এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান জুড়ে ছিল আনন্দ–উল্লাস আর উচ্ছ্বাস। কক্সবাজারের বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমিতে
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান জুড়ে ছিল আনন্দ–উল্লাস আর উচ্ছ্বাস। কক্সবাজারের বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমিতে

ভবিষ্যৎ গড়ার গল্প

১৭ আগস্ট ২০২৫, কক্সবাজার। শিখো-প্রথম আলো আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জেলার নানা প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীরা। কুতুবদিয়ার নাঈমুর রহমান ৮৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এসেছে। তার মুখে উচ্ছ্বাস, ‘পরীক্ষার পর এত আনন্দ পাইনি। এখানে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়ে খুব ভালো লাগছে।’

এ দৃশ্য নতুন নয়। বছরজুড়ে দেশের নানা প্রান্তের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকেরা যোগ দেন প্রথম আলোর নানা আয়োজনে—কখনো আগের দিন এসে, কখনো ভোরে রওনা দিয়ে।

১৯৯৮ সালে প্রকাশের পর থেকেই প্রথম আলো উপলব্ধি করে, কৃতী শিক্ষার্থীদের সাফল্য উদ্‌যাপনের বড় কোনো প্ল্যাটফর্ম নেই, আবার তাদের বিশ্বজয়ের পথেও সহায়তার ঘাটতি রয়েছে। সেই ভাবনা থেকেই শুরু হয় একের পর এক উদ্যোগ।

দেশজুড়ে সংবর্ধনা শেষে একদিন জানা যায়, নূর মোহাম্মদ শফিউল্লাহ স্থান পেয়েছেন ‘এমআইটি টেকনোলজি রিভিউস ইনভেন্টরস আন্ডার ৩৫’ তালিকায়। মাত্র ২৭ বছর বয়সে তিনি তালিকার সবচেয়ে তরুণ উদ্ভাবক। ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসবের গ্র্যাজুয়েট নূর ২০১১-১৪ সালে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের হয়ে অংশ নিয়ে একটি রৌপ্য ও দুটি ব্রোঞ্জপদক অর্জন করেন। এখন তিনি গৃহস্থালির সহায়ক রোবট উদ্ভাবনে কাজ করছেন।

রুবিকস কিউব মেলানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় গণিত উৎসব। রাজধানীর সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল প্রাঙ্গণে ‘ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো জাতীয় গণিত উত্সব ২০২৫’

গণিত উৎসবের মাধ্যমেই দেশের হাজারো কিশোর-কিশোরীর সামনে খুলেছে নতুন দিগন্ত। ২০১৮ সালে রোমানিয়ায় আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ প্রথম স্বর্ণপদক পায়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্জন—১টি সোনা, ৭টি রুপা, ৪০টি ব্রোঞ্জ ও ৪৭টি সম্মাননা। এই সাফল্য অনুপ্রেরণা হয়ে দেশে ১০টির বেশি বিষয়ে অলিম্পিয়াড আয়োজন হচ্ছে।

শুধু মেধার বিকাশ নয়, সমাজসচেতন প্রজন্ম গড়তেও কাজ করছে প্রথম আলো। স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াড তার উদাহরণ—যক্ষ্মা প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রতিবছর আনুমানিক ৩ লাখ ৭৯ হাজার মানুষ নতুন করে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন এবং ৪২ হাজারের বেশি মারা যান। আইসিডিডিআরবি ও ইউএসএআইডির সহযোগিতায় আয়োজিত এ উদ্যোগ বিশ্বজুড়ে প্রশংসা পেয়ে ২০২৫ সালের ইনমা গ্লোবাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে।

বিজ্ঞান, বিতর্ক, পরিবেশ ও প্রযুক্তিবিষয়ক উৎসবে লাখো শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে শিখছে ও ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি প্রথম আলো সম্মান জানায় সেই শিক্ষকদের, যাঁরা তাদের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন। ‘আইপিডিসি-প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা’র মাধ্যমে পাঁচ বছর ধরে দেশের অনন্য শিক্ষকদের স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে, যাঁরা নিষ্ঠা, নৈতিকতা ও ভালোবাসা দিয়ে শিক্ষার্থীদের জীবনে আলোকিত ছাপ রেখে যান।

শিক্ষাক্ষেত্র ছাড়াও দেশের উন্নয়নযাত্রায় ভূমিকা রাখা মানুষদের সম্মানিত করে প্রথম আলো। ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের স্বীকৃতি দিতে আয়োজন করা হয় ‘আইডিএলসি-প্রথম আলো এসএমই পুরস্কার’। দেশের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৮০ শতাংশ ও জিডিপির ২৬ শতাংশ আসে এই খাত থেকে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও তাঁরা নতুন উদ্ভাবন, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছেন।

একইভাবে দেশের কৃষকেরাও আজকের বাস্তব জীবনের বিজ্ঞানী। কৃষি খাতের অবদান ও সাফল্যকে আলাদা করে স্বীকৃতি ও উদ্‌যাপনের জন্য আয়োজন করা হয় সিটি গ্রুপ-প্রথম আলো কৃষি পুরস্কার। খেলাধুলার ক্ষেত্রে আছে সিটি গ্রুপ-প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কার, যা ২০০৫ সাল থেকে প্রতিবছর দেশের সেরা ক্রীড়াবিদদের সম্মান জানায়। এটি শুধু পুরস্কার নয়, ক্রীড়াবিদদের এক মিলনমেলা।

দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবলকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আয়োজন করা হয় ইস্পাহানি-প্রথম আলো আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল প্রতিযোগিতা। এটির জনপ্রিয়তা বোঝা যায় দর্শকের উপস্থিতি থেকে। ২০২৪ সালের ফাইনাল খেলার মাঠে ২০ হাজারের বেশি দর্শক হাজির ছিল।

প্রথম আলোর ইভেন্ট যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৯ সালে ‘মেরিল-প্রথম আলো তারকা পুরস্কার’ দিয়ে। সংস্কৃতি অঙ্গনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পুরস্কার হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠিত। পাঠক ভোটে নির্ধারিত সাতটি বিভাগ ও সমালোচক পুরস্কারের পাশাপাশি আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয় সংস্কৃতিজগতের মহিরুহদের।

মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার অনুষ্ঠানের শেষ পরিবেশনায় শাকিব খান ও প্রীতম হাসানের ‘লাগে উরাধুরা’ গান ও নৃত্যের সঙ্গে দুই উপস্থাপক আফরান নিশো ও তাসনিয়া ফারিণ

এ ছাড়া রয়েছে জিপিএইচ ইস্পাত-প্রথম আলো ইন জিনিয়াস, পুষ্টি-প্রথম আলো স্কুল বিতর্ক উৎসব, বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তা বিজ্ঞান উৎসব, মেরিল বেবি-বর্ণমেলা, প্রথম আলো-প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি কৃতী শিক্ষার্থী উৎসব, আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদ্‌যাপন, ইস্পাহানি পার্বণ নবান্ন উৎসব, ইউরোপিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, স্টারশিপ ইন্সপায়ারিং টেন এবং গ্রামীণফোন উঠান বৈঠক ইত্যাদি।

নানা আয়োজনে দেশবাসীর কাছে পৌঁছানোর মাধ্যমে প্রথম আলো আজ শুধু দেশের সবচেয়ে বড় সংবাদমাধ্যম নয়, বরং তা একাধারে কিশোর-তরুণদের জন্য সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচনকারী এবং নানা ক্ষেত্রের সফলদের সম্মানিত করা বড় প্ল্যাটফর্মও।

মুনির হাসান,সমন্বয়ক, যুব কার্যক্রম, প্রথম আলো