আওয়ামী লীগের শাসনের অবসান ও শেখ হাসিনার পলায়নের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাদা দলের সমাবেশ। ঢাকা, ০৫ আগস্ট
আওয়ামী লীগের শাসনের অবসান ও শেখ হাসিনার পলায়নের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাদা দলের সমাবেশ। ঢাকা, ০৫ আগস্ট

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের বর্ষপূর্তিতে ‘সাদা দলের’ বিজয় র‌্যালি

আওয়ামী লীগের শাসনের অবসান ও শেখ হাসিনার পলায়নের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সমাবেশ ও বিজয় র‌্যালি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘সাদা দল’। সমাবেশে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গণতন্ত্রের পথে থাকার অঙ্গীকার করা হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এ সমাবেশ হয়। এ সময় জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, ‘গত বছর এই দিনে ফ্যাসিস্ট সরকারের পেটোয়া বাহিনী ও পুলিশের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কারফিউ ভেঙে দাঁড়িয়েছিলাম। সেদিন ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছিলাম। আজকের বর্ষপূর্তিতে আবারও সেই আত্মত্যাগকে স্মরণ করছি।’

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর ৫ আগস্ট দীর্ঘ ১৭ বছরের দুঃশাসনের পর শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকার জনগণের আন্দোলনের মুখে পালাতে বাধ্য হয়েছিল। সেদিন কারফিউ উপেক্ষা করে ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে নতুন ইতিহাস রচনা করেছে। এর পেছনে রয়েছে জুলাই আন্দোলন ও গত ১৬ বছরের শহীদদের রক্ত, নিপীড়ন ও গুম-খুনের ইতিহাস।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়। এই দিনটিকে আমরা শুধু বিজয় নয়, গণতন্ত্র ও জনগণের শক্তির প্রতীক হিসেবেও স্মরণ করি।’ জাতীয়তাবাদী আদর্শে উদ্বুদ্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ আন্দোলনে যুক্ত সব সহযোদ্ধাকে অভিনন্দন জানান তিনি।

সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. আবুল কালাম সরকার বলেন, ‘আগামী দিনে দেশে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে—এই প্রত্যাশা নিয়ে এখানে একত্র হয়েছি আমরা। সেই সরকারের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সমগ্র দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হবে। ফ্যাসিবাদ নির্মূলে দেশের সব শ্রেণি–পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখবে, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা রাস্তায় নেমেছিলাম একটি বৈষম্যহীন ও ইনক্লুসিভ বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে। আমরা আশা করছি, এখন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ পাব। আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের মালিকানা চলে গিয়েছিল অল্প কয়েকজন মানুষের হাতে। ফলে মুক্তিযুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়নি। আমরা চাই, ২০২৪ সালের আন্দোলনেও যেন একই ঘটনা পুনরাবৃত্তি না হয়।’

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, ১৬-১৭ বছর ধরে দেশকে জিম্মি করে রেখেছিল স্বৈরাচার হাসিনা সরকার। এই সময়ের মধ্যে অসংখ্য জীবন ধ্বংস করেছে। বিশেষ করে গত বছরের জুলাই-আগস্টে শত শত মানুষকে হত্যা করেছে। হেলিকপ্টার থেকে শিশুদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে। এই দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে মানুষ জীবন বাজি রেখে রাস্তায় নেমেছিল, শুধু বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা গড়ার জন্য।

সমাবেশ শেষে কলাভবনের সামনে থেকে একটি র‌্যালি বের হয়। টিএসসির রাজু ভাস্কর্য ঘুরে ভিসি চত্বরে গিয়ে শেষ হয় র‍্যালিটি।