রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের স্থান দেখতে লোকজনের ভিড়
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের স্থান দেখতে লোকজনের ভিড়

বিমান বিধ্বস্তের স্থান দেখতে উৎসুক জনতার ভিড়

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের স্থানটি দেখতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ফটকে ভিড় করছেন উৎসুক জনতা। পাঁচ-সাত মিনিট পরপর ৮-১০ জন করে উৎসুক লোকজনকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সরেজমিন এ দৃশ্য দেখা যায়।

গত সোমবার বেলা সোয়া একটার দিকে কলেজের একটি ভবনে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার পর থেকে কলেজে উৎসুক মানুষের ভিড় লেগে আছে। তবে গত বুধবার ও গতকাল বৃহস্পতিবার উৎসুক লোকজনের প্রবেশ বন্ধ রেখেছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। ফলে উৎসুক লোকজন কলেজের প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়েছিল। গণমাধ্যমকর্মীদেরও প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

কলেজের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে উৎসুক লোকজনকে

তবে আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্কুলের সামনে গিয়ে এর ব্যতিক্রম দেখা যায়। কলেজের প্রধান ফটকে থাকা নিরাপত্তারক্ষীরা উৎসুক লোকজনকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছিলেন। তবে গণমাধ্যমকর্মীদের আজও কলেজের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

সরেজমিন দেখা যায়, গত কয়েক দিনের মতো কলেজের প্রধান ফটকের সামনে উৎসুক লোকজনের ভিড়। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা এসেছেন বিমান বিধ্বস্তের স্থানটি দেখতে।

কলেজের প্রধান ফটকে দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তারক্ষীরা ৫-৭ মিনিট পর পর ৮-১০ জন করে উৎসুক লোকজনকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছিলেন।

হাতে ক্যামেরা-বুম থাকা গণমাধ্যমকর্মীরা ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে তাঁদের বাধা দেওয়া হয়। নিরাপত্তারক্ষীরা বলছিলেন, ‘মিডিয়া ঢুকতে দেওয়া যাবে না। কর্তৃপক্ষের নিষেধ আছে।’

যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের স্থান দেখছেন লোকজন

প্রধান ফটকে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক ব্যক্তি প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণ মানুষকে আর কতক্ষণ আটকে রাখা যায়? কর্তৃপক্ষ আজ সকালে বলেছে, অল্প অল্প করে লোকজনকে ভেতরে প্রবেশের সুযোগ দিতে। তারা প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকে ৪ নম্বর ফটক দিয়ে বেরিয়ে যাবে। তবে মিডিয়াকে ঢুকতে দিতে নিষেধ করা হয়েছে।

উৎসুক জনতার একজন হিসেবে বেলা ১১টার দিকে কলেজের ভেতরে প্রবেশ করেন প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক। ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, দোতলা যে ভবনে বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে, সেটির সামনের খোলা জায়গা টিন দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। বেড়ার মাঝে ফটকের মতো বানানো আছে। সেই জায়গা দিয়ে লোকজন বিমান বিধ্বস্তের স্থানে যাচ্ছে। কেউ ছবি তুলছেন, কেউবা করছেন ভিডিও। স্থানটি দেখা শেষ হলে উৎসুক লোকজনকে দ্রুত চলে যেতে বলছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা।

যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের স্থান দেখে বেরিয়ে আসছেন লোকজন

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির বাইরে কথা হয় এরশাদ আলী নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি বিমান বিধ্বস্তের জায়গাটি দেখে তখন বাইরে বেরিয়ে এসেছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিল ছেলে আবদুর রহমান সিয়াম। তাঁদের বাসা আজিমপুর স্টাফ কোয়ার্টার বলে জানালেন।

এরশাদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ছেলে বিমান দুর্ঘটনার স্থান দেখতে চাইছিল। তাই এখানে আসা। বিমান বিধ্বস্তের জায়গা, পোড়া স্কুল ভবন—এগুলো দেখেছেন।

দেখা শেষে বাইরে বেরিয়ে আসার সময় অনেকেই নিজেদের পরিচিতদের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলছিলেন। ঘটনাস্থলের বিবরণ দিচ্ছিলেন তাঁরা।

বিকেলের দিকে উৎসুক জনতার ভিড় বাড়তে থাকে। শুরুতে তাঁদের বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবন দেখতে দেওয়া হলেও পরবর্তী সময়ে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিকেল ৫টা থেকে আর কাউকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। বিমান বিধ্বস্তের স্থান দেখতে আসা লোকজন তখন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ফটকের সামনে জড়ো হয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করেন। এ সময় ফটকে আঘাতও করেন তাঁরা। এরপর শিক্ষার্থীরা কলেজের ফটক থেকে কিছুটা দূরে রাস্তার ওপর একটি বাঁশ আড়াআড়ি করে ধরে রেখে উৎসুক জনতাকে আটকে রাখার চেষ্টা করেন।

স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ফেরা চ্যালেঞ্জিং

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলম আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই ঘটনাটা একটা অ্যাকসিডেন্ট ছিল। এটার পরবর্তী যে চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে, সেটা হচ্ছে আমাদের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরে যাওয়া। এটা আমার কাছে চ্যালেঞ্জিং মনে হচ্ছে। কারণ, আমার স্টুডেন্টরা বিশেষ করে এই ক্যাম্পাসের, তারা বেশ ট্রমাটাইজড (মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত), এ দুর্ঘটনা তাদের চোখের সামনে ঘটছে।’

এ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘আমরা কলেজ বেশ কয়েক দিন বন্ধ রেখেছি, যার ফলে শিক্ষা কার্যক্রমেও কিছুটা গ্যাপ (ছেদ) পড়ছে। সেই গ্যাপটা ফিলআপ করা একটা চ্যালেঞ্জ এবং তাদেরকে (শিক্ষার্থীদের) ক্লাসে শিক্ষামুখী করাটাও চ্যালেঞ্জিং হবে।’ সে জন্য শিক্ষার্থীদের আরও বেশি কাউন্সেলিং করাসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।