
বাংলাদেশকে নারী ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য নিরাপদ করার দাবি জানিয়েছেন পাহাড়ি ছাত্র ও জনতা। খাগড়াছড়িতে অষ্টম শ্রেণির এক জুম্ম শিক্ষার্থীকে ধর্ষণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও গুলিতে ৩ জনকে হত্যার বিচার দাবি করেছেন তাঁরা।
আজ রোববার বিকেলে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এই দাবি জানানো হয়। ‘আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ‘আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’–এর সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।
সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, ‘পাহাড়ের মানুষেরা তাঁদের নারীদের নিরাপত্তা চেয়েছেন। ধর্ষণকারীদের বিচার চেয়েছেন। অপরাধীদের গ্রেপ্তার না করায় তাঁরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করেছেন। অথচ তাঁদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এই দাবি যদি অন্যায় হয়ে থাকে তবে আপনারা আইন করে ঘোষণা দেন যে পাহাড়ের জুম্ম জাতির নারীদের ধর্ষণ করলে কোনো অপরাধ হবে না। তাহলে আমরা আর প্রতিবাদ করব না। রাজপথে নামব না।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নিকোলাস চাকমা বলেন, ‘আমাদের হৃদয় যন্ত্রণায় ভরে গেছে। নারী, শিশুরা দিনের পর দিন ধর্ষিত হচ্ছে। আমরা বিচার পাচ্ছি না। খাগড়াছড়ির ওই ঘটনার পর থেকে এত দিন পেরিয়ে গেল, অথচ রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি পর্যন্ত দেওয়া হলো না। দেশে কি কোনো সরকার নেই? তারা কি জুম্ম মানুষদের কথা শুনতে পাচ্ছে না? নিরুপায় হয়ে যখন বিচারপ্রার্থী মানুষ প্রতিবাদ করছেন, তখন তাঁদের ওপর গুলি চালানো হচ্ছে। পাহাড়ের জুম্ম মানুষেরা কি এ দেশের নাগরিক নন, তাঁদের কি কোনো সাংবিধানিক অধিকার নেই? সরকার কোনো কথা বলছে না কেন?’
চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর বৈষম্যের অবসানের আশা করেছিলেন জানিয়ে আদিবাসী যুব ফোরামের সহসভাপতি টনি চিরান বলেন, ‘পাহাড় ও সমতলের মানুষের জানমালের একই রকম নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে; কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। এখন দেখা যাচ্ছে, অবস্থা বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের সময়ের চেয়েও খারাপ। জুম্ম নারীদের সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হচ্ছে। এর বিচার দাবি করায় খাগড়াছড়ির গুইমারা এলাকায় তাঁদের দোকান ও ঘরবাড়িতে হামলা করা হয়েছে।’
হিলম্যান ফেডারেশনের ঢাকা মহানগরের সম্পাদক রিয়া চাকমা বলেন, ‘পাহাড়ের মানুষেরা তাঁদের জীবন ও সম্ভ্রমের নিরাপত্তার জন্য মরিয়া হয়ে চিৎকার করছেন; কিন্তু তা সরকার কানে তুলছে না। সরকার কি বধির হয়ে গেছে? এই ধর্ষণ, হত্যা, নির্যাতন কি চোখে পড়ছে না, সরকার কি অন্ধ হয়ে গেছে?’
সংহতি জানিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেন, ‘খাগড়াছড়ির ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। পাহাড়ে আগুন জ্বলছে। সেখানে যে জুলুম হচ্ছে তার বিচার না হলে সেই জুলুম সমতলে নেমে আসবে। দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। পাহাড়ি–বাঙালি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছি। রাষ্ট্রকে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
সংহতি জানিয়ে সাংবাদিক এহসান মাহমুদ বলেন, অতীতে দেখা গেছে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সরকার তদন্ত কমিটি করে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস দেয়; কিন্তু পরে আর সেই বিচারের দৃষ্টান্ত দেখা যায় না। খাগড়াছড়ির ঘটনায় অবিলম্বে বিচার করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, বারবার পাহাড়ি জনগণের ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা হচ্ছে। নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে। এর প্রতিবাদ করলে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে দমন-পীড়ন করা হচ্ছে। গুলি চালানো হচ্ছে।
একই দেশে দুই ধরনের আইন চলছে অভিযোগ করে অনন্ত বলেন, ‘পাহাড়িদের জন্য এক আইন, সমতলের বাঙালিদের জন্য অন্য আইন। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আগে পাহাড়ি মানুষের জীবন, সম্পদ, সম্মানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফেডারেশনের নেতা মুক্তা বাড়ৈ, লিটন ত্রিপুরা, শান্তিময় চাকমা প্রমুখ। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল করে শাহবাগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর প্রদক্ষিণ করা হয়।