
গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫–এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন সরকার একটু তাড়াহুড়া করে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি জানান, এটিই চূড়ান্ত নয়। অংশীজনদের নিয়ে এই খসড়া অধ্যাদেশের ওপর আরও আলোচনা (কনসালটেশন) হতে পারে। তবে গুমবিষয়ক আইনটি একটু দ্রুত করতে চান বলে উল্লেখ করেন আইন উপদেষ্টা।
আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে অধ্যাপক আসিফ নজরুল এ কথাগুলো বলেন। গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে সরকারের গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন এবং জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) যৌথভাবে এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
২৮ আগস্ট ‘গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’–এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। প্রস্তাবিত আইনে গুম করার অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
গোলটেবিল বৈঠকে আইন উপদেষ্টা বলেন, খসড়া আইনটা নীতিগতভাবে একটু তাড়াহুড়া করে করা হয়েছে। কারণ, ৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস। তাঁরা এই দিবসের দিকে তাকিয়ে খসড়া অনুমোদন দিয়েছেন। এটা চূড়ান্ত আইন নয়। নীতিগতভাবে পাস হওয়ার পরও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দেড় থেকে দুই মাস কনসালটেশন (আলোচনা) হয়েছে। গুম আইন নিয়ে দুটি সভা (কনসালটেশন) করা হয়েছে। প্রয়োজন হলে আরেকটা কনসালটেশন করা হবে।
এই গোলটেবিল বৈঠকে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, বিচারের চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু সব প্রমাণ (এভিডেন্স) থাকার পরও অনেক বাধা থাকে। যে বাধার সঙ্গে সংগ্রাম করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
১৫ বছরের লড়াই দীর্ঘ ও ভয়াবহ ছিল উল্লেখ করে আদিলুর রহমান খান বলেন, অনেকে নির্যাতিত হয়েছিলেন, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। দুই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এর সমাধান হবে না বলে তিনি বিশ্বাস করেন। ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর ভাবতে পারেন আরও ট্রাইব্যুনালের প্রয়োজন আছে কি না, বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আবার ঘটা উচিত নয় বলে গোলটেবিল বৈঠকে উল্লেখ করেন ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান। তিনি বলেন, বিচারের চারটি পিলার রয়েছে। সেগুলো হলো সত্য জানা, বিচার করা, ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধ করা। প্রথম তিনটি পিলার নিশ্চিত করে পুনরাবৃত্তি রোধের বিষয়টি।
সরকার গুমের যে আইন করেছে, তা গুমের পুনরাবৃত্তি রোধে ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে হুমা খান বলেন, গুম আইনের খসড়ায় কিছু চ্যালেঞ্জ আছে।
কিছু বিষয় আছে, যার জন্য আইনের অপেক্ষার প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন হুমা খান। সরকার নির্বাহী আদেশে ভুক্তভোগীদের সাহায্য করতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গুমের শিকার যাঁরা ফিরে আসেননি, তাঁদের সম্পদ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রবেশাধিকার দেওয়া যেতে পারে। গুম থেকে ফিরে আসা অনেকের বিরুদ্ধে মামলা আছে, যার মধ্যে অনেক মামলা পাতানো। সেসব মামলা বাতিল করা যেতে পারে।
ভবিষ্যতে নির্বাচিত সরকার এলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত অপরাধ এবং গুম-খুনসহ আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে অগ্রসর হবে কি না, তা নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে গুমের ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করেন গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের প্রধান বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি অনুষ্ঠান সঞ্চালনাও করেন।
এই গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন গুমের শিকার বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর (লুনা), সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাসিনুর রহমান, মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম, ইউপিডিএফের সংগঠক মাইকেল চাকমা প্রমুখ।