মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ৯ দফা দাবিতে নিহত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সংবাদ সম্মেলন। আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ৯ দফা দাবিতে নিহত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সংবাদ সম্মেলন। আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ

‘কোচিং বাণিজ্যের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থাসহ ৯ দাবি নিহত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ আইন অমান্য ও নিয়ম ভঙ্গ করে ‘কোচিং বাণিজ্যের’ মাধ্যমে শিশুদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্কুলে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা। এ ঘটনায় মাইলস্টোন স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নিহত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন। লিখিত এসব দাবি পাঠ করেন নিহত শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তারের মামা লিয়ন মীর, মারিয়াম উম্মে আফিয়ার মা উম্মে তামিমা আক্তার ও তানভীর আহমেদের বাবা রুবেল মিয়া।

অভিভাবকদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে মাইলস্টোনসহ সারা দেশে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ, নিহত পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ, রানওয়ে এলাকা থেকে মাইলস্টোন স্থানান্তর, কোচিং বাণিজ্যের হোতাদের অপসারণ ও বিচার, অপপ্রচারকারী শিক্ষকদের শাস্তি ও পরিবারকে হয়রানি বন্ধ, সিসি (ক্লোজড সার্কিট) ক্যামেরার ফুটেজ প্রকাশ, রিট অনুযায়ী সরকারের ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জনবসতিহীন এলাকায় সরানো।

লিখিত বক্তব্য শেষে নিহত শিক্ষার্থীদের কয়েকজন অভিভাবক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন। যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দুই সন্তানকে (তাহিয়া আশরাফ নাজিয়া ও আরিয়ান আশরাফ নাফি) হারিয়েছেন আশরাফুল ইসলাম। তাঁর দুই সন্তানের কেউই কোচিং করত না বলে জানান তিনি।

আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ওর মিস নিশি ম্যাডাম আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে বলেছে মেয়েকে কোচিংয়ে দিতে। স্ত্রী জানিয়েছে, অসুস্থ আছি, এ মুহূর্তে কোচিংয়ে দিতে পারব না। বিমান দুর্ঘটনার দিন আমাদের না জানিয়ে মেয়েকে অতিরিক্ত সময় রেখে দেয়। ছেলে তাঁর বোনকে খুঁজতে দৌড়ে দোতলায় যায়। ভাইকে দেখে বোন বারান্দায় বেরিয়ে আসে। তখনই বিমান দুর্ঘটনা হয়।’

আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘মাইলস্টোনের ভুলের কারণে আমার দুই সন্তান যে চলে গেল এই বয়সে, আমার আর কী আছে বলেন? মানুষের জীবনে যদি স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ না থাকে, তাঁর জীবনটা হয়ে যায় ১০০ বছর বয়সী বৃদ্ধের মতন। এখন আমার অবস্থা তা–ই। কখন মৃত্যু আসবে, সেটার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি।’

নিহত শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তারের মামা লিয়ন মীর বলেন, ‘ফুলের মতো বাচ্চারা স্কুলে গিয়েছিল; আগুনে পুড়ে গিয়ে চেহারাটাও দেখা যায়নি। এখন নাকি টাকার জন্য আমরা কান্না ধরে রাখছি, এমন কুরুচিপূর্ণ কথা বলেছেন মাইলস্টোনের শিক্ষকেরা। আমরা টাকা চাই না, চাই বিচার।’

সপ্তম শ্রেণির নিহত শিক্ষার্থী জারিফ ফারহানের বাবা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কোচিং বাণিজ্যের বিষয়ে আমার চাইতে ভুক্তভোগী হয়তো আর কেউ নেই। আমি কী পরিমাণ যে চাপের মধ্যে ছিলাম। আমাকে প্রতিনিয়ত কোচিং করাতে বলা হতো। কোচিং করলে ভালো ফল হতো, না করালেই ফল খারাপ হতো। আমার ওদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার মতো শক্তি ছিল না।’

সপ্তম শ্রেণির নিহত শিক্ষার্থী মাহতাব রহমান ভূঁইয়ার বাবা মিনহাজুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘আমাদের পরিবারগুলো ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আমার পরিবার, আমি কাজে যেতে পারি না। কোথাও মন বসে না। স্ত্রী সব সময় কান্নাকাটির মধ্যে থাকে। সন্তানের স্মৃতিগুলো বুকে নিয়ে প্রতিনিয়ত চলে। এর মধ্যেও স্কুল কর্তৃপক্ষের আচরণের কারণে আমরা এখানে আসতে বাধ্য হয়েছি।’

সংবাদ সম্মেলনে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত অন্য শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরাও উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তাঁদের হাতে নিহত শিক্ষার্থীদের ছবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।