শিল্পী শিশির ভট্টাচার্য্যের শিল্পকর্ম নিয়ে একক প্রদর্শনী ‘রেখাচিত্র’ ঘুরে দেখছেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী। গতকাল রাজধানীর লালমাটিয়ায় কলাকেন্দ্রে
শিল্পী শিশির ভট্টাচার্য্যের শিল্পকর্ম নিয়ে একক প্রদর্শনী ‘রেখাচিত্র’ ঘুরে দেখছেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী। গতকাল রাজধানীর লালমাটিয়ায় কলাকেন্দ্রে

এক ছবিতে অনেক ছবি

‘এক ছবিতে অনেক ছবি। তাতে অর্থ আছে, অনর্থও আছে। অনেক বিষয়। অনেক কিছু।’ শিল্পী শিশির ভট্টাচার্য্যের আঁকা ছবি নিয়ে প্রদর্শনীতে এ কথা বললেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী ও ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুন নবী। গতকাল শুক্রবার বিকেলে লালমাটিয়ার কলাকেন্দ্রে শিল্পী শিশির ভট্টাচার্য্যের ‘রেখাচিত্র’ নামের প্রদর্শনীর কাজগুলো দেখে তিনি এই মন্তব্য করেন।

শিশির ভট্টাচার্য্যের এই রেখাচিত্রগুলো ১৯৯০ থেকে শুরু করে চলতি বছর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ের। মোট ৯৪টি শিল্পকর্ম আছে প্রদর্শনীতে। এর মধ্যে দুটি ক্যানভাসে অ্যাক্রিলিকে করা। বাকিগুলো মার্কার বা কলম দিয়ে কাগজে আঁকা। প্রদর্শনী চলবে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকবে।

রেখাচিত্র শিল্পী শিশির ভট্টাচার্য্যের পঞ্চম একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী। এর আগের একক প্রদর্শনীটি হয় ২০১৩ সালে। তিনি শিল্পকর্ম এবং সমাজ ও রাজনীতিবিষয়ক কার্টুনের জন্য খ্যাতনামা। রেখাচিত্রে তিনি সমাজবাস্তবতা, প্রাণ, প্রকৃতি, পরিপার্শ্ব তাঁর নিজের আঙ্গিকে তুলে ধরেছেন। মাছ, ফুল, পাতা, লতাগুল্ম, পাখি, সূর্য, কীটপতঙ্গ, মানুষের মুখাবয়ব, হাতের পাঞ্জা, বিভিন্ন ধরনের প্রাণী থেকে শুরু করে হরেক রকমের যন্ত্রপাতি, জীবনযাপনের বহুবিধ উপকরণ ও অনুষঙ্গ অনায়াসে তুলে ধরেছেন তাঁর ছবিতে।

শিশির ভট্টাচার্য্যের দর্শক মাত্রই জানেন অঙ্কনের নৈপুণ্যে তিনি অনন্য। সাদা, হালকা আসমানি, বাদামি কাগজে তিনি এঁকেছেন তাঁর প্রিয় বিষয়–আশয়। একটা স্বপ্নের মতো পরিপ্রেক্ষিত সৃষ্টি হয় তাঁর এই আঁকায়। মানব–মানবীর মুখ হয়তো তাকিয়ে আছে সূর্যের দিকে। তার পাশেই ভাসছে মাছ, কিংবা স্রোতের মতো ভেসে যাচ্ছে অনেকগুলো চোখ। ঝরে পড়ছে বৃষ্টির ফোঁটা। ফুটে আছে ফুল। চুলের বদলে মাথা ভেদ করে গজাচ্ছে গাছপালা। আবার অনেক ক্রূর দৃশ্যও আছে। কাটা হাত-পা, কবন্ধ শরীর, আঙুলকাটা, কবজিকাটা হাত। হাতের অনেক রকমের ইঙ্গিতময় মুদ্রা, মুখের বিবিধ অনুভূতির অভিব্যক্তি, প্রকৃতির স্নিগ্ধতা ও নিসর্গের ওপর মানুষের বর্বর আক্রমণ এমন অনেক বিষয় তাঁর কাজে বারবার ঘুরেফিরে এসেছে।

প্রদর্শনীর কোনো আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ছিল না। শিল্পী রফিকুন নবী প্রদর্শনী দেখে বললেন, শিশির ভট্টাচার্য্য তাঁর প্রিয় ছাত্রদের একজন। শিশির অবলীলায় একেকটি ভিন্ন রকম বিষয়—যেমন মাছের সঙ্গে গরু, তার সঙ্গে মানুষ এমন অনেক কিছু পাশাপাশি এঁকে ফেলতে পারেন। সব মিলিয়ে এক ভিন্ন রকম ব্যঞ্জনা সৃষ্টি হয়। এই ছবিগুলো দেখে দর্শকেরা তাঁদের রুচি ও সৌন্দর্যবোধের সঙ্গে মিলিয়ে নিজের মতো করে উপলব্ধি করবেন।

শিশির ভট্টাচার্য্য বললেন, প্রদর্শনীর কাজ নিয়ে তাঁর নিজের বিশেষ কিছু বলার নেই। প্রায় এক যুগ পরে প্রদর্শনী হচ্ছে। বিভিন্ন সময়, ভিন্ন ধরনের পরিস্থিতিতে এই কাজগুলো করা। যা ভেবেছি, মনে হয়েছে, অনুভব করেছি, তা আঁকতে চেষ্টা করেছি। দর্শকেরা তাদের মতো করে অনুভব করে নেবেন।

এ সময় শিশির ভট্টাচার্য্যের পাশে ছিলেন তাঁর মেয়ে শ্রাবস্তী সুচন্দ্রিমা। কলাকেন্দ্রের পরিচালক শিল্পী ওয়াকিলুর রহমান দর্শকদের স্বাগত জানিয়ে বললেন, শিল্পীদের উদ্যোগে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান কলাকেন্দ্রের ১০ বছর চলছে। এটি তাদের ৭৫তম একক প্রদর্শনী। শিশির ভট্টাচার্য্য দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পীদের অন্যতম। এই প্রদর্শনী থেকে তাঁর দীর্ঘদিনের কাজগুলো দেখার সুযোগ পাবেন দর্শকেরা।