সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ অনুমোদন দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। রোববার বাংলাদেশ সচিবালয়ে
সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ অনুমোদন দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। রোববার বাংলাদেশ সচিবালয়ে

দাবিদাওয়ার আন্দোলন

সচিবালয়ে বিক্ষোভ, দিনভর অচল ছিল এনবিআর, নগর ভবনে তালা

  • দিনভর কর্মসূচি শেষে সরকারের আশ্বাসে রাতে কর্মসূচি স্থগিত এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

  • দাবি আদায়ে আজ থেকে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকেরা।

  • কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির।

  • জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের অবস্থান কর্মসূচি।

দাবি আদায়ে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে বড় ধরনের বিক্ষোভ মিছিল–সমাবেশ করেছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। বিপুলসংখ্যক কর্মচারী মিছিলে যোগ দেন। আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে দিনভর কর্মবিরতি পালন করেছেন সংস্থাটির কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। তবে সরকারের আশ্বাসের পর তাঁরা আজ থেকে ডাকা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির কর্মসূচি স্থগিত করেছেন।

এদিকে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন তাঁর সমর্থক ও করপোরেশনের বড় একটি অংশের কর্মচারীরা। নগর ভবনের সব ফটকে এখন তালা ঝুলছে।

এ ছাড়া কয়েকটি দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন। এতে বিপুলসংখ্যক কর্মী অংশ নেন। এর ফলে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থিত মেট্রো স্টেশনের দক্ষিণ পাশের ফটকগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে পাঁচ দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা। তিন দফা দাবিতে আজ সোমবার থেকে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকেরা। দাবিদাওয়ার এসব আন্দোলনে অস্থির–অচলাবস্থা শুরু হয়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে নাগরিক সেবা।

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকে বিভিন্ন পর্যায় থেকে দাবিদাওয়ার আন্দোলন চলছে। এখনো এ পরিস্থিতি চলছে। এ রকম পরিস্থিতির মধ্যেই গতকাল

সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন দাবি পর্যালোচনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সুপারিশ দেওয়ার জন্য এ-সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠন করেছে সরকার।

সচিবালয়ে বিক্ষোভ

‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অনুমোদনের প্রতিবাদে সচিবালয়ের ভেতরে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ-মিছিল করেছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। তাঁরা এই অধ্যাদেশকে ‘নিবর্তনমূলক ও কালাকানুন’ আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। তা না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।

বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের ব্যানারে এই আন্দোলন হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধন করে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ -এর খসড়া অনুমোদনের পর গতকাল অধ্যাদেশ জারি করা হয়। কর্মচারীদের অভিযোগ, সাড়ে চার দশক আগের বিশেষ বিধানের কিছু ‘নিবর্তনমূলক ধারা’ সংযোজন করে অধ্যাদেশটি করা হয়েছে।

আন্দোলনকারী কর্মচারীরা অধ্যাদেশটিকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাহারের দাবি করছেন। গতকাল সকালে সচিবালয়ে দেখা যায়, শত শত কর্মচারী দপ্তর ছেড়ে মিছিলে যোগ দেন। মিছিল থেকে ‘অবৈধ কালো আইন মানব না’, ‘লেগেছে রে লেগেছে রক্তে আগুন লেগেছে’ ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়। মিছিলটি সচিবালয়ের ভেতরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রদক্ষিণ করে। একপর্যায়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে সমাবেশ করেন কর্মচারীরা।

কোনো রকম আপত্তি থাকলে তাঁরা আলোচনা করতে পারেন কেবিনেট ডিভিশন কিংবা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। আলোচনা করে সমস্যাটা সমাধান করে নেবেন।
মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

এ সময় কয়েকজন কর্মচারী নেতা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর মিছিল নিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের দপ্তরে যান। তখন তিনি দপ্তরে ছিলেন না। এরপর সেখান থেকে বের হয়ে তাঁরা সচিবালয়ে মূল ফটকের কাছে যান। এ সময় কিছুক্ষণের জন্য ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সেখানে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি মো. বাদিউল কবীর অধ্যাদেশটিকে কালাকানুন আখ্যায়িত করে বলেন, এটি প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। গতকাল সন্ধ্যায় অধ্যাদেশ জারির পর তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অধ্যাদেশ প্রত্যাহার বা সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের অবস্থান থেকে নড়ব না। আজ বেলা ১১টায় আবার জমায়েত করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।’

