমাধ্যমের মূল কাজই হলো তর্ক ও মতপার্থক্য প্রকাশ করা; গণতন্ত্র মানেই ভিন্নমতকে সম্মান করা।

মানববন্ধনে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ। ২৭ ডিসেম্বর

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি আবু সালেহ আকন বলেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় দুটি দৈনিকের কার্যালয়ে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ শুধু দুটি গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ নয়; এটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, বাক্‌স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের ওপর সরাসরি আঘাত। পুলিশকে জানানো হলেও তারা কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। অতীতের ফ্যাসিবাদী আমলে সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন ও গণমাধ্যম বন্ধের বহু ঘটনার বিচার হয়নি। সাগর-রুনি হত্যাসহ অন্তত ৬৫ জন সাংবাদিক হত্যার বিচার আজও অধরা। অতীতে গণমাধ্যম বন্ধ এবং সাংবাদিকদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারার খেসারত আজ দিতে হচ্ছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। যতক্ষণ না দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত হচ্ছে, ততক্ষণ প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে হবে।

ডিআরইউর সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা বলেন, সংকটময় পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও সংবাদপত্রে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে কর্মরত সাংবাদিকদের পুড়িয়ে মারার লক্ষ্যেই এই হামলা চালানো হয়েছিল। শুধু এই দুটি পত্রিকায় নয়, যখন নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে যান, তাঁর ওপরও হামলা করা হয়। দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

ক্র্যাবের সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল বলেন, দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। এর আগেও গণমাধ্যমের ওপর হামলা হয়েছে, কিন্তু বারবার গণমাধ্যম ঘুরে দাঁড়িয়েছে, এবারও দাঁড়াবে। শুধু হামলাকারী নয়, নেপথ্যের উসকানিদাতা ও পরিকল্পনাকারীদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে। অবিলম্বে দায়ীদের গ্রেপ্তার না করলে এর দায় প্রশাসনকেই নিতে হবে।

মানববন্ধনটি ক্র্যাবের সাধারণ সম্পাদক এম এম বাদশাহর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয়। এতে আরও বক্তব্য দেন প্রথম আলোর উপসম্পাদক লাজ্জাত এনাব মহছি, ক্র্যাবের সাবেক সভাপতি মধুসূদন মণ্ডল, খায়রুজ্জামান কামাল, কামরুজ্জামান খান, ডিআরইউর সাবেক সহসভাপতি ওসমান গণি বাবুল, ক্র্যাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আরিফ, আসাদুজ্জামান বিকু, ক্র্যাবের সহসভাপতি উমর ফারুক আলহাদী, ডিআরইউর সাবেক যুগ্ম সম্পাদক নাদিয়া শারমিন, রিপোর্টার্স এগেইনস্ট করাপশনের (র‍্যাক) সভাপতি শাফি উদ্দিন আহমদ, ক্র্যাবের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নিহাল হাসনাইন, কার্যনির্বাহী সদস্য জিয়া খান, ক্র্যাবের সাবেক দপ্তর সম্পাদক ইসমাঈল হুসাইন ইমু, ক্র্যাবের সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য আমানুর রহমান রনি প্রমুখ।

বক্তারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং হামলার দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার ওপর জোর দেন।