
পার্বত্য চট্টগ্রামে বম জনগোষ্ঠীর ৫৯ সদস্যকে বিনা বিচারে বন্দী রাখা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ থাকলে হয় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ আনতে হবে, না হয় তাঁদের মুক্তি দিতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে লেখা একটি চিঠিতে এমন আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। চিঠিটি শুক্রবার সংস্থাটির ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বম জনগোষ্ঠীর আটক সদস্যদের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরার পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কিছু সুপারিশও করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টাকে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় চলমান সামরিক অভিযানের অংশ হিসেবে ২০২৪ সালের ৭ এপ্রিল থেকে বম জনগোষ্ঠীর ১৪২ সদস্যকে নির্বিচার গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের মধ্যে তিনটি শিশু। ১৮ মাসও পর তিন শিশুসহ ৫৯ জনকে বিনা বিচারে বন্দী করে রাখা হয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ৮০ জন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন উল্লেখ করে অ্যামনেস্টির চিঠিতে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে ২০২৪ সাল থেকে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের তিনজন হেফাজতে মারা গেছেন। এখনো যাঁরা বন্দী, তাঁরা গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের এপ্রিলে সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) বিরুদ্ধে দুটি ব্যাংকে ডাকাতি এবং এক ব্যাংকের ব্যবস্থাপককে জিম্মি করার অভিযোগের পর তদন্তের অংশ হিসেবে বিপুলসংখ্যক বম নাগরিককে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিবর্তনমূলক বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে। এতে বলা হয়েছে, এর সঙ্গে দণ্ডবিধির আওতায় ডাকাতি, অপহরণসহ আরও বেশ কিছু অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। যদিও ডাকাতির ঘটনায় একজনকে জড়িত থাকার দায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তথ্যপ্রমাণ ব্যবহার করা হয়নি।
চিঠিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ বম জনগোষ্ঠীর ৫৯ সদস্যকে স্বেচ্ছাচারীভাবে বন্দী করে রেখেছে। তাঁদের অন্যায্য ফৌজদারি ব্যবস্থা এবং বর্ণবৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সংস্থাটির আহ্বান—পর্যাপ্ত গ্রহণযোগ্য প্রমাণ থাকলে দ্রুত গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো ফৌজদারি অপরাধে অভিযোগ আনতে হবে অথবা তাঁদের মুক্তি দিতে হবে।
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে অ্যামনেস্টি আরও বলেছে, বন্দী থাকা ব্যক্তিদের জন্য পর্যাপ্ত আইনগত প্রতিনিধি এবং যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। গ্রেপ্তারের ভয় ছাড়াই তাঁদের সঙ্গে আত্মীয়স্বজনদের দেখা করার অনুমতি দিতে হবে। এ ছাড়া বম জনগোষ্ঠীর ওপর দমন–পীড়ন বন্ধ করতে হবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির মানবাধিকার–সংক্রান্ত সব ধারা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে।