নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান চালালেও কয়েকটি মূল সড়ক দখলমুক্ত করতে পারছে না ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। সকালে উচ্ছেদ করলে দুপুরের আগেই আবার ফুটপাত দখল হয়ে যাচ্ছে। স্থায়ীভাবে ফুটপাত হকারমুক্ত করতে হলিডে মার্কেট করার জায়গা খুঁজছে ডিএনসিসি।
ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক এ বছরের শুরুর দিকে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এপ্রিল-মে মাসের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর ফুটপাত হকারমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই ঘোষণা অনুযায়ী কিছু সড়কে উচ্ছেদ অভিযানও চালানো হয়। পরে রমজান মাসে কয়েকটি এলাকায় স্থানীয় কাউন্সিলর, পুলিশ মিলে ফুটপাতের কতটুকু অংশে হকার বসতে পারবেন তা চিহ্নিত করে দিয়েছিল।
এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেসবাহুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মূল সড়কগুলো হকারমুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু একদিকে উচ্ছেদ করলে তাঁরা আরেক দিক থেকে বসে পড়েন। তারপরও নিয়মিত উচ্ছেদ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
গতকাল রোববার দেখা যায়, টেকনিক্যাল থেকে মিরপুর-১ নম্বর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম সড়কটির দুই পাশেই গড়ে উঠেছে অবৈধ দোকানপাট, বাজার। টেকনিক্যাল মোড়ের এশিয়া সিনেমা হলের সামনে থেকেই বাঁশ-কাঠ দিয়ে দোকান তোলা হয়েছে। ওপরে প্লাস্টিকের ত্রিপল টানানো। মিরপুর বাঙলা কলেজ, টোলারবাগ আবাসিক এলাকা, সরকারি এ-টাইপ কলোনি, ওয়াকআপ কলোনি, দক্ষিণ বিশিল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সব মিলিয়ে এমন শতাধিক দোকান আছে।
মহাখালী এলাকার ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত করা হয় বছরের শুরুতেই। তবে রাতারাতি দখল না হলেও আস্তে আস্তে আবারও তা চলে গেছে অবৈধ দখলে। মহাখালী আমতলী মোড় থেকে ওয়্যারলেস মোড় এবং আমতলী থেকে মহাখালী বাস টার্মিনাল পর্যন্ত ফুটপাত হকাররা দখল করে নিয়েছেন।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, শহরে তাদের অধীন মোট রাস্তার পরিমাণ ২ হাজার ১২১ কিলোমিটার এবং ফুটপাতের পরিমাণ ৫৪২ কিলোমিটার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকাকে আধুনিক, বাসযোগ্য ও মানুষের চলাচলের উপযোগী করতে হলে অবশ্যই ফুটপাত দখলমুক্ত করতে হবে।
মিরপুর-১০ নম্বর গোল চক্করের চারদিকেই ফুটপাত হকারদের দখলে। দেখা যায়, গোল চক্কর থেকে মিরপুর-১৪ নম্বর যাওয়ার সড়কের দুই পাশের ফুটপাতে অসংখ্য দোকান। মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ইনস্টিটিউটের সামনের সড়কের এই ফুটপাত কিছুদিন আগেও দখলমুক্ত করা হয়েছিল।
মিরপুর-১০ নম্বর গোল চক্করের হকার আবদুল খালেক বলেন, হকারদের স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক। এক দিন দোকান না বসাতে পারলে উপোস থাকতে হয়। হকাররা কোথায় বসবেন, তা নির্ধারণ করে দিলে সেখানেই বসবে। তখন হকাররা রাস্তায়-ফুটপাতে বসতে যাবেন না।
ফুটপাত দখলের একই চিত্র দেখা যায় শ্যামলী থেকে রিং রোড হয়ে মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ পর্যন্ত সড়কে। এই সড়কের পাশে থাকা দোকানপাটের নানান ধরনের জিনিসপত্র ফুটপাতজুড়ে রাখা হচ্ছে। রড, সিমেন্ট, টায়ার, প্লাস্টিকের দরজা ইত্যাদি রাখায় ফুটপাতে হাঁটার জায়গা নেই। কোথাও গড়ে উঠেছে চায়ের দোকান।
ফুটপাত স্থায়ীভাবে হকারমুক্ত করতে ডিএনসিসির পাঁচটি অঞ্চলে হলিডে মার্কেট করার জায়গা খোঁজা হচ্ছে। এ বিষয়ে ডিএনসিসির সিইও মেসবাহুল ইসলাম বলেন, হলিডে মার্কেট চালু করার সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত। জায়গা নির্ধারণ, অনুমতি নেওয়া, কখন কখন মার্কেট খোলা থাকবে, ক্রেতা পাওয়া যাবে কি না সব বিষয় বিবেচনা করা হচ্ছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।