জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগ আয়োজিত ‘অ্যাড্রেসিং ভায়োলেন্স: মেন্টাল ওয়েলনেস ফর বাংলাদেশি স্ট্রিট চিলড্রেন’ শীর্ষক সেমিনারে অতিথিরা। ২০ জুলাই ২০২৫।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগ আয়োজিত ‘অ্যাড্রেসিং ভায়োলেন্স: মেন্টাল ওয়েলনেস ফর বাংলাদেশি স্ট্রিট চিলড্রেন’ শীর্ষক সেমিনারে অতিথিরা। ২০ জুলাই ২০২৫।

পথশিশুদের ২৭ শতাংশের পিতা–মাতার পরিচয় নেই: গবেষণা

ঢাকা ও আশপাশ এলাকায় শত শত পথশিশু প্রতিদিন নানা ধরনের সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই শিশুদের মধ্যে ২৭ শতাংশের পিতা–মাতার পরিচয় নেই। শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন যেন তাদের জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। এসব চিত্র উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক হাসান রেজার সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।

রোববার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগ আয়োজিত ‘অ্যাড্রেসিং ভায়োলেন্স: মেন্টাল ওয়েলনেস ফর বাংলাদেশি স্ট্রিট চিলড্রেন’ শীর্ষক সেমিনারে এই গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. রেজাউল করিম।

হাসান রেজার গবেষণায় সদরঘাট, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনসহ ঢাকা ও আশপাশ এলাকায় বসবাসকারী পথশিশুদের শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে। প্রায় ছয় শতাধিক পথশিশুকে নমুনা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গবেষণা অনুযায়ী, ২৭ শতাংশ শিশুর পিতা–মাতার পরিচয় নেই। অনেক শিশুকে জোরপূর্বক বিভিন্ন নোংরা ও অমানবিক কাজ, যেমন ময়লা-আবর্জনা ও বমি পরিষ্কারের কাজ করতে বাধ্য করা হয়। এ ছাড়া শিশুদের যৌন হয়রানি ও গ্যাং রেপের (দলবদ্ধ ধর্ষণ) মতো ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঘটনাও উঠে এসেছে গবেষণায়।

হাসান রেজা বলেন, ‘এই শিশুদের নিয়েই আমি আমার ক্যারিয়ার গড়েছি, পিএইচডি করেছি, সহযোগী অধ্যাপক হয়েছি। কিন্তু এখনো তাদের জন্য কিছুই করতে পারিনি, সেই দায়বোধ থেকেই আমি গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি।’

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাদের বেড়ে ওঠার জন্য মা–বাবার ওপর কৃতজ্ঞ থাকা জরুরি। সামান্য কিছুর জন্য তাঁদের ওপর অকৃতজ্ঞ হওয়া যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এমন একটি সমাজ গড়তে পারি কি না, যেখানে সবাই সমান সুযোগ পাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা এখনো সেটা পারিনি। মাধ্যমিকে প্রায় ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে, যার পেছনে অর্থনৈতিক ও সামাজিক নানা কারণ রয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সামাজিকীকরণসহ নানা দিক বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন।’

পথশিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণা উপস্থাপন করেন ড. শরীফ হায়দার। একই সঙ্গে তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য মানসিক সুস্থতা বজায় রাখার কৌশল ও পরামর্শ দেন।

সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান মোস্তফা হাসানের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য দেন যুক্তরাজ্যের ওপেন ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি মেম্বার ও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. শরীফ হায়দার। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন বিভাগের অধ্যাপক মহসীন রেজা।