
সড়কটি জিলাপি, ফুচকা, তেহারি থেকে শুরু করে নানা খাবারের দোকানে ভরা। সঙ্গে আছে বুটিক শপসহ নামকরা বিদেশি ব্র্যান্ডের শোরুম।
ফুটপাতঘেঁষা সুন্দর, পরিপাটি দোকান। সাইনবোর্ডে নাম লেখা ‘প্যাঁচঘর’। এখানে বেশ জনপ্রিয় একটি প্যাঁচানো জিনিস বিক্রি হয়। সেটি হলো জিলাপি। বনানীর ১১ নম্বর সড়কের পশ্চিম পাশের প্রবেশমুখের পাশেই এই প্যাঁচঘর।
জিলাপির প্যাঁচ আর সঙ্গে কলিজার শিঙাড়া দিয়ে মধ্যাহ্নভোজ সারতে এসেছিলেন মারুফ হোসেন ও মেহেদি হাসান। সম্প্রতি এক দুপুরে কথা হয় তাঁদের সঙ্গে। তাঁরা এখানে এসেছিলেন মূলত সৌদি আরবে কাজে যাওয়ার জন্য এক জনশক্তি রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠানে সাক্ষাৎকার দিতে। বাড়ি চাঁদপুরে। জিলাপির দোকানটি যে ভবনের নিচের তলায়, সেটির নাম নন্দন ম্যানশন। এখানে বিভিন্ন তলায় বেশ কয়েকটি জনশক্তি রপ্তানিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আরও অনেক রকমের বাণিজ্যিক অফিস আছে। তাদের কর্মচারী আর কাজে আসা লোকজন এখানে খাবারের দোকানে খেতে আসেন। জিলাপি-শিঙাড়া ছাড়াও আছে ‘তেহারি ঘর’। সেখানেও দুপুরে খাসির তেহারি, মোরগ-পোলাও, কাচ্চির স্বাদ নিতে দেখা গেল অনেকেই। তবে বিক্রেতাদের তেমন সন্তুষ্ট মনে হলো না। প্যাঁচঘরের ব্যবস্থাপক সোহাগ হোসেন ও তেহারি ঘরের আকিল ইসলাম বললেন, খদ্দের ইদানীং বেশ কম। আগে পশ্চিম দিকের বিমানবন্দর সড়ক থেকে সরাসরি ১১ নম্বর সড়কে প্রবেশ করা যেত। সেটি বন্ধ করে দেওয়ায় লোকসমাগম কমে গেছে।
জিলাপির প্যাঁচ আর সঙ্গে কলিজার শিঙাড়া দিয়ে মধ্যাহ্নভোজ সারতে এসেছিলেন মারুফ হোসেন ও মেহেদি হাসান। সম্প্রতি এক দুপুরে কথা হয় তাঁদের সঙ্গে। তাঁরা এখানে এসেছিলেন মূলত সৌদি আরবে কাজে যাওয়ার জন্য এক জনশক্তি রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠানে সাক্ষাৎকার দিতে।
বনানীর এই ১১ নম্বর সড়কটি জিলাপি, ফুচকা, তেহারি থেকে শুরু করে জাপানি সুশি, ইতালির পিৎজা, আমেরিকান বার্গার থেকে থাই চায়নিজ অবধি বিস্তর খাবারের দোকানে ভরা। সঙ্গে আছে দেশের জনপ্রিয় বুটিক শপ থেকে পোশাক-আশাকের নামকরা অনেক বিদেশি ব্র্যান্ডের শোরুম। এক সড়কে কেনাকাটা আর খাবারের আয়োজনের জন্য রাজধানীর অভিজাত এলাকাটি অনেকের দৃষ্টি কেড়েছে।
পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা হিসেবে বনানীর পত্তন হয়েছিল ১৯৭০ সালে। এরপর থেকে আবাসনের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, রসনাবিলাসের আয়োজনসহ নানা নাগরিক সুবিধা এখানে যুক্ত হতে থাকে। প্রশস্ত সড়কের পাশ দিয়ে নির্মিত হয়েছে সারি সারি আধুনিক স্থাপত্যরীতির বহুতল ভবন। ২০০০ সাল থেকে বনানীতে অনেক রকমের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে থাকে। এখানে ১১ নম্বর সড়কটি পশ্চিমে বিমানবন্দর সড়ক থেকে শুরু হয়ে পূর্ব দিকে লেকের কাছে সেতু পর্যন্ত প্রসারিত। প্রশস্ত সড়কটির দুই পাশে ২০১০ সাল থেকেই একটি দুটি করে দেশি বুটিকগুলোর বিক্রয়কেন্দ্র খুলতে থাকে। দিন দিন পোশাক-আশাকের দোকান যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে হোটেল-রেস্তোরাঁ।
এখানে দেশি-বিদেশি হরেক রকম খাবারের সম্ভার নিয়ে আছে পিৎজা হাট, কেএফসি, হারফি, সুশি, বিএসফি, কফি ওয়ার্ল্ড, শিঙাড়াওয়ালা, আমেরিকান বার্গার, বার্গার কিং, টেরা ব্রিস্টো, হটকেক, ট্রাইব, বোহো, ফুচকাওয়ালীসহ শ খানেক ছোট-বড় ভোজনালয়।
পোশাক-পরিচ্ছদের দোকানের মধ্যে এখানে আছে আড়ং, অঞ্জনস, দেশাল, প্রাইড, ইয়োলো, আর্টিজান, এক্সট্যাসি, লুবনান, ইনফিনিটি, টেক্সমার্ট, হোমটেক্স, রিচম্যান, মাদার্স কেয়ার, মেনজ ক্লাব, লিভাইস, পুমাসহ দেশ-বিদেশের বহু বিক্রয়কেন্দ্র, শোরুম।
অঞ্জনসের ব্যবস্থাপক রেজাউল হাসান জানালেন, এখানে সুতি ও হাফ সিল্কের শাড়ি তিন থেকে ছয় হাজার টাকার মধ্যে। আর পাঞ্জাবি পাওয়া যাবে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায়।
পূজা উপলক্ষে নতুন ডিজাইনের পাঞ্জাবি এসেছে রিচম্যানে। ব্যবস্থাপক মামুন মিয়া বললেন, এসব পাঞ্জাবির সঙ্গে পায়জামাও রয়েছে। এর দাম শুরু হয় আড়াই হাজার টাকা থেকে। ‘খুবসুরতি’র সালোয়ার-কামিজের খুব কদর আছে ক্রেতাদের কাছে। তবে ইদানীং বেচাকেনা ভালো হচ্ছে না বলে জানালেন ব্যবস্থাপক ইলিয়াস হোসেন। তিনি বললেন, তাঁরা শুধু সালোয়ার-কামিজ, টপস এগুলোই বিক্রি করেন। তাঁদের কিছু নির্দিষ্ট ক্রেতা আছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে অনেক ক্রেতাই আর আসছেন না। ফলে বেচাকেনা কমে গেছে।
বনানীর ১১ নম্বর সড়কের পোশাক-আশাক ও খাবার দোকানের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল এখানে বেচাকেনা আর আগের মতো নেই। কারণ হিসেবে তাঁরা বললেন, পশ্চিম দিকের বিমানবন্দর সড়ক দিয়ে আগের মতো সরাসরি প্রবেশে অসুবিধা। আশপাশের সড়কগুলোয় অনেক পোশাক, প্রসাধনী, হোটেল-রেস্তোরাঁ গড়ে ওঠায় ক্রেতাও ভাগ হয়ে গেছে। তা ছাড়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের নিয়মিত ক্রেতাদের একটি অংশের আর দেখা পাচ্ছে না। এমনিতেও ব্যবসায় একরকম মন্দা চলছে। তবে তারা এ অবস্থা কাটিয়ে আগের মতো সুদিনে ফিরবেন—আছেন সেই আশায়।