
পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পর আইনি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে ১৩ বছর পর এলএলবি সনদপ্রাপ্ত মুন্সী মহিউদ্দিন আহমেদকে ১৮ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ক্ষতিপূরণ চেয়ে তাঁর করা রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।
২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট করেন মহিউদ্দিন। সেখানে তিনি ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চান। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট একই বছর ২১ নভেম্বর দাবি করা ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান প্রশ্নে রুল দেন। রুলের শুনানি শেষে আজ রায় দেওয়া হয়।
রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এম শামসুল হক, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. সাইফুল ইসলাম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. আরিফ চৌধুরী।
নথিপত্র থেকে জানা যায়, মুন্সী মহিউদ্দিন আহমেদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত যশোরের শহীদ মশিউর রহমান কলেজ থেকে ১৯৮৫ সালের এলএলবি (শেষ বিভাগ) পরীক্ষায় অংশ নেন। ১৯৮৮ সালের মে মাসে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়, তাতে তিনি অনুত্তীর্ণ হন। এ অবস্থায় উত্তরপত্র আবার নিরীক্ষার জন্য তিনি আবেদন করেন। পরে একই বছর যশোরের আদালতে ঘোষণামূলক মামলা করেন মহিউদ্দিন। এ মামলায় ১৯৯০ সালের ১৯ আগস্ট যশোরের আদালত রায় দেন। রায়ে সাতটি পত্রের মধ্যে দ্বিতীয় পত্রের নম্বর ছাড়া অপর ছয়টি পত্রের মোট নম্বর গড় করে যে নম্বর হবে, সে হিসেবে দ্বিতীয় পত্রে প্রাপ্ত নম্বর গণ্য করে আবার তাঁর ক্ষেত্রে দুই মাসের মধ্যে ফলাফল ঘোষণা করতে নির্দেশ দেন। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যশোরের জেলা জজ আদালতে আপিল করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যশোরের অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত ১৯৯৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রায় দেন। এতে আগের রায় বহাল থাকে। এই রায়ের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টে আবেদন (সিভিল রিভিশন) করে। ১৯৯৯ সালের ৮ আগস্ট হাইকোর্ট আবেদনটি খারিজ করে রায় দেন। এই রায়ে মহিউদ্দিনের এলএলবি পরীক্ষার ফলাফল দুই মাসের মধ্যে ঘোষণার সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়। পাশাপাশি বলা হয়, দীর্ঘায়িত মামলার জন্য মহিউদ্দিন খরচা পাওয়ার অধিকারী। এ রায়ের পর ২০০১ সালের ২৯ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মহিউদ্দিনকে কৃতকার্য উল্লেখ করে ফলাফল প্রকাশ করে। পাশাপাশি তাঁর এলএলবি উত্তীর্ণের সনদও ইস্যু করা হয়। ২০০৩ সালের ৯ জানুয়ারি মহিউদ্দিনের বরাবর খরচা হিসেবে একটি ট্রেজারি চালান পাঠানোর তথ্য নথিপত্রে দেখা যায়। ২০২০ সালে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে মহিউদ্দিন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর আইনি নোটিশ পাঠান। এতে দৃশ্যমান ফল না পেয়ে ২০২১ সালে ক্ষতিপূরণ দাবি করে তিনি রিটটি করেন, যার ওপর আজ রায় হলো।
রায়ের পর মহিউদ্দিনের আইনজীবী এম শামসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৯৯০ সালের রায়ে দুই মাসের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করতে বলা হয়। এর দেড় বছর পর বিশ্ববিদ্যালয় ফলাফল প্রকাশ করে। পরে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবর আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। দীর্ঘ সময় পেরোলেও বারবার অবহিত করা সত্ত্বেও দৃশ্যমান প্রতিকার আসেনি। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করলে জানা যায়, খরচা হিসেবে টাকা পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিপূরণ ও খরচা এক নয়। মহিউদ্দিন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। সঠিক সময়ে ফলাফল প্রকাশ করা হলে তিনি আইনজীবী বা সরকারি চাকরি করতে পারতেন, যার মাধ্যমে পেশাগত উন্নতিও করতে পারতেন। সঠিক সময়ে ফলাফল প্রকাশ না করায় তাঁর জীবনের ক্ষতি হয়েছে। হাইকোর্ট তাঁকে ১৮ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। দেরি হলে মাসে ৫ শতাংশ হারে মুনাফা (ইন্টারেস্ট) দিতেও বলা হয়েছে।’
অবশ্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের রায়ের পর ২০০১ সালে মহিউদ্দিনের এলএলবির ফলাফল ঘোষণা করা হয় এবং খরচা হিসেবে ২০০৩ সালে তাঁর বরাবরে ২২৪ টাকা পাঠানো হয়। রায়ের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করবে।