মৌলভীবাজারে ১৯৯২ সাল থেকে মণিপুরি শাড়ি বানাচ্ছেন কারিগর রাধাবতী দেবী। সম্প্রতি বান্দরবান জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির উদ্যোগে কলাগাছের সুতা দিয়ে বানিয়েছেন ‘কলাবতী’ শাড়ি। এ শাড়ি বানিয়ে আলোচনায় এসেছেন তিনি। রাধাবতী দেবীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মানসুরা হোসাইন।

কলাবতী শাড়ি বানিয়ে তো প্রশংসায় ভাসছেন, কেমন লাগছে?
রাধাবতী দেবী: নামডাক তো হয়েছে। মনটাও খুব খুশি। শাড়ি বানানোর চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করেছিলাম। ১০ থেকে ১২ দিন লেগেছে শাড়িটি বানাতে।
কলাবতী শাড়ি বানাতে পারবেন, তা ভেবেছিলেন?
রাধাবতী দেবী: বান্দরবান গিয়েই প্রথম জানতে পারি কলাগাছ থেকে সুতা তৈরি করা যায়। এর আগে জীবনে কলাগাছের সুতা চোখে দেখিনি। কীভাবে শাড়ি করব? নকশার বইও নেই। তাই শাড়ি বানাতে হবে শুনে ভয়ে একটু দমেও যাই। পরে চেষ্টা করে ঠিকই ১৩ হাতের শাড়ি বানিয়ে ফেলেছি। বান্দরবানের ডিসি স্যার এই শাড়ির নাম দিয়েছেন কলাবতী শাড়ি। তবে এই শাড়ি নিয়ে আরও গবেষণা করা লাগবে।
এ শাড়ি বানাতে মজুরি কত পেয়েছেন?
রাধাবতী দেবী: বান্দরবানে ১৫ দিন কাজ করি। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ থানা থেকে বান্দরবান যাওয়া-আসা, থাকা-খাওয়া সব দিয়েছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক। একটি মুঠোফোনও কিনে দিয়েছেন। আর মজুরি দিয়েছেন ১৫ হাজার টাকা। শাড়ি বানিয়ে যা পেয়েছি, তাতেই আমি অনেক খুশি।
একটা কলাবতী শাড়ি বানালেন। আরও বানাবেন?
রাধাবতী দেবী: জেলা প্রশাসক স্যার আবার বান্দরবান যেতে বলেছেন। ঈদের পর আবার যাব। দেখি তিনি আর কয়টা শাড়ি বানাতে বলেন।
আপনার পরিবারে কে কে আছেন?
রাধাবতী দেবী: আমি বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছিলাম। কিছু বুঝতাম না। আর মনের সঙ্গে মেলেনি বলে তিন মাস পরেই স্বামীরে ডিভোর্স দিই। তারপর আর বিয়ে করিনি। মা–বাবা মারা গেছেন। ভাইবোন, কাকিদের সঙ্গে থাকি।
মণিপুরি শাড়ি বানানোর অভিজ্ঞতাটা একটু জানতে চাই।
রাধাবতী দেবী: নেভি ব্লু আর গোল্ডেন কালারের একটা ওড়না দেখিয়ে একজন জানতে চেয়েছিলেন এমন শাড়ি বানাতে পারব কি না। তারপর শাড়ি বানানো শুরু করলাম। আমি যখন কাজ শুরু করি, তখন এ শাড়ির তেমন কারিগর ছিলেন না। এখন তো অনেক কারিগর। ঘরে ঘরে তাঁত। মহাজনও আছে। এখন শাড়ির বিশেষ ফরমাশ থাকলে যত্ন করে একাই বানাই। অন্য সময় কারিগরেরাও সাহায্য করেন। মাসে গড়ে ১৫টি শাড়ি বিক্রি হয়। তবে বর্তমানে সুতার দাম খুব বাড়তি।
নিজের জন্য নিজের পছন্দমতো কোনো শাড়ি বানাননি?
রাধাবতী দেবী: আমি সব সময় জর্জেট শাড়ি পরি। নিজে ভালো শাড়ি পরলে অন্যরা কী ভাববে, তাই নিজের জন্য বানাইনি। তবে কখনো নিজের জন্য বানালে ক্রিম কালারের জমিনে বেগুনি বা গোলাপি পাড় দিয়ে শাড়ি বানানোর ইচ্ছা আছে।
মণিপুরি শাড়ি বানিয়ে যে আয় করেন, তা দিয়ে কী করেন?
রাধাবতী দেবী: অফিস, চৌকিদার আর কারিগরের বেতন দিতে হয়। আমি যাঁদের সঙ্গে থাকি, সাধ্যমতো তাঁদের জন্য কিছু টাকা ব্যয় করি। কিছু সঞ্চয়ও করি।
এর পরে কী করতে চান?
রাধাবতী দেবী: আমার বয়স ৬৫ বছর। গত ফেব্রুয়ারিতে দুই চোখের ছানি অপারেশন করিয়েছি। এখন চোখে ভালোই দেখি। সঞ্চয়ের টাকা আর একটু জমলে একটা প্রশিক্ষণকেন্দ্র খোলার ইচ্ছা আছে। সেখানে অন্যদের শাড়ি বানানো শেখাতে চাই। তবে প্রশিক্ষণকেন্দ্র খোলার মতো টাকাপয়সা এখনো জমাতে পারিনি।