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্তির অধ্যাদেশ জারির প্রতিবাদে এনবিআর ভবনে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গতকাল বেলা দেড়টায় আগারগাঁওয়ে

অধ্যাদেশে যা আছে

অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীদের চারটি বিষয়কে অপরাধের আওতাভুক্ত করা হয়। সেগুলো হলো সরকারি কর্মচারী যদি এমন কোনো কাজে লিপ্ত হন, যা অনানুগত্যের শামিল বা যা অন্য যেকোনো সরকারি কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করে বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে; অন্যান্য কর্মচারীর সঙ্গে সমবেতভাবে বা এককভাবে ছুটি ছাড়া বা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া নিজ কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন বা কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থ হন; অন্য যেকোনো কর্মচারীকে তাঁর কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকতে বা বিরত থাকতে বা তাঁর কর্তব্য পালন না করার জন্য উসকানি দেন বা প্ররোচিত করেন এবং যেকোনো সরকারি কর্মচারীকে তাঁর কর্মে উপস্থিত হতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন, তাহলে তিনি অসদাচরণের দায়ে দণ্ডিত হবেন। অধ্যাদেশে এসব অপরাধের শাস্তি হিসেবে বলা হয়েছে, দোষী কর্মচারীকে নিম্নপদ বা নিম্ন বেতন গ্রেডে নামিয়ে দেওয়া, চাকরি হতে অপসারণ বা চাকরি থেকে বরখাস্ত করার দণ্ড দেওয়া যাবে।

অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। আর অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা হলে কেন দণ্ড আরোপ করা হবে না, সে বিষয়ে আরও সাত কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। তার ভিত্তিতে দণ্ড আরোপ করা যাবে। এভাবে দণ্ড আরোপ করা হলে দোষী কর্মচারী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে সেই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। তবে রাষ্ট্রপতির দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে না। আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করা যাবে।

বর্তমানে দেশে ১৫ লাখের মতো সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারী আছেন। আইন অনুযায়ী সবাই কর্মচারী।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যা বললেন

বাসস জানিয়েছে, ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’–এর খসড়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, যেটা যে সময় দরকার পড়ে, সেই সময় সেটা করা হয়। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যে আইনটা হচ্ছে, এটা ২০১৮ সালে সংশোধন হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকার একটা সংশোধন করে ইলেকশনটা যাতে ম্যানিপুলেট করতে পারে, ওই রকম কিছু কিছু সংশোধন করেছিল। ওই সংশোধনটা শুধু বাদ দেওয়া হয়েছে। আগে আইনটি যে রকম ছিল, ওটাই করা হয়েছে। তারপরও যদি তাঁদের কোনো রকম আপত্তি থাকে, তাঁরা আলোচনা করতে পারেন কেবিনেট ডিভিশন কিংবা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। আলোচনা করে সমস্যাটা সমাধান করে নেবেন।’

অধ্যাদেশ প্রত্যাহার বা সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের অবস্থান থেকে নড়ব না। আজ বেলা ১১টায় আবার জমায়েত করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।
মো. বাদিউল কবীর, সভাপতি, সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ

দিনভর অচল এনবিআর

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগ করে ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এর পর থেকে এর প্রতিবাদ করে আসছেন রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারই ধারাবাহিকতায় এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ জারির প্রতিবাদে গতকাল সারা দিন আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে কর্মবিরতি চলে। বেশির ভাগ শুল্ক-কর কর্মকর্তা-কর্মচারী এনবিআরের নিচতলায় প্রধান ফটকের পাশেই সারা দিন অবস্থান করেন। ফলে এনবিআরের কার্যক্রম কার্যত বন্ধ আছে। সকাল থেকে সরেজমিনে গিয়ে এই চিত্র পাওয়া গেছে। দুদিন ধরে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান নিজের কার্যালয়ে আসেননি।

শুধু এনবিআর নয়; ঢাকা কাস্টম হাউস, চট্টগ্রাম বন্দর, বেনাপোল, ভোমরা স্থলবন্দরসহ দেশের অন্যান্য শুল্ক স্টেশনেও গতকাল সারা দিন কর্মবিরতি চলে। কয়েক দিন ধরে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এই আন্দোলন চলছে।

এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দাবি মূলত চারটি—জারিকৃত অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল; এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ; রাজস্ব সংস্কারবিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ ওয়েবসাইটে প্রকাশ এবং এনবিআরে প্রস্তাবিত খসড়া ও পরামর্শক কমিটির সুপারিশ ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের মতামত নিয়ে রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার নিশ্চিত করা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে তালা ঝুলিয়ে চলছে অবস্থান কর্মসূচি। এতে নাগরিক সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায়

