নিহত ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম
নিহত ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম

স্বপ্নপূরণের দিনে শেষ উড়ান

প্রশিক্ষণের সব ধাপ শেষে তৌকির ইসলাম প্রথমবারের মতো একা বিমান চালাবেন—এই খবরে পরিবারের সদস্যরা গতকাল সোমবার সকাল থেকেই উচ্ছ্বসিত ছিলেন। কিন্তু দুপুরের পর সেই বিমান বিধ্বস্তের খবর পান তাঁরা। সঙ্গে সঙ্গে থেমে যায় সব উচ্ছ্বাস। বিকেলে রাজশাহী নগরের উপশহর এলাকায় তৌকিরদের বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালে কিছুক্ষণ পরপর কান্নার রোল ভেসে আসতে শোনা যায়।

বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান গতকাল দুপুরে রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়ে বৈমানিকসহ ২০ জন নিহতের (রাত ৮টা পর্যন্ত) তথ্য জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। নিহত ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের (সাগর) বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট এলাকায়। তবে তাঁদের পরিবার রাজশাহী নগরের উপশহর তিন নম্বর সেক্টরের আশ্রয় ভবন নামের একটি বাসায় ভাড়া থাকে। বাবা আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা করেন।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত পরিবারের সদস্যরা জানতেন না যে তৌকির ইসলাম মারা গেছেন। সে সময় জানতেন তৌকির ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন আছেন। বিমান বিধ্বস্তের পর চিকিৎসাধীন তৌকিরকে দেখতে পরিবারের সদস্যরা বিমানযোগে ঢাকা যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। তখন বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করা হয়। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তৌকির ইসলামের বাবা, মা, বোন ও ভগ্নিপতিকে বাড়ি থেকে রাজশাহী শাহ মখদুম বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁরা বিমানবাহিনীর বিশেষ হেলিকপ্টারে ঢাকায় রওনা হন।

তৌকির ইসলামের মৃত্যুর খবরের পর বিকেলে রাজশাহী নগরের উপশহর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষ ভিড় করছেন। সবাই স্বজনদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। এখনো বাসায় তৌকির ইসলামের নানা, নানি ও খালা রয়েছেন। কিছুক্ষণ পরপর কান্নার রোল ভেতর থেকে ভেসে আসছে। মামা মোতাকাব্বির বাইরে দাঁড়িয়ে কৌতূহলী মানুষ ও সাংবাদিকদের পরিবারের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করছেন।

মোতাকাব্বির বলেন, তৌকির ইসলাম রাজশাহীর ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। পরে পাবনা ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হন। ২০১৭ সালে তিনি চাকরিতে যোগদান করেন। এক বছর আগে তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকাকে বিয়ে করেন। তিনি আরও বলেন, তৌকিরের বাবা-মা ও বোন ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে তাঁর মৃত্যুর খবর জানতেন না। পরিবারের সদস্যরা জানতেন সাগর জীবিত ও চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

যান্ত্রিক ত্রুটির পর বিধ্বস্ত: আইএসপিআর

এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমানটি নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে গতকাল বেলা ১টা ৬ মিনিটে ঢাকার কুর্মিটোলার বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ঘাঁটি এ কে খন্দকার থেকে উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয় বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে।

আইএসপিআর বলেছে, ‘দুর্ঘটনা মোকাবিলায় এবং বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম বিমানটিকে ঘনবসতি এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিমানটি ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের দোতলা একটি ভবনে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়েছে।’

আইএসপিআর আরও জানিয়েছে, আহত সবাইকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারসহ অ্যাম্বুলেন্সের সহায়তায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) এবং নিকটস্থ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য দ্রুত স্থানান্তর করা হচ্ছে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনী গভীরভাবে মর্মাহত এবং হতাহতদের সর্বাত্মক চিকিৎসাসহ সার্বিক সহযোগিতায় তৎপর রয়েছে। বিমানবাহিনীর প্রধান সরকারি সফরে দেশের বাইরে থাকায় সহকারী বিমানবাহিনীর প্রধান (প্রশাসন), বিমানবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ও উদ্ধারকারী দল দুর্ঘটনাস্থলে যায়।

দুর্ঘটনার কারণ উদ্‌ঘাটনের জন্য বিমানবাহিনী ইতিমধ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।