Thank you for trying Sticky AMP!!

সচিবালয় এলাকায় শব্দদূষণ আগের চেয়ে বেশি

ক্যাপস ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে শব্দ দূষণ নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদনের ফলাফল তুলে ধরা হয়

নয় দিনে সচিবালয় ও এর চারপাশের এলাকায় শব্দের মাত্রা ৬০ ডেসিবেলের নিচে একবারও নামেনি। কখনো কখনো তা উঠেছে ১২৯ ডেসিবেলের বেশি। ২০১৯ সালে এলাকাটিকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হলেও উচ্চ শব্দের পরিমাণ এখানে এতটুকু কমেনি। গবেষকেরা বলছেন, এমন মাত্রার উচ্চ শব্দ শ্রবণক্ষমতা ক্ষতি করতে যথেষ্ট।

উচ্চ শব্দ নিয়ে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ক্যাপস ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে গবেষণাটির ফলাফল তুলে ধরা হয়।

২০০৬ সালের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুযায়ী, নীরব এলাকায় দিনের বেলায় শব্দের মাত্রা থাকবে ৫০ ডেসিবেল এবং রাতের বেলায় ৪০ ডেসিবেল। নীরব এলাকায় নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে হর্ন বাজালে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে।

উচ্চ শব্দের মূল উৎস যানবাহনের হর্ন

২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ শব্দদূষণ বেড়েছে উল্লেখ করে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, সচিবালয় এলাকায় উচ্চ শব্দের মূল উৎস যানবাহনের হর্ন, ইঞ্জিন ও ব্রেক করার শব্দ। গবেষণার সময়ে পল্টন মোড়ে সবচেয়ে বেশি মাত্রার শব্দ পাওয়া গেছে, ১২৯ ডেসিবেল। এ ছাড়া সচিবালয় উত্তর-পশ্চিমে ও সচিবালয় মধ্য-পূর্বে ১২৮ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ পাওয়া গেছে। ১২৭ মাত্রার শব্দ মিলেছে কদম ফোয়ারায়, জিরো পয়েন্টে, সচিবালয় উত্তরে ও শিক্ষা ভবন এলাকায়। সচিবালয় দক্ষিণ-পূর্বে, সচিবালয় ১ ও ৩ নম্বর গেটে ১২৬ ডেসিবেল। আর প্রেসক্লাব এলাকায় ১২৪ ডেসিবেল ও সচিবালয় পশ্চিম (মসজিদ) এলাকায় ১২০ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ পাওয়া গেছে।

গত ১৪ থেকে ২২ ডিসেম্বর—এই নয় দিনে সচিবালয় ও এর চারপাশের এলাকায় শব্দ পর্যবেক্ষণ করে ক্যাপসের ১০ সদস্যের একটি দল। এ সময় ১২টি স্থানে দৈনিক তিন সময়ে সাউন্ড প্রেশার লেভেল (এসপিএল) মিটারে ১ হাজার ৮০০ শব্দের নমুনা নেওয়া হয়। নমুনা বিশ্লেষণে গবেষকেরা পেয়েছেন, এই ১২টি স্থানে কখনোই শব্দের মান সর্বনিম্ন ৬০ ডেসিবেলের নিচে নামেনি।

শব্দদূষণ বিধি অনুযায়ী নীরব এলাকা হিসেবে সচিবালয় এলাকাতে শব্দের মাত্রা থাকার কথা ৫০ ডেসিবেল। কিন্তু সেখানে শব্দের মাত্রা কয়েক গুণ বেশি। ২১ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টায় সচিবালয় এলাকায়

ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শ্রবণ ও মানসিক স্বাস্থ্য

সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন ক্যাপস ও স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার। তিনি বলেন, সচিবালয় এলাকায় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে গবেষণাকালে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের তুলনায় শব্দের সর্বোচ্চ মানের দিক দিয়ে সব কটি স্থানেই শব্দের দূষণ বেড়েছে। উচ্চ শব্দের কারণে ব্যাহত হচ্ছে শ্রবণ ও মানসিক স্বাস্থ্যে।

