Thank you for trying Sticky AMP!!

শিগগিরই সরছে না রাসায়নিক গুদাম

শ্যামপুরের উজালা ম্যাচ কারখানার জায়গায় রাসায়নিক গুদাম নির্মাণের কাজ সবে শুরু হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো

চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের এক বছর পরও পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম সরানো হয়নি। যে দুটি জায়গায় রাসায়নিক গুদাম সরানোর কথা, সবে তার একটিতে অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। অন্যটিতে বাস করছে তিন শতাধিক বস্তিবাসী। ফলে শিগগিরই রাসায়নিক ঝুঁকিমুক্ত হচ্ছে না পুরান ঢাকা।

শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের পরপরই পুরান ঢাকা থেকে দ্রুত রাসায়নিক গুদাম সরাতে উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। তখন অস্থায়ীভাবে শ্যামপুরে উজালা ম্যাচ কারখানা ও গাজীপুরের টঙ্গীর কাঁঠালদিয়া মৌজায় রাসায়নিক গুদাম স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়। প্রকল্প পাস হতে বেশি সময় লেগে যায়। এখন তড়িঘড়ি করে এ দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ চলছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্মাণকাজ শেষ হবে।

২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনে রাসায়নিক গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ৭১ জনের মৃত্যু হয়। কয়েক শ মানুষ আহত হয়।  তখন পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম ও কারখানা স্থানান্তরের বিষয়টি আলোচনায় আসে। পরে গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি এক সভায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাসায়নিক গুদাম অপসারণের ঘোষণা দিয়েছিল শিল্প মন্ত্রণালয়।

অবশ্য চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের আগে ২০১০ সালে নিমতলীতে আগুনে ১২৪ জনের মৃত্যুর পরও পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের ব্যবসা মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে সরিয়ে নিতে রাসায়নিক শিল্পনগর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিল শিল্প মন্ত্রণালয়। কিন্তু এ প্রকল্প চূড়ান্ত করতেই লেগে যায় ৯ বছর। এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। এখন শ্যামপুর ও টঙ্গীতে রাসায়নিকের যে অস্থায়ী গুদাম নির্মাণের কথা, সেগুলো যথা সময়ে শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিমতলীতে অগ্নিকাণ্ডের পর সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটি যে ১৭টি কাজের সুপারিশ করেছিল, সেগুলোর একটিও বাস্তবায়ন করা হয়নি। রাসায়নিক গুদাম অপসারণে গড়িমসি করছে সরকার। এখন রাসায়নিক অগ্নিকাণ্ডে আরেকটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় কে নেবে?

শ্যামপুর উজালা ম্যাচ কারখানা

উজালা ম্যাচ কারখানার মালিক বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প করপোরেশন (বিসিআইসি)। দীর্ঘদিন ধরেই ওই কারখানা বন্ধ। ফলে এখানে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছিল ট্রাকস্ট্যান্ড। পরে চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডের পর এই কারখানার জায়গায় অস্থায়ীভাবে ৫৪টি রাসায়নিক গুদাম নির্মাণে একটি প্রকল্প নেয় শিল্প মন্ত্রণালয়। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯ কোটি ৪১ লাখ ৫১ হাজার টাকা। গত বছরের ৯ নভেম্বর এই রাসায়নিক গুদাম নির্মাণে কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড।

শ্যামপুর বাজারসংলগ্ন ৬ দশমিক ১৭ একর জমি নিয়ে ছিল উজালা ম্যাচ কারখানা। এখন এই কারখানার চারপাশ টিন দিয়ে ঘেরা। প্রধান ফটকে লেখা, ‘অস্থায়ী ভিত্তিতে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য গুদাম নির্মাণ’ প্রকল্প। ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, এ কারখানার ভেতরের সব স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন সেখানে রাসায়নিক গুদাম নির্মাণে কাজ করছেন শ্রমিকেরা। কাজটি তদারকি করছেন নৌবাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাঁরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।

প্রকল্প পরিচালক মো. লিয়াকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের পরপরই পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম অপসারণে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে অনুযায়ী কাজ চলছে। তবে উজালা ম্যাচ কারখানা থেকে ট্রাকস্ট্যান্ড অপসারণ, একনেকে প্রকল্প অনুমোদনসহ কিছু কারণে সময় বেশি লেগেছে। এখন পুরোদমে প্রকল্পের কাজ চলছে।

গাজীপুরের টঙ্গীর কাঁঠালদিয়ার এই জায়গায় অস্থায়ী রাসায়নিক গুদাম নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে বস্তি। ছবি: আল–আমিন

টঙ্গীর কাঁঠালদিয়া

গাজীপুরের টঙ্গীর কাঁঠালদিয়া মৌজায় পৃথক প্রকল্পের মাধ্যমে আরেকটি গুদাম নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি)। অথচ বিএসইসি মালিকানাধীন এই জমিতে তিন শতাধিক পরিবার বাস করছে। এখন তাদের কবে অপসারণ করা হবে বা রাসায়নিক গুদাম নির্মাণের কাজ কবে শুরু হবে, তা স্পষ্ট নয়।

গতকাল বুধবার দুপুরে সরেজমিনে বিএসইসির এ জায়গায় বস্তির পাশাপাশি দোকানপাট, গ্যারেজ, হরেক রকমের ছোট ছোট কারখানা দেখা গেছে। বস্তির বাসিন্দারা জানান, এ জায়গায় রাসায়নিক গুদাম হবে, তাঁরা সেটি জানেন। ইতিমধ্যে কিছু বাসিন্দা চলে গেছেন। বাকিরা ক্ষতিপূরণের আশায় রয়েছেন।

বিএসইসি সূত্র জানায়, টঙ্গীতে ছয় একর জমিতে অস্থায়ী রাসায়নিক গুদাম নির্মাণে পৃথক আরেকটি প্রকল্প পাস হয়েছে। এখানে ৫৩টি রাসায়নিক গুদাম নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। তবে বস্তি অপসারণসহ কিছু কারণে কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে।

এই রাসায়নিক গুদাম নির্মাণে প্রকল্প পরিচালক ও বিএসইসির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ঢাকা স্টিল ওয়ার্ক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডের সঙ্গে তাঁদের চুক্তি সই হয়েছে। চলতি মাসের শেষের দিকে রাসায়নিক গুদাম নির্মাণে কাজ শুরু হবে। চলতি বছরেই নির্মাণকাজ শেষ হবে। এর আগেই নিজের মালামাল নিয়ে বস্তির লোকজন সরে যাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

[প্রতিবেদন তৈরি করতে সহায়তা করেছেন প্রথম আলোগাজীপুর সংবাদদাতা আল-আমিন।]