মশা মারার সব ওষুধ ও যন্ত্রপাতি রাখা আছে। মশকনিধনকর্মীরা এগুলো ব্যবহার করেননি
মশা মারার সব ওষুধ ও যন্ত্রপাতি রাখা আছে। মশকনিধনকর্মীরা এগুলো ব্যবহার করেননি

ঢাকা দক্ষিণে মশকনিধন কর্মীরা হাজিরা দিয়ে যান চা খেতে, খোঁজ নিলে শুরু হয় কাজ

মশকনিধনে ওষুধ ছিটানোর কথা ছিল সাতজনের; কিন্তু কাজে যান তিনজন। তাঁরাও আবার ওষুধ ছিটানোর কাজ করেন মাত্র আধা ঘণ্টা। সেটিও এই প্রতিবেদক গিয়ে খোঁজ নেওয়ার পর। গত রোববার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫২ নম্বর ওয়ার্ডে মশকনিধনের এই চিত্র দেখা যায়।

মশকনিধন কর্মীদের কাজ দেখতে রোববার দিনভর দক্ষিণ সিটির তিনটি ওয়ার্ডে ঘুরেছেন এই প্রতিবেদক।

সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা পৌনে ১১টা পর্যন্ত ৫২ নম্বর ওয়ার্ডে রজ্জব আলী সরদার রোড, মুরাদপুর হাইস্কুল রোড, মাদ্রাসা রোড, পোকার বাজার এলাকা ঘুরে মশকনিধন কর্মীদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে এই ওয়ার্ডের মশক সুপারভাইজার আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অফিসে তিনজন এসেছিলেন। বাকি তিনজন আগামীকাল (গতকাল সোমবার) কাজে যোগ দেবেন।

সেগুনবাগিচা সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্রের এই আন্ডারগ্রাউন্ডেই মশা মারার সব ওষুধ ও যন্ত্রপাতি রাখা হয়। গত রোববার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কর্মীদের কাউকেই এখান থেকে ওষুধ ও যন্ত্রপাতি নিয়ে বের হতে দেখা যায়নি

এই প্রতিবেদককে মুরাদপুর কবরস্থানসংলগ্ন কাউন্সিলরের কার্যালয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলেন সুপারভাইজার। পরে আধা ঘণ্টা অপেক্ষার পর তিন কর্মী কাউন্সিলরের কার্যালয়ে এসে এই প্রতিবেদককে বলেন, অফিসে হাজিরা দিয়ে তাঁরা একটু চা খেতে গেছেন। একটু পর তাঁরা ওষুধ ছিটানোর কাজে বের হবেন। এরপর আধা ঘণ্টা মশার ওষুধ ছিটিয়ে সকালের কাজ শেষ করেন তাঁরা।

নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মশার লার্ভা ধ্বংস করতে স্প্রে করে ওষুধ ছিটানোর কথা মশকনিধন কর্মীদের। বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত উড়ন্ত মশা মারতে ফগিং করার কথা। দক্ষিণ সিটির ৭৫টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে সকালে সাতজন ও বিকেলে ছয়জন মশকনিধন কর্মী এই কাজ করেন।

এর আগে ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের হাজী খোরশেদ আলী সরদার রোড, ১ নম্বর সড়ক, কুসুমবাগ, সবুজবাগ, নবীনবাগ, ঋষিপাড়া, পুকুরপাড়, কলেজ রোড, কালামিয়া সরদার রোড ঘুরে দেখেন এই প্রতিবেদক। সকাল সোয়া ৮টা থেকে বেলা ১০টা পর্যন্ত এসব এলাকা ঘুরে মশকনিধন কর্মীদের কাউকে পাওয়া যায়নি।

আধা ঘণ্টা অপেক্ষার পর তিন কর্মী কাউন্সিলরের কার্যালয়ে এসে এই প্রতিবেদককে বলেন, অফিসে হাজিরা দিয়ে তাঁরা একটু চা খেতে গেছেন। একটু পর তাঁরা ওষুধ ছিটানোর কাজে বের হবেন। এরপর আধা ঘণ্টা মশার ওষুধ ছিটিয়ে সকালের কাজ শেষ করেন তাঁরা।

পরে ১ নম্বর সড়কে অবস্থিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ওয়ার্ডের স্প্রেম্যান সুপারভাইজর ফিরোজ মাহমুদ বসে আছেন। তাঁর কাছে মশকনিধন কর্মীদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, সাত কর্মীর একজন ছুটিতে, আরেকজন কাজে আসেননি। চারজন ওষুধ ছিটাতে বের হয়েছেন।

পরে আবারও ওই ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দুটি গলিতে ওষুধ ছিটানোর কাজ করছেন একজন। আর দুজন ব্যাংক কলোনি এলাকায় একসঙ্গে হেঁটে আধা ঘণ্টার মতো ওষুধ ছিটানোর কাজ করেছেন বলে জানান ওই এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা। বাকি একজনকে ওয়ার্ডের অন্য কোনো সড়কে পাওয়া যায়নি।

সাধারণত শীতের মৌসুমে মশার উৎপাত তুলনামূলক বেশি থাকলেও শুকনা মৌসুমেও পূর্ব জুরাইন এলাকার অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি বলে জানান এই এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় হাঁটলেও মশা কামড়ায়, এমন মশা জীবনে দেখিনি।’ মশকনিধন কর্মীদের গাফিলতির কারণে মশা নিয়ন্ত্রণে আসছে না বলেও মনে করেন তিনি।

মশকনিধন কর্মীদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, সাত কর্মীর একজন ছুটিতে, আরেকজন কাজে আসেননি। চারজন ওষুধ ছিটাতে বের হয়েছেন।

কাজের কথা বলে বের হলেও মাঠে নেই

দুটি ওয়ার্ডে সকালে মশকনিধন কার্যক্রম দেখার পর বেলা তিনটার দিকে এই প্রতিবেদক ২০ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয়ের সামনে আসেন। সেখানে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত অবস্থান করেও কোনো মশকনিধন কর্মীকে দেখা যায়নি। পরে ওয়ার্ডের মশক সুপারভাইজর সফিউল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

পরে এই ওয়ার্ডের মশকনিধন কার্যক্রম তদারকির দায়িত্ব থাকা সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফারিয়া ফয়েজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ওয়ার্ডের ছয়জন কর্মীর চারজন ছুটিতে। বাকি দুজনের মধ্যে প্রেসক্লাব এলাকায় একজন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলে একজন কর্মী ওষুধ ছিটাতে বের হয়েছেন।
এরপর প্রেসক্লাব এলাকায় গিয়ে কোনো মশকনিধন কর্মীকে পাওয়া যায়নি। পরে কবি সুফিয়া কামাল হলে গিয়েও কাউকে ওষুধ ছিটাতে দেখা যায়নি। কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রধান ফটকে দায়িত্বে থাকা তিন কর্মচারীর কাছে মশার ওষুধ ছিটানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে কখনো তাঁদের হলের ভেতরে ওষুধ ছিটাতে কেউ আসেন না।

দক্ষিণ সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা নিশাত পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের পর প্রথম কর্মদিবস হওয়ায় অনেকে আসেননি। সোমবার (গতকাল) থেকে মশকনিধনের কাজ পুরোদমে শুরু হবে। বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে দাবি করে তিনি বলেন, সব এলাকায় একই পরিমাণ মশার উৎপাত নেই। এর পরও যেসব এলাকায় মশার উৎপাত বেশি, সেখানে তদারকি বাড়াতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।