Thank you for trying Sticky AMP!!

চবির মূল ফটকের সামনে আগুন ধরিয়ে শাখা ছাত্রলীগের একাংশের নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ

চবিতে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতদের অবরোধ, শাটলচালককে ‘অপহরণ’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে অবরোধ করেছেন শাখা ছাত্রলীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা। অবরোধের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস–পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। শাটল ট্রেনও বন্ধ রয়েছে। এই ট্রেনের চালককে অপহরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গতকাল রোববার রাতে চবি শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পরই পদবঞ্চিত নেতাদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পুরো ক্যাম্পাসে। রাতেই শুরু হয় ভাঙচুর, মারধর ও অবরোধ।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শাখা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে মোহাম্মদ ইলিয়াসের বহিষ্কার দাবি করছেন। একই সঙ্গে তাঁরা নতুন শাখা কমিটি গঠনের দাবি জানাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, শাখা কমিটিতে পদ পাওয়া নেতাদের নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

মূলত, এসব দাবিতেই চবির মূল ফটকে তালা দিয়ে অবরোধ করেন শাখা ছাত্রলীগের উপপক্ষ বিজয়ের একাংশের নেতা-কর্মীরা। দাবি না মানা পর্যন্ত ক্যাম্পাস অবরোধ অব্যাহত রাখবেন বলে তাঁরা ঘোষণা দিয়েছেন।

Also Read: ছাত্রলীগের ‘দাপুটে’ ১১ নেতারই ছাত্রত্ব নেই

শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও বিজয় উপপক্ষের নেতা আবু বকর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ইলিয়াসকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করতে হবে। ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন না—এমন অনেকেই পদ পেয়েছেন। তাঁদের বাদ দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করতে হবে। অন্যথায় ক্যাম্পাস অবরোধ চলবে।

চবির সহকারী প্রক্টর শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের পদ না পাওয়া নেতারা রাত থেকে ক্যাম্পাস অবরোধ করেন। আমরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি। যেহেতু তাঁদের দাবি রাজনৈতিক, তাই তা পূরণ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’

কক্ষ ভাঙচুর-মারধর

কমিটি ঘোষণার পর ছাত্রদের ৫টি আবাসিক হলের অন্তত ৪০টি কক্ষ ভাঙচুর করেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা।

এ সময় শাখা ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক সাহিল কবিরকে মারধর করা হয়। মারধরের শিকার সাহিল পরে চবির চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা নেন।

শাখা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, চবির আলাওল হলের অন্তত ১৫টি, এ এফ রহমানের ৫টি, সোহরাওয়ার্দীর ১৫টি, শাহজালালের ৪টি ও শাহ আমানতের ৬টি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে।

Also Read: চবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর ক্ষোভ, ফটকে তালা

শাটল বন্ধ, চালককে অপহরণ

নগরের বটতলী থেকে ক্যাম্পাসে দিনে সাতবার আসা–যাওয়া করে শাটল ট্রেন। এই ট্রেনে দৈনিক ১০ হাজার শিক্ষার্থী যাতায়াত করেন। কিন্তু অবরোধের কারণে এই ট্রেন বন্ধ রয়েছে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকালে শাটলের চালককে অপহরণ করেছে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। তাই শাটল চলাচল বন্ধ রয়েছে। চালক অপহরণের ঘটনা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক।’

ক্যাম্পাসে অচলাবস্থা

অবরোধের কারণে ক্যাম্পাসে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। চবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষক-কর্মচারীদের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে না এলে এমনিতেই ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত হবে। বর্তমান অবস্থায় পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।

ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক চৌধুরী আমির মোহাম্মদ মুছা প্রথম আলোকে বলেন, শাটল বন্ধ থাকলে পরীক্ষা হবে না। যেহেতু শাটল এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে, তাই পরীক্ষা না হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।

চবির মূল ফটকে তালা দিয়ে অবরোধ করছেন শাখা ছাত্রলীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা

৩৭৬ সদস্যের কমিটি

গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় ৩৭৬ সদস্যের চবি শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য এই কমিটি অনুমোদন দেন।

২০১৯ সালে ১৪ জুলাই রেজাউল হককে সভাপতি ও ইকবাল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে চবি শাখা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল।

দুটি পক্ষ

চবি শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে দুটি পক্ষে বিভক্ত। একটি পক্ষ চট্টগ্রাম সিটির সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী। আরেকটি পক্ষ সিটির সাবেক মেয়র ও চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসানের অনুসারী। আর নাছিরের অনুসারী সাধারণ সম্পাদক ইকবাল।

শাখা ছাত্রলীগের দুটি পক্ষের মধ্যে রয়েছে ১১টি উপপক্ষ। এগুলোর মধ্যে বিজয় ও চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি) মহিবুলের অনুসারী। বাকি ৯টি উপপক্ষ—ভার্সিটি এক্সপ্রেস, কনকর্ড, বাংলার মুখ, সিক্সটি নাইন, একাকার, রেড সিগন্যাল, উল্কা, এপিটাফ ও স্বাধীনতা নাছিরের অনুসারী।