২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয় একই মাসের ১৭ ডিসেম্বর থেকে জিরো পয়েন্ট, পল্টন মোড়, সচিবালয় লিংক রোড হয়ে জিরো পয়েন্ট এলাকাকে নীরব এলাকা (নো হর্ন জোন) হিসেবে ঘোষণা করে।

ট্রাফিক পুলিশদের সমস্যা

২০০ জন ট্রাফিক পুলিশের ওপর করা ওই গবেষণায় এসেছে, সেখানে দায়িত্বরত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদস্যদের ওপর উচ্চ শব্দের প্রভাব পড়ছে। অন্তত সাড়ে ৯ শতাংশ পুলিশ সদস্য জানিয়েছেন, তাঁদের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ ট্রাফিক পুলিশ সদস্য জানিয়েছেন, অন্যরা জোরে কথা না বললে তাঁরা কথা শুনতে পান না। মোবাইলে কথা বলতে অসুবিধা হয় ১৩ দশমিক ৭ শতাংশের। আর ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁদের টিভি দেখার সময় ভলিউম বাড়িয়ে দিতে হয়। ৭ দশমিক ৯ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা উচ্চ রক্তচাপ, হৃৎকম্পন বৃদ্ধি, বমি, মাথা ঘোরা, মেজাজ খিটখিটে হওয়াসহ নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভোগেন।

টয়েনবি সার্কুলার রোড, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৯

প্রতি ১০ মিনিটে জিরো পয়েন্টে ৩৩২টি হর্ন

গবেষণায় এসেছে, প্রতি ১০ মিনিটে সচিবালয়সংলগ্ন জিরো পয়েন্ট এলাকায় ৩৩২টি হর্ন হয়, এর মধ্যে হাইড্রোলিক হর্ন ছিল ৭০টি। সচিবালয় দক্ষিণ-পূর্বে একই সময়ে হর্ন বাজে ২৯২টি। এর মধ্যে ৫৪টি হাইড্রোলিক হর্ন। সচিবালয় উত্তর-পশ্চিমে এ সংখ্যা ২১৬, এর মধ্যে ২৬টি হাইড্রোলিক। আর পল্টন বাসস্ট্যান্ডে প্রতি ১০ মিনিটে ২৬৪টি হর্ন হয়, যার মধ্যে ৪২টি হাইড্রোলিক।

অনুষ্ঠান সভাপতিত্ব করেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের উপাচার্য মোহাম্মদ আলী নকী। তিনি বলেন, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে সচিবালয় এলাকায় উচ্চ শব্দের পরিস্থিতি বদলায়নি। উচ্চ শব্দ কমাতে মূল বিষয় হলো সচেতনতা, যা নেই। এই সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।

বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাপার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবীর।

২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয় একই মাসের ১৭ ডিসেম্বর থেকে জিরো পয়েন্ট, পল্টন মোড়, সচিবালয় লিংক রোড হয়ে জিরো পয়েন্ট এলাকাকে নীরব এলাকা (নো হর্ন জোন) হিসেবে ঘোষণা করে। হর্নের শব্দদূষণ ঠেকাতে ১৮ ডিসেম্বর চালকদের মাইকিং, প্রচারপত্র দিয়ে সচেতনতা কার্যক্রম চালানো হয়। এরপরের কয়েক দিন চলে অভিযান ও দণ্ড। এরপর উদ্যোগ থেমে যায়।

শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা

২০০৬ সালের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুযায়ী, নীরব এলাকায় দিনের বেলায় শব্দের মাত্রা থাকবে ৫০ ডেসিবেল এবং রাতের বেলায় ৪০ ডেসিবেল। নীরব এলাকায় নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে হর্ন বাজালে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে। দোষী ব্যক্তিদের প্রথম অপরাধের জন্য অন্তত এক মাস কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। পরবর্তী অপরাধের জন্য তাঁরা অন্তত ছয় মাস কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

Also Read: নীরব এলাকায় দিনভর সরব যানবাহনের হর্ন