ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের স্মরণসভায় বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। আজ বুধবার মোজাফ্‌ফর আহমেদ চৌধুরী অডিটরিয়াম, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের স্মরণসভায় বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। আজ বুধবার মোজাফ্‌ফর আহমেদ চৌধুরী অডিটরিয়াম, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আরেফিন সিদ্দিকের স্মরণসভায় ঢাবি উপাচার্য

আমি বিশ্বাস করি, মানুষের দোয়া ও ভালোবাসায় চূড়ান্ত বিচারে তিনি উত্তীর্ণ হবেন

শ্রদ্ধা–ভালোবাসায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিককে স্মরণ করলেন তাঁর সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা। অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এই স্মরণসভার আয়োজন করেন।

আজ বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মোজাফ্‌ফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে এই স্মরণসভা হয়। সকাল ১০টায় স্মরণসভা শুরু হয়ে শেষ হয় বেলা দুইটার দিকে। সভায় অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের পরিবারের সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান, বিভিন্ন বিভাগের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষক এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রয়াত এই শিক্ষকের কথা বলতে গিয়ে তাঁদের অনেকে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। সহকর্মীরা প্রয়াত এই অধ্যাপকের প্রতি তাঁদের ভালোবাসার কথা উল্লেখ করেন।

অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক গত ১৩ মার্চ রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁকে স্মরণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ‘তিনি আপাদমস্তক একজন ভদ্রলোক ছিলেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষমতায় থেকে ক্ষমতা যখন থাকবে না এই চিন্তাটি করা অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ। এ কাজটি মূলত আরেফিন সিদ্দিক স্যার করেছিলেন।’ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ‘আমি আমার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়ে যাঁদের সঙ্গে পরামর্শ করতাম, তাঁদের মধ্যে তিনি ছিলেন। আমি বিশ্বাস করি, মানুষের দোয়া ও ভালোবাসায় চূড়ান্ত বিচারে তিনি উত্তীর্ণ হবেন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের স্মরণসভার শুরুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। আজ বুধবার মোজাফ্‌ফর আহমেদ চৌধুরী অডিটরিয়াম, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

স্মরণসভায় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামসুল হক বলেন, ‘আরেফিন স্যার উপাচার্য থাকাকালে কখনোই তাঁর চেয়ারের দায়িত্ব ভুলে যাননি। তবে উনি কখনোই কোনো কিছু কারও ওপর চাপিয়ে দেননি। আরেফিন স্যারের রাজনৈতিক মত দিয়ে তাঁকে মূল্যায়ন করা আমাদের জন্য দুঃখজনক। তিনি সব সময় রাজনীতির ঊর্ধ্বে গিয়ে কাজ করেছেন। কে নীল দল, কে সাদা দল, এটা তিনি দেখেননি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক আখতার সুলতানা বলেন, ‘সবাই এককথায় বলে আরেফিন সিদ্দিক স্যারের মতো লোক হয় না। তিনি ছিলেন আপাদমস্তক একজন ভদ্রলোক।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের স্মরণসভায় বক্তব্য দেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সাখাওয়াত আলী খান। আজ বুধবার মোজাফ্‌ফর আহমেদ চৌধুরী অডিটরিয়াম, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সাখাওয়াত আলী খান অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিককে স্মরণ করে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘আরেফিন সিদ্দিক এমন একজন মানুষ ছিলেন, যিনি প্রতিবছরের শিক্ষক দিবসে আমাকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানাতেন। আমার হয়তো মনেও থাকত না দিনটির কথা; কিন্তু তিনি কখনো এই কাজটা করতে ভুলে যাননি।’

এই বিভাগের বর্তমান অধ্যাপক মফিজুর রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘প্রতিটি পদেই এত স্মৃতি সারের সঙ্গে...এত মার্জিত জেন্টেলম্যান জীবনে খুব কমই দেখেছি। একজন ব্যক্তি আরেফিন সিদ্দিক একটা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলেন। আমরা স্যারকে অনেক ভালোবাসি।’ এই বিভাগের আরেক শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক খান বলেন, ‘শুদ্ধ থেকে শুদ্ধতর মানুষ হওয়ার শিক্ষা আমরা স্যারের কাছ থেকে পেয়েছিলাম।’

স্মরণসভায় এই বিভাগের আরেক অধ্যাপক আবুল মনসুর আহমেদ বলেন, ‘আরেফিন সিদ্দিক স্যার ছিলেন অসাধারণ একজন মানুষ। আমরা তাঁর স্মৃতি ধরে রাখতে চাই।’

মানবিক গুণাবলির জায়গায় তিনি অসাধারণ ছিলেন বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের পরিবারের সদস্য মেহরুবা সিদ্দিক। ‘তিনি সব সময় ছোট ছোট কাজেও আমাদের উৎসাহ দিতেন। যেকোনো পর্যায়ের মানুষের কথাকেই তিনি মূল্যায়ন করতেন,’ বলেন তিনি।