
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জানাজা ঘিরে বুধবার সকাল থেকেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা লাখ লাখ নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের ঢল নামে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও আশপাশের এলাকায়। বিএনপির কর্মী-সমর্থক ছাড়াও বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল এ জানাজায়।
দুপুরের আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও আশপাশের এলাকা। ফলে খালেদা জিয়ার জন্য জানাজায় অংশ নিতে আসা মানুষ দাঁড়িয়ে যান আশপাশের বিভিন্ন সড়ক, মেট্রোস্টেশন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কিংবা ফুটপাতেও। এ ছাড়া সাবেক এই সরকারপ্রধানের জন্য দোয়া ও গায়েবানা জানাজা হয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে। যে যেভাবে পেরেছেন বা সুযোগ পেয়েছেন, সেখানেই জানাজায় অংশ নিয়েছেন। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর জন্য হৃদয় নিংড়ে দোয়া করেছেন দলের নেতা-কর্মী, সমর্থক ও ভক্তরা।
দুপুর থেকেই মানুষের ঢল নামে খালেদা জিয়ার জানাজার জন্য নির্ধারিত স্থানগুলোয়। জানাজায় আসা মানুষের বিস্তৃতি ছাড়িয়ে যায় রাজধানীর মিরপুর রোডের লালমাটিয়া মাঠ, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কে, বিজয় সরণি, শেরেবাংলা নগর, আগারগাঁও, শ্যামলী পর্যন্ত। জানাজায় অংশ নিতে আসা মানুষ সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর ছাড়িয়ে সামনের সড়ক, মগবাজার এবং পান্থপথেও। এ ছাড়া বিজয় সরণি, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, আগারগাঁও, ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজার মেট্রোস্টেশনেও ছিল জানাজায় অংশ নেওয়া মানুষের ঢল। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ফার্মগেটমুখী নামার অংশেও জানাজায় দাঁড়িয়েছিলেন মানুষ।
জানাজাকে ঘিরে রাজধানীর মূল সড়কের বাইরে আশপাশের সড়ক ও অলিগলিতেও ছিল মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি। এসব এলাকার বাসিন্দারাও ছিলেন বাসার সামনে, ফুটপাতেও ছিল বিএনপির নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন ভবনের ছাদ, ওভারব্রিজসহ যে যেখানে সুযোগ পেয়েছেন, সেখানেই দাঁড়িয়ে আদায় করেছেন খালেদা জিয়ার জানাজা, অংশ নিয়েছেন দোয়ায়।
এ ছাড়া মানুষের ঢল ঠেলে সময়মতো জানাজায় আসতে না পেরে দূর থেকেই দোয়ায় অংশ নিয়েছেন অনেকে। যাঁরা আসতে পারেননি, তাঁদের চোখ ছিল বিভিন্ন গণমাধ্যমের সরাসরি সম্প্রচার ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। দূর থেকে তাঁরা হাত তুলে দোয়া করেছেন প্রিয় নেত্রীর জন্য। অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদায় দিয়েছেন আপসহীন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে।
দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে খালেদা জিয়ার গায়েবানা জানাজা এবং তাঁর জন্য দোয়া করা হয়েছে। ফেনী, বগুড়া, দিনাজপুর, রংপুর, রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন বড় শহরে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বগুড়ায় খালেদা জিয়ার গায়েবানা জানাজা হয় ঐতিহাসিক আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে। বেলা তিনটায় অনুষ্ঠিত এ জানাজায় অংশ নেন জেলার সর্বস্তরের মানুষ। এরপর তাঁরা খালেদা জিয়ার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়ায় অংশ নেন।
গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে ফেনীর সোনাগাজীতেও। বেলা সাড়ে তিনটায় উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়নের দক্ষিণ চর সাহাভিকারী এলাকার সোলাইমান ভূঞা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ ও হাকিমপুরে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। খালেদা জিয়ার গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও।
স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জানাজা শেষে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও তাঁর স্বামী এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে দাফন করা হয় বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। রাজধানীর জিয়া উদ্যানে আজ বিকেল পাঁচটার কিছু আগে খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।
বিপুল মানুষের অংশগ্রহণে জানাজার পর সংসদ ভবন থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় পতাকায় মোড়া লাশবাহী গাড়িতে করে খালেদা জিয়ার মরদেহ জিয়া উদ্যানে নেওয়া হয়। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিশেষ একটি বাহনে করে খালেদা জিয়ার মরদেহ সমাধির কাছে নেওয়া হয়।
সমাধির কাছাকাছি নেওয়ার পর খালেদা জিয়ার মরদেহবাহী কফিন কাঁধে নিয়ে যান সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা। দাফনের প্রক্রিয়া চলার সময় তারেক রহমান, স্ত্রী জুবাইদা রহমান, মেয়ে জাইমা রহমান, ছোট ভাই আরাফাত রহমানের স্ত্রী শামিলা রহমান, তাঁর বড় মেয়ে জাহিয়া রহমান, ছোট মেয়ে জাফিরা রহমানসহ পরিবারের সদস্যরা, বিএনপির নেতা-কর্মী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা দাঁড়িয়ে শোক ও শ্রদ্ধা জানান।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা]