
কাঠের আসবাবপত্রের অলংকরণে হাতের পরিবর্তে যন্ত্রের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। কারিগরদের মতে, যন্ত্রে সুবিধা বেশি, সময়ও লাগে কম।
রাজধানীর শাহজাহানপুর উড়ালসড়কের নিচের রাস্তার পাশে, কারওয়ান বাজার কাঁচাবাজারের পাশে, ফরাশগঞ্জ, গেন্ডারিয়ার বাগিচা, মিরপুরের মণিপুর—রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের কাঠের দোকানগুলোতে এ ধরনের যন্ত্রের ব্যবহার দেখা যায়।
যন্ত্রে নকশা তৈরির কাজ বেশি হচ্ছে পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জের উল্টিনগঞ্জে। এই এলাকায় প্রায় ১০০ কাঠের দোকান। গতকাল বুধবার দুপুরে দেখা যায়, এসব দোকান থেকে কাঠ কিনে যন্ত্র দিয়ে বিটের ওপর নকশা করে নিচ্ছেন ক্রেতা বা তাঁদের নিয়োজিত মিস্ত্রি। যে যন্ত্র ব্যবহার করা হয়, নামও ভিন্ন ভিন্ন। কেউ বলেন ‘বগা মেশিন’, কারা ভাষায় ‘জিগির মেশিন’। অনেকে খাট বা সোফা তৈরির আগে কাঠের পেছন অংশের প্রয়োজনীয় কাজটি করিয়ে নিচ্ছেন যন্ত্রে। কিছু দোকানে কাঠের জমিন ও বিটের ওপর কারুকাজ করা ‘তৈরি কাঠ’ শোভা পাচ্ছে।
একটি ঘরে পাওয়া গেল মো. নাসির নামের এক ব্যক্তিকে। কাঠের দোকানিদের মতে, হাতের পরিবর্তে যন্ত্রের সাহায্যে আসবাবপত্রে কারুকাজ করার অন্যতম কারিগর মো. নাসির। তিনি আসবাবপত্রে ফুল, প্রকৃতি, পশু-পাখির নকশা তৈরি করেন। আপনজনদের প্রতিকৃতি খোদাই করার কাজ করেন তিনি। তাঁর মেশিনে অপূর্ব রূপে ফুটে ওঠে কাঠের পাল্লার ওপরে মৎস্যকন্যার ছবিও।
মো. নাসির বললেন, পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ায় দীর্ঘ সময় ছিলেন। সেখানে শেখেন মেশিনে নকশা করার কাজ। এখন আর হাতে নকশা করা হয় না। যে কাজ আগে হাতে করলে লাগত ত্রিশ ঘণ্টা, এখন লাগে প্রায় অর্ধেক সময়। তবে যন্ত্রের ব্যবহারে ঝুঁকি বেশি। তিনি জানালেন, যন্ত্র চালাতে ভুল হলে কাঠের বড় ধরনের ক্ষতি হয়। এ ছাড়া যন্ত্রে বৈদ্যুতিক সংযোগ থাকে বলে কাজের সময় অতিরিক্ত সাবধানী হতে হয়।
গেন্ডারিয়ার বাগিচায় বেশ কয়েকটি কাঠের দোকান রয়েছে। একটি মো. আসলামের দোকান। তিনি বলেন, অনেক মিস্ত্রি তাঁর কাছ থেকে কাঠ কেনার পর সরাসরি যন্ত্র ব্যবহারের কারখানায় নিয়ে যান। এলাকায় বসবাস করেন কাঠমিস্ত্রি জগদীশ সরকার। পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসবাবপত্র তৈরির কাজ পান তিনি। বললেন, যন্ত্র ব্যবহারে সময় ও পরিশ্রম কম হয়, সুবিধা বেশি। তারপরও কাঠ জোড়া দেওয়াসহ হাতে যে কাজটুকু করার কথা, তা তিনি করেন। তাঁর অধীনে রয়েছেন জুয়েল, ছোট আকারের যন্ত্রে কাজ করেন। বললেন, আগে হাতেই কাজ করতেন। পরে কাজ শিখে ৩০ হাজার টাকায় একটি নকশা করার ‘রোটার যন্ত্র’ কিনে নেন। বেশ ভালো ফল পাচ্ছেন।
নিজের জন্য বা আত্মীয়-বন্ধুদের আসবাবপত্রের কাঠ কিনতে নিয়মিত বাগিচায় যাতায়াত রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা গৌরাঙ্গ চন্দ্র সাহার। বললেন, কাঠের আসবাবপত্রে হাতের কাজ উঠেই যাচ্ছে। নকশা বলতেই এখন যন্ত্রের নকশা।