
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা মো. জোবায়েদ হোসেন হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আজ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ প্রাঙ্গণে জোবায়েদের জানাজার নামাজ শেষে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিজ্ঞান অনুষদ থেকে শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক, বাহাদুর শাহ পার্ক, শাঁখারীবাজার, জজকোর্ট হয়ে রায়সাহেব বাজার মোড় ঘুরে আবার ক্যাম্পাসে ফিরে আসে।
এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ‘প্রশাসনের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘আমার ভাই মৃত কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘জাস্টিস, জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘ফাঁসি, ফাঁসি, ফাঁসি চাই, খুনিদের ফাঁসি চাই’, ‘লেগেছে রে লেগেছে রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘জবিয়ানদের অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘আমার ভাই মৃত কেন, প্রশাসন জবাব চাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
জোবায়েদ হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ফাঁসি চেয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি এ কে এম রাকিব বলেন, ‘আমার ভাইকে খুন করার পর ২০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে, কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত আসামিদের গ্রেপ্তার দেখতে পাইনি। প্রশাসনের এমন উদাসীনতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। অতিদ্রুত জোবায়েদের খুনিদের গ্রেপ্তার করা হোক এবং আইনি ভিত্তিতে ফাঁসি দেওয়া হোক।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, ‘জোবায়েদ আমাদের সহযোদ্ধা ছিলেন। তাঁকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু গতকাল রোববার থেকে প্রতিটি কাজে প্রশাসনের উদাসীনতা দেখা গেছে। এখন পর্যন্ত প্রশাসন কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। দ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনানুগ বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’
শেষবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে জোবায়েদ
আজ অ্যাম্বুলেন্সে চড়ে শেষবারের মতো নিজ ক্যাম্পাসে এসেছিলেন নিথর মো. জোবায়েদ হোসেন। বেলা সোয়া দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের মাঠে তাঁর প্রথম জানাজার নামাজ সম্পন্ন হয়েছে।
জানাজার নামাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক–শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা–কর্মচারী, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্রিয় বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় অত্যন্ত আবেগঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
জানাজার আগে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জোবায়েদের মৃত্যুতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল পরিবার থেকে সমবেদনা জানাচ্ছি। এটি পরিকল্পিত একটি হত্যাকাণ্ড। এর আগে সাম্যকেও একইভাবে হত্যা করা হয়েছে। যেসব শিক্ষক আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য গত দিন লড়েছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা। আমরা বিশ্বাস করি, খুব দ্রুত আসামিরা গ্রেপ্তার হবে। আমরা জোবায়েদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, ‘গতকাল রাত থেকে আমরা প্রশাসনের অনেক গাফিলতি লক্ষ করেছি। আমরা যাতে আর গাফিলতি না দেখি। যদি কোনো প্রকার অনিয়ম করা হয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা কঠোর কর্মসূচি দেবে। জানাজার নামাজের পর আমরা আমাদের শিক্ষকসহ সবাই মিলে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রইছ উদদীন বলেন, ‘জোবায়েদের অকালে চলে যাওয়া আমরা মেনে নিতে পারছি না। তাঁর মাথায় আমি সমাবর্তনের গাউন তুলে দেওয়ার কথা, মাথায় ক্যাপ তুলে দেওয়ার কথা। কিন্তু তাঁর মৃতদেহ নিয়ে সামনে দাঁড়াতে হচ্ছে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে আমার শিক্ষার্থীর লাশ কেন সিঁড়িতে পড়ে থাকবে। আমরা হতাশ হয়েছি প্রশাসনের এমন আচরণে। জোবায়েদের পরিবার মামলা করার জন্য এসেছিল, পুলিশ তাদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে রেখেছে। এটার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’
উপাচার্য রেজাউল করিম বলেন, ‘আমার ছাত্র জোবায়েদকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে, যেটা মোটেও কাম্য নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, অতিদ্রুত অপরাধীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। জোবায়েদ অনেক ভালো ছেলে ছিল। মাঝেমধ্যে আমার রুমে আসত। তার মতো ছেলের শত্রুই হতে পারে না।’