
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) দায়িত্ব নিয়ে ছয় মাস কাজ করে ঢাকার মূল সড়কের জলাবদ্ধতা অনেকটাই কমাতে পেরেছেন বলে দাবি করেছেন সংস্থাটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। তিনি বলেন, ‘রাইট পারসন, রাইট টাইমে এবং রাইট জায়গায় যদি থাকে, তাহলে এটার রেজাল্ট আপনারা ছয় মাসেই দেখছেন।’ জলাবদ্ধতার স্থান ও কারণ চিহ্নিত করে কাজ করার ফলে এ বছর বর্ষায় বড় আকারে কোনো জলাবদ্ধতা হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
‘ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে ডিএনসিসির উদ্যোগ ও কর্মপরিকল্পনা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএনসিসির প্রশাসক এজাজ এ কথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে ঢাকা উত্তর সিটির নগর ভবনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মাত্র ছয় মাসের মধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ কীভাবে সম্ভব হয়েছে, এর ব্যাখ্যা দিয়ে প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘রাইট পারসন রাইট জায়গায় যদি থাকে, তাহলে ঠিকভাবে কাজ করা যায়। যেহেতু আমি দীর্ঘদিন, দুই দশকের কাছাকাছি সময় ধরে পানি নিয়ে কাজ করেছি, ঢাকা নিয়ে কাজ করেছি, আমি এক্সাক্টলি জানি, কোন পয়েন্টে কোন কাজটা করতে হবে।’ এভাবেই তিনি কাজ করেছেন এবং এ কাজে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ ও অন্য দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁকে সহযোগিতা করেছেন বলেও জানান তিনি।
মোহাম্মদপুরে রামচন্দ্রপুর খালের জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণের বিষয়ে মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ৫ আগস্টের পর সেখানে একটি ভবন হয়েছে। বিষয়টি তাঁদের নজরে এসেছে। জেলা প্রশাসন, রাজউক (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) ও সিটি করপোরেশন মিলে এ বিষয়ে একটি যৌথ জরিপ দল গঠন করা হয়েছে। জরিপের পর খালের এক ইঞ্চি জায়গাও ছাড় দেওয়া হবে না, উচ্ছেদ করা হবে বলেও জানান তিনি।
গত ছয় মাসে ঢাকা উত্তর সিটির আওতাধীন এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন খাল ও নালা পরিষ্কারে কী কী কাজ করা হয়েছে, সেসবের বিস্তারিত তুলে ধরে প্রশাসক এজাজ বলেন, গত ৬ মাসে ৯৬ কিলোমিটার খাল খনন ও ২২০ কিলোমিটার নালা পরিষ্কার করায় নগরের প্রধান সড়কগুলোতে জলাবদ্ধতা অনেকটা কমেছে। ৫৪ বছরের রেকর্ড বৃষ্টির পরও বড় ধরনের জলাবদ্ধতা হয়নি।
এসব কার্যক্রমকে প্রাথমিক সমাধান উল্লেখ করে প্রশাসক বলেন, ভবিষ্যতে স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রকৌশল, ড্রেনেজ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ মিলে কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ধানমন্ডি, নাখালপাড়া, কাজীপাড়া-শেওরাপাড়া, মিরপুর, কালশী, বিমানবন্দর এলাকাসহ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে খাল খনন, নালা নির্মাণ ও পানিনিষ্কাশনের নতুন পথ তৈরি করা হচ্ছে।
ডিএনসিসি জানিয়েছে, চলমান পাঁচটি বড় অবকাঠামো প্রকল্পের কারণে বিমানবন্দর এলাকায় জলাধার নষ্ট হওয়ায় সেখানকার জলাবদ্ধতা নিরসন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এসব প্রকল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিশেষ করে জলাধার পুনরুদ্ধার না হলে স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। আপাতত ওই এলাকায় জলাবদ্ধতার অস্থায়ী সমাধানের কাজ করা হয়েছে। না হলে সেখানে এই বর্ষায় ভয়াবহ বিপর্যয় হতো, কোমরসমান জলাবদ্ধতা হতো বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এ বি এম সামসুল আলম জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের প্রবণতা হচ্ছে, খালে যেকোনো কিছু ফেলে দেওয়া। এই প্রবণতা থেকে সরে আসতে হবে। খাল রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। খালে সবকিছু ফেলে দেওয়ার প্রবণতা না থামলে খাল আবার আগের মতোই ময়লা–আবর্জনায় ভরে যাবে।’
ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিন বলেন, জলাবদ্ধতা হয় কারণ, নালায় পলিথিন, প্লাস্টিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন জিনিসপত্র ফেলে দেওয়া হয়। এর ফলে পানিনিষ্কাশনের নালা বন্ধ হয়ে যায়। সেখান থেকে পানি নামতে পারে না। খালে বা জলাশয়ে যেতে পারে না। তাই নালায় যেকোনো কিছু ফেলা বন্ধ করতে হবে। না হলে নালা পরিষ্কার করলেও দুই-তিন মাস পরই আগের মতো অবস্থায় ফিরে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা উত্তর সিটির সচিবের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা প্রধান সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন-উল-হাসানসহ ঢাকা উত্তর সিটির বিভিন্ন অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।