তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করে আনা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে ১৪ বছর আগে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল মঞ্জুর করে এ ব্যবস্থা পুনর্বহাল চাইলেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। শুনানিতে তিনি বলেছেন, পুনরুজ্জীবিত হলেও এটি মুহূর্তে কার্যকর সম্ভব নয়।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চে আজ মঙ্গলবার শুনানিতে এ কথা বলেন আইনজীবী শিশির মনির।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের ওপর আজ চতুর্থ দিনের মতো শুনানি হয়। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে শুনানি শুরু হয়। মাঝে বিরতি দিয়ে চলে সোয়া একটা পর্যন্ত। পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকাল বুধবার দিন রাখা হয়েছে। আপিলের ওপর ২১ অক্টোবর শুনানি শুরু হয়।
আইনজীবী শিশির মনির বলেছেন, আগামী নির্বাচন যেটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, এই নির্বাচন ত্রয়োদশ সংশোধনীতে উল্লেখিত যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা আছে, ওই ব্যবস্থায় হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না। এ-সংক্রান্ত সংবিধানের আগের ৫৮ অনুচ্ছেদে যে পরিস্থিতিতে পদ্ধতিটি প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে, সে পরিস্থিতি আপাতত নেই। আগের যে বিধান ছিল সংসদ ভেঙে যাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে—এই সরকার গঠিত হবে। সংসদ ভেঙে গেছে আরও এক বছরের বেশি সময় আগে। বর্তমানে কোনো সংসদ নেই, তাই সংসদ ভাঙারও প্রশ্ন আসে না।
শুনানিতে শিশির মনির আরও বলেন, বর্তমান পদ্ধতিতে অতীতের তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা কার্যকর করার আইনি কোনো বিধান বাংলাদেশে নেই। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্বাচন করার ম্যান্ডেট আছে। নতুন সংসদের সিদ্ধান্তে আগের তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা আগের মতো থেকে যায় অথবা জুলাই সনদে উল্লেখিত নতুন কোনো প্রক্রিয়া প্রবর্তন করা হলে সেই পদ্ধতিতে পরবর্তী সময় থেকে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা কার্যকর হবে।
আপিল মঞ্জুর করা উচিত, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহাল করা সমীচীন। তবে পর্যবেক্ষণ দেওয়া সমীচীন হবে না, যেহেতু বৃহত্তর সংস্কারপ্রক্রিয়া চলমান। জুলাই সনদ হয়েছে, আদেশ হবে, গণভোট হবে। পরবর্তী সংসদে এটি নিয়ে আলোচনা হবেমোহাম্মদ শিশির মনির, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের আইনজীবী
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার ধারণা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি অনন্য ধারণা, এটিকে কেন্দ্র করে দেশে একটি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল উল্লেখ করে শিশির মনির বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে পুনঃপ্রবর্তনের জন্য আজও সেই ঐকমত্য আছে। তত্ত্বাবধায়ক শাসনব্যবস্থা একটি গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়া, যেটি দেশে বারবার প্রমাণিত হয়েছে। আপিল মঞ্জুর করা উচিত, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহাল করা সমীচীন। তবে পর্যবেক্ষণ দেওয়া সমীচীন হবে না, যেহেতু বৃহত্তর সংস্কারপ্রক্রিয়া চলমান। জুলাই সনদ হয়েছে, আদেশ হবে, গণভোট হবে। পরবর্তী সংসদে—এটি নিয়ে আলোচনা হবে। এ জন্য সুনির্দিষ্ট পর্যবেক্ষণ থাকা সমীচীন হবে না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে ১৪ বছর আগে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে (৪: ৩) রায় দিয়েছিলেন। জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতার পরিবর্তনের পর ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন পৃথক আবেদন (রিভিউ) করেন। সেন্টার ফর ল গভর্ন্যান্স অ্যান্ড পলিসি নামের একটি সংগঠন ইন্টারভেনার (পক্ষ) হিসেবে যুক্ত হয়।
রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গত ২৭ আগস্ট লিভ মঞ্জুর (আপিলের অনুমতি) করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির এবং বিএনপির মহাসচিবের করা রিভিউ আবেদন থেকে উদ্ভূত আপিলের সঙ্গে অপর রিভিউ আবেদনগুলো শুনানির জন্য যুক্ত হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়। সে অনুসারে পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির করা আপিলের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের করা রিভিউসহ অপর রিভিউ আবেদন এবং বিএনপির মহাসচিবের আপিল শুনানির জন্য আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে।
পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির করা আপিলের ওপর ২১ অক্টোবর আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। এরপর ইন্টারভেনার হিসেবে যুক্ত সংগঠনের পক্ষে শুনানি করেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী। এরই ধারাবাহিকতায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন। শিশির মনিরের বক্তব্য উপস্থাপনের পর নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম বদরুদ্দোজা বাদল এবং এ এস এম শাহরিয়ার কবির শুনানিতে অংশ নেন।