
ঢাকা সিটি কলেজের স্থাপনায় যখন হামলা হয়, তখন পাশেই পুলিশের ৫০ থেকে ১০০ জন সদস্য দাঁড়িয়ে তা দেখছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এফ এম মোবারক হোসেন। তিনি হামলাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
মোবারক হোসেন বলেন, ‘আজকে আমি দেখেছি, আমাদের কলেজে যখন হামলা হয়, থানা প্রশাসনের লোক, প্রায় ৫০ বা ১০০ জন পুলিশ পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। আমার মনে হয়, তারা যদি সময়মতো পদক্ষেপ নিত, তাহলে আমার কলেজে এ রকমভাবে ভাঙচুর হতো না।’
আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা সিটি কলেজের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মোবারক হোসেন এ কথা বলেন।
সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, অত্র এলাকার জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব থানা-পুলিশকে নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা শিক্ষকদের দায়িত্ব না। এটা প্রশাসনের দায়িত্ব।
তবে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে দুই পক্ষকে দুই দিকে ঠেলে দেয়। প্রথমে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের তাঁদের ক্যাম্পাসে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এরপর সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় বের হয়ে আসে। পরে তাঁদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়। এসব শিক্ষার্থীর (সিটি কলেজ) মধ্যে উচ্ছৃঙ্খল কেউ কেউ যেকোনো কারণেই হোক পুলিশের ওপর ক্ষিপ্ত। তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। তারপরও তাঁদের বুঝিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে যেতে বলা হয়। তাঁদের কেউ কথা শুনে আবার কেউ কথা শোনেন না। তাঁরা পুলিশের ওপরে ব্যাপক আকারে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। তারপর শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করতে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়েছে।
আজকের হামলা, ভাঙচুর এবং সংঘর্ষের ঘটনা সম্পর্কে মোবারক হোসেন বলেন, গতকাল (সোমবার) একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনায় ঢাকা কলেজের একজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। কে বা কারা তাঁকে আক্রমণ করেছে। এ নিয়ে ঢাকা কলেজ শিক্ষকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরা বলেছিলেন, তাদের (ঢাকা কলেজ) শিক্ষার্থীরা কোনো গন্ডগোল করবে না, অন্যায় করবে না। সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরাও যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনায় না জড়ায়, সেদিকে শিক্ষকেরা মনোযোগ দেন। হঠাৎ বেলা ১১টার দিকে দেখা গেল, কিছু দুষ্কৃতকারী হামলা চালিয়ে ঢাকা সিটি কলেজের স্থাপনা ভাঙচুর করল, স্থাপনা খুলে নিল। রমজানের আগেও এভাবে ঢাকা সিটি কলেজের স্থাপনার ওপর হামলা করা হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এটা একেবারে অনিয়ন্ত্রিত ব্যাপার
ঢাকা কলেজ ও ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকানো যাচ্ছে না কেন জানতে চাইলে সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোবারক হোসেন বলেন, ‘এখানে ঢাকা সিটি কলেজে ১২ হাজার শিক্ষার্থী। ঢাকা কলেজে ৭-৮ হাজার শিক্ষার্থী। আইডিয়াল কলেজে ৫-৭ হাজার শিক্ষার্থী। এখানে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর আনাগোনার জায়গা। তারা রাস্তাঘাটে, এখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে, গল্পগুজব করে। তা ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ফেসবুক গ্রুপ আছে, সেখানে তারা একে অপরকে কটাক্ষ করে আচরণ করে। ওই বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক-দুইটা মারামারি হয়। শেষ পর্যন্ত এটা বড় আকার ধারণ করে। এটা একেবারে অনিয়ন্ত্রিত ব্যাপার।
ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের সঙ্গে মিলে চেষ্টা করা হচ্ছে উল্লেখ করে মোবারক হোসেন বলেন, ‘সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা আন্তরিক, আমরাও আন্তরিক। এখন আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামরা করছি। কিছুদিন আগে প্রশাসন এসব ঘটনায় দু-একজনের ব্যাপারে মামলাও করেছে। সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার পরও বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।’