ডেলিভারিম্যানের কদর বেড়েছে

করোনাকালে বেড়েছে ডেলিভারিম্যানদের ব্যস্ততা। খাবার থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী গ্রাহকের ঠিকানায় পৌঁছে দিচ্ছেন তাঁরা। সম্প্রতি উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরে। প্রথম আলো
করোনাকালে বেড়েছে ডেলিভারিম্যানদের ব্যস্ততা। খাবার থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী গ্রাহকের ঠিকানায় পৌঁছে দিচ্ছেন তাঁরা। সম্প্রতি উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরে।  প্রথম আলো

রেস্তোরাঁকর্মী মো. সোহেলের কাজ বন্ধ হয়ে যায় মার্চের শেষে। পুরো মাসের বেতনও পাননি। পাঁচজনের সংসারে তিনিই একমাত্র উপার্জনকারী। করোনাভাইরাসের প্রকোপে সবকিছু বন্ধ হয়ে গেলে চিন্তায় পড়েন সোহেল। সোহেলের মতো অনেক রেস্তোরাঁকর্মীর কাজ বন্ধ হয়ে গেলেও খাবার বা পণ্য পৌঁছে দেওয়ার কাজ বন্ধ হয়নি। সোহেল এখন পেশা বদলে সেই কাজই করছেন, তিনি এখন ডেলিভারিম্যান।

গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি শুরু হয়। জরুরি পণ্য সরবরাহসহ বিশেষ কিছু সেবা বাদে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশনা দেয় সরকার। নিরাপদে থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য বা খাবার মানুষ এখন ঘরে বসে পেতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। সব বন্ধ হয়ে গেলে দেশে অনলাইনে পণ্য কেনার চাহিদা বেড়ে যায়। রমজানে শর্তসাপেক্ষে রেস্তোরাঁগুলো খুলে দেওয়া হলে খাবারও মানুষ অনলাইনে অর্ডার দেওয়া শুরু করে। এতে ডেলিভারিম্যানদেরও ছুটতে হচ্ছে মানুষের প্রয়োজন মেটাতে। নিজেদের ও গ্রাহকদের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে সতর্ক থেকে কাজ করছেন।

মো. সোহেল ফুডপ্যান্ডার একজন ডেলিভারিম্যান হিসেবে কাজ করছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার উপায় ছিল না। আগের চাকরিতে যা আয় হতো তাতে চালিয়ে নিতে পারতাম। কিন্তু দেড় মাস বসে থেকে দেখলাম পেটের টান বড় টান। তাই এই পেশায় এলাম। সারা দিনই কাজ করি। নিজের একটা সাইকেল আছে, তা কাজে দিয়েছে। আয় যা হয় তাতে কোনো রকমে চলে যাচ্ছে। অন্তত না খেয়ে থাকতে হচ্ছে না।’

>


মহামারির এই সময় দেশে অনলাইনে পণ্য কেনার চাহিদা বেড়েছে
সেই পণ্য ক্রেতার বাড়িতে পৌঁছে দেন ‘ডেলিভারিম্যানরা’

দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী তাইম ভূঁইয়া দুবছর ধরে ফুডপ্যান্ডার ডেলিভারিম্যান হিসেবে কাজ করছেন। করোনায় তামিমের কাজ থামেনি। তামিম বলেন, ‘সবাই যখন ঘরে ছিল, তখনো আমরা কাজ করেছি। প্রথম দিকে রাস্তায় বের হলে সব ফাঁকা থাকত, কেমন একটা পরিবেশ ছিল। ওই সময় বের হলে একটু ভয় ভয় কাজ করত। আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে যাই। কারণ এটা করেই চলতে হবে। তারপরও যেকোনো সময় আক্রান্ত হতে পারি, সেই ভয় আছেই।’

ফুডপ্যান্ডা ই–মেইলের মাধ্যমে প্রথম আলোকে জানায়, তাদের প্ল্যাটফর্মে ৩০ হাজারের বেশি নিবন্ধিত রাইডার আছে এবং তাদের প্ল্যাটফর্মে যোগ দেওয়ার জন্য আগ্রহী রাইডারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ইমরান নাজির পাঠাওয়ের হয়ে ডেলিভারি সেবা দেন। দেড় বছর ধরে এ পেশায় আছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার মধ্যে শুরুতে যখন সব বন্ধ ছিল তখন অর্ডার অনেক বেশি ছিল। তখন তো মানুষ বের হতে পারেনি। গ্রোসারি পণ্য অনেক বেশি অর্ডার পেতাম। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০টির মতো অর্ডারও আমি পৌঁছে দিতাম।’ ইমরান জানান, সবকিছু চালু হওয়ায় এখন তা কিছুটা কমেছে।

পাঠাওয়ের মার্কেটিং ও পিআরপ্রধান সৈয়দা নাবিলা মাহবুব জানান, বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে মানুষ হয়ে উঠেছে প্রযুক্তিনির্ভর। মানুষ এখন গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছুই সেরে নিচ্ছে অ্যাপ বা অনলাইনের মাধ্যমে। এ পরিবর্তন পাঠাওয়ের ব্যবসাতেও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। তিনি আরও বলেন, পাঠাও শপ (ই-কমার্স শপিং), পাঠাও টং (গ্রোসারিস ডেলিভারি), পাঠাও হেলথ (টেলিমেডিসিন সেবা এবং মেডিসিন ডেলিভারি) নামে বিভিন্ন সেবা চালু করা হয়েছে।

পাঠাও জানায়, ডেলিভারিম্যানদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষাসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। সুরক্ষা বিষয়ে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি পাঠাও অ্যাপে ‘কোভিড-১৯ সেইফটি চেকলিস্ট’ সংযোজন করা হয়েছে। এ ছাড়া রেগুলার চেকআপসহ ডেলিভারিম্যানদের কেউ শারীরিক অসুস্থতা বোধ করলে তাঁকে কাজ থেকে বিরত রেখে মেডিকেল সহায়তা নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হয়।

অনলাইনে খাবার পৌঁছে দেওয়ার আরেকটি প্রতিষ্ঠান হাংরিনাকির ডেপুটি সিইও ইব্রাহিম বিন মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, রেস্টুরেন্টগুলোর ব্যবসা খারাপ হওয়ায় বাইরের খাবার অর্ডারের চাহিদা কম এবং মানুষ ঘরের খাবার খেতেই বেশি নিরাপদ বোধ করছে। তবে অর্ডার সাইজ বেড়েছে। আগে যেখানে ৩০০ বা ৪০০ টাকার বেশি ছিল, এখন সেটা ১ হাজার টাকার অর্ডার হচ্ছে।