গ্রন্থ প্রকাশনা ও প্রদর্শনী

রূপম চৌধুরীর ক্যামেরায় শিল্পীর নান্দনিক প্রতিকৃতি

আলোকচিত্রের বই ‘পোর্ট্রেট অব আর্টিস্ট’–এর মোড়ক উন্মোচন করেন বাঁ থেকে বীরেন সোম, স্বপন চৌধুরী, রুপম চৌধুরী, রফিকুন নবী, মনিরুল ইসলাম, ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, সৈয়দ আজিজুল হক, মইনুল আবেদিন ও মুস্তাফা খালিদ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে
ছবি: খালেদ সরকার

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের নেতৃত্বে কামরুল হাসান, রশীদ চৌধুরী, সফিউদ্দিন আহমেদরা বাংলাদেশে আধুনিক চিত্রকলা চর্চার যে সূচনা করেছিলেন, পরের প্রজন্মের শিল্পীরা তাতে নতুন ভাবনা, সৃজনশীলতা, নান্দনিক চেতনার সঞ্চার করে অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছেন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে দক্ষিণ এশিয়া, তথা বিশ্ব পরিমণ্ডলেও বাংলাদেশের চিত্রকলার পরিচিতি ছড়িয়ে পড়েছে। তবে যথাযথভাবে এ দেশের চিত্রকলাকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরতে পারলে আরও সমাদৃত হতো।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে শিল্পী ও শিল্পসমালোচকদের প্রতিকৃতি নিয়ে প্রকাশিত একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আলোচকেরা এসব কথা বলেছেন। সেখানে আলোকচিত্রী রূপম চৌধুরীর তোলা আলোকচিত্র নিয়ে প্রকাশিত বই ‘পোর্ট্রেট অব আর্টিস্ট’–এর মোড়ক উন্মোচন এবং তিন দিনের প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়।

রূপম চৌধুরী একজন পেশাদার আলোকচিত্রী। তবে তিনি শিল্পকলার প্রতি একান্ত অনুরাগ থেকে দেশের চারুশিল্পী ও শিল্প সমালোচকদের ছবি তুলেছেন। দীর্ঘকাল ধরে তাঁর পরিবারে শিল্পসংগীতের চর্চা চলে আসছে। তাঁদের ছয় ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই আশিস চৌধুরী ও স্বপন চৌধুরী স্বনামখ্যাত চিত্রশিল্পী। ছোট ভাই তপন চৌধুরী জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী। রূপম চৌধুরী জানালেন, তিনি বিভিন্ন সময় শিল্পীদের প্রতিকৃতি ক্যামেরাবন্দী করেছেন। তবে কাজটি নিয়মিতভাবে শুরু করেন ২০১৪ সাল থেকে। এ থেকে বাছাই করে ২৪২ জন শিল্পী ও শিল্পসমালোচকের প্রতিকৃতি নিয়ে বইটি প্রকাশ করেছেন। বইয়ের প্রতিকৃতিগুলো নিয়ে তিন দিনের প্রদর্শনী শুরু হয়েছে বেঙ্গল শিল্পালয়ে।

বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিক্ষার্থী সুব্রত বিশ্বাস ও সোহিনী মজুমদারের সেতার ও আপন বিশ্বাসের তবলাবাদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবী বলেন, এখন সবার হাতেই ক্যামেরাযুক্ত ফোন। ছবি তোলা সহজ। কিন্তু প্রতিকৃতি তোলা বেশ কঠিন। আলোকচিত্রীর সৌন্দর্যবোধ ও ক্যামেরার লেন্স মিলে গেলেই ছবিটি নান্দনিক হয়ে ওঠে। প্রতিকৃতির ভেতর দিয়ে সেই ব্যক্তির চরিত্র ফুটে ওঠে। রূপম চৌধুরীর মধ্যে সেই গুণটি রয়েছে। ফলে তাঁর তোলা প্রতিকৃতিগুলো শিল্পোত্তীর্ণ হয়ে উঠেছে। তিনি সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের চেনামুখগুলোকে একসঙ্গে ধরার চেষ্টা করেছেন। একটা পরিবারের মতো হয়েছে।  

বিশিষ্ট শিল্পী মনিরুল ইসলাম বলেন, আলোকচিত্র এখন শিল্পকর্ম হিসেবে স্বীকৃত। বিদেশে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর জন্য আলাদা গ্যালারিই রয়েছে। এখানে এখনো তেমন হয়নি। তবে দেশের আলোকচিত্রীরা অনেকে ভালো কাজ করছেন। রূপম চৌধুরীর এই প্রতিকৃতিগুলোর নেপথ্যের পটভূমি, অভিব্যক্তি, কম্পোজিশন মিলিয়ে এই কাজগুলো শিল্পসম্মত হয়ে উঠেছে।

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, রূপম চৌধুরীর বৈশিষ্ট্য হলো তিনি যাঁদের ছবি তোলেন, তাঁদের সাজিয়ে–গুছিয়ে ছবি তোলেন না। তিনি ছবি তোলেন আকস্মিকভাবে, অজান্তে। ফলে তাঁর ছবি হয় স্বাভাবিক, জীবন্ত। তাতে ওই মানুষটির ব্যক্তিত্ব প্রকাশিত হয়। ছবির মুখটির দিকে তাকালে ব্যক্তিমানুষটাকে অনেকটাই বোঝা যায়, চেনা যায়।

এসব ছবি দেখতে দেখতে দেশের সেরা ও নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের কাজ, তাঁদের অবদানের অনেক কিছু স্মৃতিতে ভেসে আসে বলে উল্লেখ করেন মতিউর রহমান। তিনি বলেন, এ দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলন থেকে সব প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শিল্পীরা সব সময় ইতিবাচকভাবে সাড়া দিয়েছেন। অবদান রেখেছেন। শিল্পী, সমালোচক, লেখক, পত্রপত্রিকা মিলিয়ে যে এক পরিমণ্ডল সৃষ্টি হয়েছে, তা ভবিষ্যতে আরও বড় ও সমৃদ্ধ হবে—তিনি এ আশা প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী।