
ছয় মাস আগে মো. জামাল ও আয়েশা বেগম দম্পতির কোলজুড়ে আসে যমজ সন্তান আহম্মেদ ও আব্দুল্লাহ। জন্মের চারমাস পর সৌদি আরবে যান বাবা। সেখান থেকে কাজের ফাঁকে ভিডিও কলে সন্তানের মুখ দেখে আনন্দে ভাসেন তিনি। আর দুই শিশুর মুখে ভাঙ্গা ভাঙ্গা শব্দে মা–বাবা ডাক শুনে সুখেই কাটছিল মায়ের দিন। কিন্তু জন্মের পর থেকেই আহমেদের জ্বর হলে আব্দুল্লারও জ্বর হত। সম্প্রতি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় দুই ভাই। শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে তাদের গত ৩১ ডিসেম্বর সাভার থেকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন মা আয়েশা। এরপর দালালের খপ্পড়ে পড়ে বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাদের। এরপর টাকা দিতে না পারায় সেখান থেকে গত বৃহস্পতিবার দুই শিশুকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে।
রোববার বিকালে কথা হয় আয়েশা বেগমের সঙ্গে । কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘টাকার ব্যবস্থা করতে না পেরে আমি হাসপাতালের মালিকের পা ধরে কান্না করেছি। টাকা না পেয়ে আমাকে দুই সন্তানসহ জোর করে বের করে দিয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসার পথেই মারা গেছে আমার আহম্মেদ।’
আয়েশা বেগম বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে দুই দিন চিকিৎসা হয় দুই ছেলের। অবস্থার কোনো উন্নতি না দেখে একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে সাভারে ফিরতে চেয়েছিলাম। এজন্য অ্যাম্বুলেন্সও ভাড়া করেছিলাম, কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স চালকের মুখে অল্প খরচে ভালো চিকিৎসার কথা শুনে ছেলেদের শ্যামলীর ‘আমার বাংলাদেশ হাসপাতালে’ ভর্তি করি। সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়।’
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে চারদিন রেখে মোটা অংকের টাকা দাবি করে হাসপাতালটির মালিক। বিল দিতে না পারায় গত বৃহস্পতিবার হাসপাতাল থেকে জোরপূর্বক দুই সন্তাননহ মাকে বের করে দেওয়া হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মারা যায় আহম্মেদ। অপরদিকে আব্দুল্লার চিকিৎসা চলছে ঢামেকের শিশু মেডিসিন ওয়ার্ডে। ইতিমধ্যে তাঁর মুখের অক্সিজেন খুলে দেওয়া হয়ে। ছেলে আমার হাসছে।
আব্দুল্লার হাসি মা আয়েশাকে কিছুটা স্বস্তি দিলেও আরেক শিশু আহম্মেদকে হারানোর যন্ত্রণা ভুলতে পারছেন না তিনি। ঢামেক শিশু বিভাগের চিকিৎসক আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আব্দুল্লাহর শারীরিক অবস্থা এখন অনেকটাই ভালোর দিকে।
এদিকে অসুস্থ দুই শিশুকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া ও শিশু হত্যার মামলায় গত শুক্রবার হাসপাতালটির মালিক মোহাম্মদ গোলাম সরোয়ারকে মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত শনিবার পাঁচদিনের রিমান্ড চেয়ে তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।