প্রথম আলো ট্রাস্টের আয়োজনে পরামর্শ সহায়তা সভায় মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মেখলা সরকার ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সরদার আতিক নানা পরামর্শ দেন। কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ২৭ সেপ্টেম্বর
প্রথম আলো ট্রাস্টের আয়োজনে পরামর্শ সহায়তা সভায় মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মেখলা সরকার ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সরদার আতিক নানা পরামর্শ দেন। কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ২৭ সেপ্টেম্বর

প্রথম আলো ট্রাস্টের পরামর্শ সভা

বয়ঃসন্ধি সন্তানদের চাওয়া বুঝে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হবে অভিভাবকদেরই

বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের আচরণের পরিবর্তন হয়, তারা একটু দূরত্ব চায়। এই বয়স শুরুর সঙ্গে সঙ্গে তাদের মনের যে পরিবর্তন, সে বিষয়ে অভিভাবকদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এ সময়ে অভিভাবকদের মূল দায়িত্ব হলো সঠিক পথ দেখানো। সন্তানকে বুঝতে হলে তাদের কথাগুলো অভিভাবকদের শোনা দরকার। সন্তানদের দিক থেকে তাদের চাওয়াগুলো বুঝে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হবে অভিভাবকদেরই।

‘আমাকে কেউ বোঝে না (মা-বাবার সঙ্গে সন্তানের মনের দূরত্ব)’ শীর্ষক পরামর্শ সহায়তা সভায় অভিভাবকদের প্রতি এসব পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে এই পরামর্শ সহায়তা সভার আয়োজন করা হয়।

প্রথম আলো ট্রাস্ট নিয়মিতভাবে মাদকবিরোধী ও মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ সভার আয়োজন করে থাকে। এটি ছিল ১৭২তম পরামর্শ সহায়তা সভা। সভায় মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মেখলা সরকার ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সরদার আতিক নানা পরামর্শ দেন। সভা সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।

সভায় সন্তান ও অভিভাবকদের কাছ থেকে সমস্যা ও নানা সংকটের কথা শোনেন দুই মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। তারপর এসব সমস্যায় মা-বাবা এবং সন্তানদের আচরণ কেমন হবে, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন পরামর্শ দেন।

সন্তানের সঙ্গে মা-বাবার মনের দূরত্ব কমানোর উপায় তুলে ধরে সভায় অধ্যাপক মেখলা সরকার বলেন, বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের আচরণের পরিবর্তন হয়, তারা একটু দূরত্ব চায়। নিজে যা চায়, সেই মত প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। নিজের মতামতকে সঠিক মনে করে। এই বয়সীদের মনের যে পরিবর্তন, সে বিষয়ে অভিভাবকদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। অভিভাবকদের মূল দায়িত্ব হলো সঠিক পথ দেখানো, সঠিকভাবে পরিচালিত হতে সহায়তা করা।

সঠিক কৌশলের মাধ্যমে মা-বাবার সঙ্গে সন্তানদের দূরত্ব কমানো সম্ভব উল্লেখ করে মেখলা সরকার বলেন, পৃথিবীর সব মা-বাবা অবশ্যই সব সময় তাঁর সন্তানের ভালোই চান। কিন্তু তিনি যে সন্তানদের ভালো চান সে ধারণাটি সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারছেন না বলেই সংকট তৈরি হচ্ছে। এখানে কৌশলটাই গুরুত্বপূর্ণ। আবার সন্তানদেরও মা-বাবার চাওয়াগুলো বুঝতে হবে।

সরদার আতিক বলেন, অভিভাবকদের তাঁর সন্তানকে বুঝতে হলে তাদের কথাগুলো শোনা দরকার এবং সেই শোনাটা হবে যেন সন্তানরা তাদের প্রয়োজনের কথা বা তার ইচ্ছার কথাটা বলতে পারে। অভিভাবকেরা তাঁর পূর্ব অভিজ্ঞতা দিয়ে সন্তানদের সতর্ক করতে পারেন, পরামর্শ দিতে পারেন। কিন্তু সবার আগে দরকার হচ্ছে সন্তানদের কথাটি শোনা।

সন্তানদের সঙ্গে মা-বাবার মনের দূরত্ব ঘোচানোর সহজ কোনো উপায় আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে  সরদার আতিক বলেন, ‘বাচ্চাদের যখন আমরা সত্যি কথাটা বলার সুযোগ দিই না তখন তারা মিথ্যা বলে। সে জন্য প্রথম কাজ হচ্ছে সন্তানদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ দূরত্ব রাখা যাবে না। তাদের কথা শুনতে হবে, তাদের চাওয়া বুঝতে হবে এবং তাদের সঠিক পরামর্শ দিতে হবে।’

সভায় অতিথিদের স্বাগত জানান প্রথম আলো ট্রাস্টের ট্রাস্টি ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘মাদককে না বলো’ এটা প্রথম আলোর অনেক পুরোনো কর্মসূচি। প্রথম আলো প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরপরই এটি গ্রহণ করা হয়। এর অধীনে নানা ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পরামর্শ সভা একটি। এর বাইরেও সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রথম আলোর বিশেষ সংখ্যা করা, স্কুলে স্কুলে যাওয়া, জনপদে জনপদে যাওয়া, বিভিন্নভাবে তরুণদের সম্পৃক্ত করে মাদকবিরোধী কনসার্ট করা হয়।

আনিসুল হক বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতার পাশাপাশি আমরা মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতেও এখন কাজ করছি।’