দিনভর কর্মবিরতি শেষে বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে আজ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সারা দেশের সব দপ্তরে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতির কর্মসূচি দিয়েছিল এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ও বিসিএস (কর) ক্যাডারের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে শক্তিশালী করা হবে। এনবিআর, রাজস্ব সংস্কারবিষয়ক পরামর্শক কমিটি ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জারি করা অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সব সংশোধনী আনা হবে।

এরপর রাত আটটায় আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। এর ফলে আজ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির প্রত্যাহার করা হলো।

চট্টগ্রাম বন্দর পরিস্থিতি

চট্টগ্রাম থেকে প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিবেদক জানান, কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতির প্রভাবে চট্টগ্রাম বন্দর চত্বরে কনটেইনারের সংখ্যা বাড়ছে। আন্দোলন কর্মসূচির কারণে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে রাজস্ব বোর্ডের আওতাধীন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া পণ্যের ৯৫ শতাংশ এই কাস্টম হাউসে শুল্কায়নের মাধ্যমে খালাস হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, গতকাল বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কাস্টমসে আমদানি পণ্য শুল্কায়ন, পরীক্ষণ ও খালাসের কোনো কাজ হয়নি।

বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার বন্দর জেটিতে ১০টি কনটেইনার জাহাজ থেকে কনটেইনার খালাস হচ্ছে। বহির্নোঙরে রয়েছে ১৩টি কনটেইনারবাহী জাহাজ। এর বাইরে আরও দুটি জাহাজ বন্দর জলসীমায় পৌঁছাবে। কাস্টমসে আমদানি পণ্যের শুল্কায়ন বন্ধ থাকায় কনটেইনার খালাসের কার্যক্রমেও স্থবিরতা নেমে এসেছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের মুখপাত্র মো. নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আমদানিকারকেরা কনটেইনার খালাস নিতে না পারায় শনিবারের তুলনায় রোববার বন্দরে কনটেইনারের সংখ্যা বেড়েছে। তবে বন্দরের যেসব কার্যক্রম রয়েছে, তা সচল রয়েছে।

নগর ভবনে অচলাবস্থা

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনের সামনে গতকালও অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত ছিল। বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে বেলা ১১টা থেকে সেখানে অবস্থান নেন তাঁর সমর্থক ও করপোরেশনের বড় একটি অংশের কর্মচারীরা।

১৪ মে শুরু হওয়া এই আন্দোলন মাঝে ৪৮ ঘণ্টার বিরতি দিয়ে এখনো চলছে। এতে নাগরিক সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। গতকাল দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, নগর ভবনের ফটকগুলোতে এখনো তালা ঝুলছে। ‘ঢাকাবাসী’র ব্যানারে ইশরাকের সমর্থকেরা কিছুক্ষণ পরপর নগর ভবন প্রাঙ্গণে মিছিল করছেন।

কর্মবিরতিতে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকেরা

চাকরির শুরুতে ১১তম বেতন গ্রেড নির্ধারণসহ তিন দফা দাবিতে আজ সোমবার থেকে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা। প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ জানিয়েছে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের এই কর্মসূচি চলবে।

তিন দফা দাবি আদায়ে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের অর্ধদিবস কর্মবিরতি গতকাল শেষ হয়েছে। দাবি পূরণ না হওয়ায় পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, পূর্ণ দিবস কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন সহকারী শিক্ষকেরা।

আন্দোলনকারী সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি হলো প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে করা পরামর্শক কমিটির সুপারিশের যৌক্তিক সংস্কার করে সহকারী শিক্ষক পদকে শুরুর পদ ধরে ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন এবং প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতিসহ দ্রুত পদোন্নতি।

দাবিদাওয়া পর্যালোচনায় কমিটি পুনর্গঠন

সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন দাবি পর্যালোচনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সুপারিশ দেওয়ার জন্য এ-সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠন করেছে সরকার। গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পুনর্গঠন করা কমিটিতে সভাপতি হিসেবে থাকবেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব। এই কমিটি সরকারি কর্মচারীদের যৌক্তিক দাবিদাওয়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মতামত ও সুপারিশ দেবে। কমিটি প্রতি মাসে একবার সভা করবে এবং প্রয়োজনে কর্মচারীদের উপযুক্ত সংখ্যক প্রতিনিধির সঙ্গে মতবিনিময় করতে পারবে।