অফিস ছুটির সময় রাজধানীর সড়কে যেখানে যানজট হচ্ছে নিয়মিত দৃশ্য, সেখানে আজ গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ছিল অনেক কম। কারওয়ানবাজার, ৩ জুলাই
অফিস ছুটির সময় রাজধানীর সড়কে যেখানে যানজট হচ্ছে নিয়মিত দৃশ্য, সেখানে আজ গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ছিল অনেক কম। কারওয়ানবাজার, ৩ জুলাই

রাজধানীতে সমাবেশকে কেন্দ্র করে গণপরিবহন কম, ভোগান্তিতে নগরবাসী

রাজধানীর শাহবাগ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ রোববার পৃথক সমাবেশ ও অনুষ্ঠান চলছে। এসব আয়োজনকে ঘিরে গতকাল শনিবারই সংশ্লিষ্ট এলাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে বিশেষ নির্দেশনা জারি করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি )। এর ফলে আজ রাজধানীর সড়কে গণপরিবহনের সংখ্যা ছিল তুলনামূলক কম। তাই নিত্য ও জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া নগরবাসীকে হিমশিম খেতে হয়। তাঁদের দাবি, রাজনৈতিক দলগুলো যেন এমন বড় সমাবেশ ছুটির দিনে আয়োজন করে।

আজ জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে, ছাত্রদল শাহবাগে সমাবেশ করছে। এ ছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর অনুষ্ঠান চলমান। এদিকে সকালের দিকে ছিল বিসিএস ও এইচএসসির পূর্বনির্ধারিত পরীক্ষা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে মহাখালীতে রওনা হয়েছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবী জান্নাতুল ফেরদৌস। বেলা তিনটার দিকে বিজয় সরণি পৌঁছান। সেখানে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেলা দুইটায় মহাখালীর উদ্দেশে রওনা দিয়েছি। প্রথমত, কোনো গাড়িই পাইনি। তারপরও যা পেলাম, সেটা নিয়মিত চলাচলের পথ না ধরে এদিক-ওদিক করে ঘুরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু শাহবাগ বন্ধ, গাড়ি নীলক্ষেত দিয়ে ধানমন্ডি দিয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ হয়ে বিজয় সরণি দিয়ে এখন মহাখালী যাচ্ছে। যে পথেই যাচ্ছে, ওখানেই জ্যাম। গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে তো আছেই। ২০-২৫ মিনিটের পথ এক ঘণ্টার বেশি হয়ে গেছে, এখনো আমি পথে। কখন গন্তব্যে পৌঁছাতে, পারব জানি না।’

শাহবাগে বড় দুটি হাসপাতাল। অথচ আজ গণপরিবহন না থাকায় সেসব হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়

এদিন রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে গণপরিবহনের সংখ্যা কম দেখা গেছে। শহরের কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, বনানী সড়কে এমন চিত্র দেখা গেছে। এ ছাড়া এদিন সড়কে কম ছিল ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও।

বিজয় সরণি সিগন্যালে কথা হয় এয়ারপোর্ট পরিবহনের চালক মোতালেব মিয়া ও তাঁর সহকারী মো. রাকিবের সঙ্গে। তাঁরা জানান, ফুলবাড়িয়া থেকে তাঁরা পল্টন-প্রেসক্লাব ও শাহবাগ হয়ে নিয়মিত চলাচল করেন। কিন্তু সমাবেশের কারণে আজ তাঁদের মৎস্য ভবন-কাকরাইল-মালিবাগ-মগবাজার হয়ে ঘুরে আসতে হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় অন্যদিনের তুলনায় বেশি সময় থাকতে হয়েছে। তবে সমাবেশ ঘিরে রাস্তায় গাড়ি কম বলেন জানান তাঁরা।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারার সামনে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী রবিউল ইসলামের সঙ্গে। উত্তরার বিএনএস সেন্টারে যাওয়ার জন্য গাড়ির অপেক্ষা করছেন তিনি। দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে আছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অন্যদিন ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যেই গাড়ি পেয়ে যাই। আজ কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। আধা ঘণ্টার ওপর দাঁড়িয়ে আছি। শুনেছি সমাবেশ হচ্ছে, সে জন্য গাড়ি কম। রাজনৈতিক দলগুলো ছুটির দিনে সমাবেশ করলেই তো পারে।’

মালিবাগ থেকে শাহবাগে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসক দেখাতে এসেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রাসেল। কিন্তু সমাবেশের কারণে শাহবাগ ও আশপাশের সড়ক বন্ধ থাকায় বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাঁকে। পরে তিনি শিশুকে কোলে নিয়ে হেঁটে বাসার পথ ধরেন।

মোহাম্মদ রাসেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাসা মালিবাগে। রাস্তা বন্ধ থাকায় বাচ্চাকে নিয়ে দোয়েল চত্বর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা হয়ে ঘুরপথে হাসপাতালে এসেছি। ফেরার পথে এখন মৎস্য ভবন পর্যন্ত হেঁটে যেতে হচ্ছে। এরপর গাড়ি পেলে মালিবাগ যাব।’